০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৬:২৯ অপরাহ্ন


মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি নিয়ে কিছু প্রশ্ন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি নিয়ে কিছু প্রশ্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ


ঢাকার উত্তরা মডেল টাউন-সংলগ্ন দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ভবনের একটি অংশের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভেঙে পড়ায় বেশ কয়েকজন অসহায় শিশু-কিশোর শিক্ষিকা আহত নিহত হয়েছেন। মারাত্মক এ দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশে প্রবাসে বাংলাদেশিরা এখন গভীর শোকে মুষড়ে আছে। অনেক আহত মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের ওটা ছিল প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম একক ফ্লাইট। অত্যন্ত মেধাবী এবং চৌকস এ বিমান বাহিনী অফিসার কাল সফল ফ্লাইট শেষ করলেই পদোন্নতি পেতেন। তিনি যে বিমান নিয়ে উড়েছেন যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য সেটি টেক অফের কিছু পরেই বিধ্বস্ত হয়েছে। সন্দেহ নেই বিমানটি অনেক পুরোনো মডেলের। তবুও এ ধরনের প্রশিক্ষণ শেষের প্রথম একক ফ্লাইটের আগে বিমানটি যথাযথ কারিগরি পরীক্ষা হবে সেটি স্বাভাবিক। অথচ বিমানটিকে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করতে হলো তা-ও আবার একটি স্কুলের উপর। সংগত কারণেই অনেক প্রশ্ন জাগছে। 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের জনবহুল শহর। এই শহরের বিশাল অংশজুড়ে শহর কেন্দ্রে আছে সেনা, বিমান, নৌবাহিনী, বিজেবি দফতর। আছে প্রধান বিমানবন্দর। দুনিয়ার অধিকাংশ দেশে বিমানবন্দর এবং সেনাবাহিনীর স্থাপনাগুলো শহর থেকে দূরে নিরাপদ অবস্থানে। বাংলাদেশে কেনো ৫৪ বছরের স্বাধীন সময়ে কেন হলো না কে দেবে জবাব? আর পুরোনো মডেলের প্লেন দিয়ে কেন হবে প্রশিক্ষণ? আর প্রশিক্ষণ ফ্লাইট কেন হবে শহরের জনবহুল এলাকায়? এ দুর্ঘটনার জন্য সরকার, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। 

আমরা এখন শুধু নিহত আহতদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। যে মা বাবা ফুটফুটে সন্তানদের হারিয়েছেন তাদের জন্য সমবেদনা জানাতে পারি। কিন্তু এ ত্যাগের বিনিময়ে ঢাকা মহানগরী কি রক্ষা পাবে এ ধরনের ঝুঁকির হাত থেকে মুক্ত হতে? কেন ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে বিজেবি সদর দফতর, সেনা সদর দফতর, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী সদর দফতর ঢাকার বাইরে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা যাবে না? কেন বিমান বাহিনীর অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক বিমান ক্রয় করা হবে না? কেন প্রশিক্ষণ ফ্লাইট গুলো ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় হবে করতেই হবে? 

পুরোনো তেজগাঁও বিমানবন্দর এখন বিমান বাহিনীর দায়িত্বে। কেন এটিকে মুক্ত করে বিমান বাহিনী সদর দফতর ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা যাবে যাবে না? সেনাবাহিনীর কাজ দেশ রক্ষার কাজে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত থাকা। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজেদের কাজে মনোযোগী না হয়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকেছে। কোনো সরকার সেনা স্থাপনা ঢাকার বাইরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ঢাকার কাছে আড়িয়াল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ তথাকথিত এটেন্ডের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থানের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে জনবহুল ঢাকার একটি বিশাল অঞ্চল। 

দুর্ঘটনার অনুসন্ধানে কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি হয়তো দুর্ঘটনার কারণ কিছু একটা খুঁজে পাবে। হয়তো সন্তান বা প্রিয়জন হারানোর বিয়োগ ব্যাথা একসময় উপশম হবে। কিন্তু ওপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর কখনো জানা যাবে না। হয়তো কিছু সময় পরে আবারও এ ধরণের বা আরো ধ্বংসাত্মক দুর্ঘটনা হবে। আরো অনেক নিরাপরাধ মানুষ মৃত্যুবরণ করবে প্রিয় মাতৃভূমিতে।

শেয়ার করুন