৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২২:৫৯ অপরাহ্ন


কারাগারে মুসলিম বন্দিদের শূকরজাত খাবার দেওয়ায় মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
কারাগারে মুসলিম বন্দিদের শূকরজাত খাবার দেওয়ায় মামলা ওরেগন ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন


ওরেগনের তিনজন মুসলিম বন্দি আমির ওয়াদি হাসান, নিয়াজ খশনওয় এবং হামজা জামা পেনডেলটনের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ওরেগন কারেকশন ডিপার্টমেন্টের (ওডিওসি) বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেছেন। ফেডারেল আদালতে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, কারাগার কর্তৃপক্ষ মুসলিম বন্দিদের প্রতিদিনের হালাল খাবার, জামাতের নামাজ এবং ঈদ উপলক্ষে পরিবার সাক্ষাৎ ও ধর্মীয় উৎসব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। মামলায় গুরুতর একটি অভিযোগ হলো, মুসলিম বন্দিদের পরিবেশিত খাবারে কখনো কখনো শূকরজাত উপাদান বা তার সংস্পর্শে আসা খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। ইসলামে শূকর এবং এর যে কোনো ধরনের উপাদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং এটি মুসলমানদের জন্য ধর্মীয়ভাবে হারাম (নিষিদ্ধ)। বাদীরা দাবি করেছেন, কারাগারে হালাল খাবারের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকার কারণে তারা কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন খাবার খেতে বাধ্য হয়েছেন যা ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।

মামলার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত হালাল খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রোটোকল অনুসরণ করেনি। এর ফলে মুসলিম বন্দিদের খাবার শূকরজাতদ্রব্যে দূষিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এটি শুধু তাদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘনই নয়, বরং তাদের আত্মমর্যাদা ও ধর্মীয় চেতনার ওপর আঘাত বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চললেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাদীরা আমির’ওয়াদি হাসান, নিয়াজ খশনওয় এবং হামজা জামা বলেছেন যে, বারবার অনুরোধ করেও তারা কারাগারে হালাল সার্টিফায়েড খাবার পাননি। অথচ ইহুদি, খ্রিস্টান ও নেটিভ আমেরিকান ধর্মাবলম্বী বন্দিদের জন্য ধর্মীয় ছুটি, উৎসবের খাবার এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাদীদের এর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ার এই মামলাটি দায়ের করেছে।

মামলায় আরো বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির আগে ওরেগনের ইস্টার্ন ওরেগন কারেকশনাল ইনস্টিটিউশন মুসলিম বন্দিদের ঈদের জন্য হালাল ভোজ এবং দুই জন পারিবারিক অতিথির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতো। কিন্তু মহামারির পরে যখন অন্য ধর্মের বন্দিরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুনরায় পালন শুরু করেন, তখন মুসলিমদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের সময়, ওরেগনের ইস্টার্ন ওরেগন কারেকশনাল ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ ঈদের অনুষ্ঠান নির্ধারণ করে ১২ এপ্রিল, যদিও ঈদ শেষ হয়ে গিয়েছিল ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায়। ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী চাঁদের দর্শনের ভিত্তিতে ঈদের তারিখ নির্ধারণ হয় এমন দাবি করেও কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। যদিও ২০২৫ সালে ঈদের নামাজ নির্দিষ্ট দিনে জামাতে আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবে তাতেও পারিবারিক সাক্ষাৎ অংশটি বাদ দেওয়া হয়। খাবার সংক্রান্ত অভিযোগে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে অনুরোধ করেও কোনো মুসলিম বন্দিকে হালাল সার্টিফায়েড খাদ্য দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে তাদের নিরামিষ বা কোশের খাদ্য দেওয়া হয়, যা ইসলামি খাদ্যনীতি অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়।

কেয়ারের ডেপুটি লিটিগেশন ডিরেক্টর গাদির আব্বাস বলেন, এই মামলা সমান ধর্মীয় অধিকার ও সুযোগ পাওয়ার প্রশ্নে। মুসলিম বন্দিদের যদি তাদের ধর্ম অনুযায়ী খাওয়ার অধিকার ও ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালনের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তা স্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ। মামলার মাধ্যমে কেয়ার দাবি করেছে, ওরেগনের কারা কর্তৃপক্ষ যেন প্রতিদিন ও ধর্মীয় উৎসবগুলোতে হালাল সার্টিফায়েড খাবার সরবরাহ করে, খাবার প্রস্তুতিতে শূকরজাত দ্রব্যের দূষণ রোধে প্রোটোকল অনুসরণ করে এবং ঈদ উপলক্ষে পারিবারিক সাক্ষাৎসহ অন্যান্য ধর্মীয় সুবিধা মুসলিম বন্দিদেরও প্রদান করে।

ওরেগন কারেকশন ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র অ্যাম্বার ক্যাম্পবেল জানান, চলমান মামলার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। তবে সংস্থাটির লক্ষ্য হলো সমাজকে সুরক্ষা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জীবন পরিবর্তনে সহায়তা করা। এই মামলা মার্কিন কারাগার ব্যবস্থায় ধর্মীয় অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সমতা ও সংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়াসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন