০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:২৮:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বাহার ও সূচনার মুক্তি ইঙ্গিতপূর্ণ, ভারতে আরিফুজ্জামান গ্রেফতার!
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
বাহার ও সূচনার মুক্তি ইঙ্গিতপূর্ণ, ভারতে আরিফুজ্জামান গ্রেফতার! সাবেক এমপি বাহার ও তার কন্যা সূচনা


আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভারতে গ্রেপ্তারের পর তাকে জেলহাজতে রাখা আর অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনাকে আটক করেও ছেড়ে দেয়া নিয়ে রাজনীতিতে নানান হিসাব চলছে। বিষয়টি একেক জন একেকভাবে দেখছেন। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষিয়টি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। 

মূল খবরে যা আছে

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভারতে গ্রেপ্তার। বাংলাদেশের একটি পত্রিকা কলকাতা প্রতিনিধি বরাত দিয়ে খরবটি প্রকাশ করেছে। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের এই সহকারী কমিশনার (এএসপি) মো. আরিফুজ্জামান। তিনি রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তার বাড়ি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার শাহীপাড়া এলাকায়। আরিফুজ্জামান ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত এপিবিএন-২-এর সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। গত ১৪ অক্টোবর থেকে তিনি বিনা অনুমতিতে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং সেই থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। আরিফুজ্জামান রংপুর মহানগর পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এএসপি) পদে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরই গা-ঢাকা দেন আরিফুজ্জামান। নিজের কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। 

তবে শোনা যায় জানা যায়, এ সময় সাতক্ষীরা এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আবু সাঈদ। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে যান। এই অবস্থায় ৫০ ফুট দূর থেকে পুলিশ তার ওপর ছররা গুলি ছোড়ে। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। তারপরও অবস্থান থেকে সরেননি আবু সাঈদ। একপর্যায়ে কয়েকটি গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। 

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় গত ২৩ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় আরিফুজ্জামান পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত এলাকার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় হাকিমপুর সীমান্ত চৌকিতে টহলরত বিএসএফ’এর ১৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সদস্যরা তাকে আটক করেন। এরপর শুরু হয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ। পরে রাতেই তাকে স্বরূপনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। খবরে আরও বলা হয় যে, এ সময় মো. আরিফুজ্জামানের কাছ থেকে বেশ কিছু পরিচয় পত্র, সরকারি নথি উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। রোববার কড়া নিরাপত্তায় তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে নেওয়া হলে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের (জেলহাজতে) নির্দেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক। 

বাহার-সূচনা আটক এবং ছাড়া পাওয়া

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে আটকের একরাত পর ভারতের কলকাতা পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। খবরে বলা হয় যে, গত ২২ আগস্ট শনিবার রাতে রাজারহাট থানা পুলিশ তাদের আটক করে। পরে মাহবুবুল আলম হানিফ এবং শেখ হাসিনার সহযোগিতায় তারা ছাড়া পান। খবরে বলা হয় কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি বাহার ও তার বড় মেয়ে সূচনা দেশে থাকতে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ও সাধারণ মানুষ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। একাধিক সূত্র বলছে, তারা কলকাতায় ক্ষিপ্ত মানুষের দ্বারা মবের শিকার হতে পারেন। খবরে আরো বলা হয় যে, এর আগে গত শনিবার পূর্ণিমা রানী শীল লগ্নজিতা নামে এক তরুণী ফেসবুকে বাহারের বিরুদ্ধে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই সেই কুকুর যে কি না আওয়ামী লীগের খেয়ে পরে মোদির সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় কাট মোল্লা নিয়ে মিছিল করে সে কেন ভারতের মাটিতে। আর বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায় জীবন বাঁচাতে যেতে চায় তখন ভিসা দরকার, ছি!’ তিনি আরও লেখেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় হামলার পেছনে বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতা বাহার উদ্দিন বাহার যিনি পূজামন্ডপে কুরআন রেখেছিলেন। তখন সারা বাংলাদেশে পুজোর বারোটা বাজিয়েছিল। তিনি এখন তার মেয়েকে নিয়ে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনে লুকিয়ে আছেন...।’ এরপরই মেয়েসহ বাহারকে আটকের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

ইঙ্গিতপূর্ণ যে কারণে

এদিকে এধরনের দু’টি ঘটনার ব্যাপারে নানান রকম বিশ্লেষণ পাওয়া গেছে। কারো কারো মতে, ভারতের মাটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা দু’টির হিসাব অন্যরকম তা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়া কথা না। কেননা গত শনিবার সন্ধ্যায় এএসপি আরিফুজ্জামানকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। বিএসএফ ও স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকেও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। আর এখানেই মূল রহস্য। তারপরেও কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশ্বস্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতের মাটিতে কি করে গ্রেফতার হলেন? কেনা-ই এতোদিন পর সেখানে যেতে চাইলেন। এনিয়ে চলছে নানান ধরনের চুলচেরা বিশ্লেষণ। অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে খোদ হিন্দু বিদ্বের্ষী কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আটক করেও ছেড়ে দেয়া নিয়ে চলছে নানান হিসাব নিকাশ। কারো কারো মতে, আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বাংলাদেশের একজন আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত দক্ষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য। অন্যদিকে সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার একটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষীও। এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী খুবই স্পর্শকাতর মামলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা সর্ম্পকে জানে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা রাজসাক্ষী হয়েও গেছেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি আশুলিয়া থানার সাবেক এসআই শেখ আবজালুল হকের অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন শর্ত সাপেক্ষে মঞ্জুর করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষ স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে ক্ষমা করা হবে বলে আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেক্ষেত্রে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামানের ভারতে গ্রেপ্তারের ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ। তাছাড়া বলা হয় যে,তাকে আটকের সময়বেশ কিছু পরিচয়পত্র, সরকারি নথি উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। অনেকের কাছে এখন সন্দেহ ঠেকছে সেখানে কারো কাছে আরিফুজ্জামানের এসব নথি তুলে দেওয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিলেন কি-না সে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই কি তাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়। এর পাশাপাশি ভারত প্রতিবেশী দেশের ব্যাপারে যে কিছু নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করে চলে তারও প্রমাণও এটা কি-না তা হয়তো সময় বলে দেবে। কেননা সম্প্রতি কিছু ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয় সওয়াল তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি মন্তব্য করেছিলেন এই বলে যে, ভারতের মাটিতে অন্য দেশের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের কর্মকান্ড ভারত সরকার অনুমোদন করে না। কারো কারো মতে, ভারতের হয়তবা আশঙ্কা হতে পারে বাংলাদেশের ওই পুলিশ কর্মকর্তা একদিকে পেশাদার প্রতিষ্ঠানের একজন দক্ষ প্রশিক্ষিত ব্যক্তি। তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চেষ্টায় ভারতের মাটিতে কিছু হতে পারে যা-কিনা পরবর্তীতে ভারতকে বিপদে ফেলে পারে। এই রকম ধারণা থেকেই তাকে গ্রেঠতার করা হয়েছে বলে কারো কারো ইতিবাচক ধারণা। আবার কারো কারো মতে, আরিফুজ্জামানের গ্রেফতার করে ভারত নিজেদের কাছে আবু সাঈদ হত্যা মামলার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আসামিকে নিরাপদে রাখলো কি-না তা সময় বলে দিবে। 

বাহার ও সূচনা আটক ছাড়া পেলো কেনো?

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে আটকের একরাত পর ভারতের কলকাতা পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়ার পেছনে অন্যরকম হিসাব-নিকাশ বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাহসিন বাহার সূচনা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা সর্বোপরি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। তাদের বড়ো পরিচয় হচ্ছে যে, দিন শেষে তারা একজন রাজনীতিবিদ। অন্যদিকে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার একজন মুক্তিযোদ্ধা। আর বড়ো বড়ো বিষয় হচ্ছে গত শনিবার রাজারহাট থানা পুলিশ তাদের আটকের পরপরই মাহবুবুল আলম হানিফ এবং শেখ হাসিনার সহযোগিতায় নামে। একরাত পর তাদের ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হিসাবে বিবেচেনা নিয়েই রাজারহাট থানা পুলিশ তাদের মুক্তি দেয়।

শেয়ার করুন