২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ছবি/সংগৃহীত


সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ‘মৌলিক ত্রুটি’ রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে। গত ১৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় রয়েছে। তাই সরকার মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে’। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) ‘ব্র্যান্ড নেম ফর পিস’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানের বদনাম করা উচিত নয় যা দেশকে জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, প্লিজ ডু নট ট্রাই মেলাইন দিস ইনস্টিটিউশন দ্যাট উই রিলাই আপঅন হেভিলি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রামগঞ্জে যাবেন, র‌্যাব ইজ আ ব্র্যান্ড নেম ফর পিস। র‌্যাব ইজ অ্যা ব্র্যান্ড নেম হোয়্যার ইউ গেট জাস্টিস। র‌্যাব ইজ অ্যা ব্র্যান্ড নেম ফর অ্যান্টি-টেরোরিজম অ্যাকটিভিটিস।

তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তুলনামূলক কম ক্ষতিতে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এই লড়াই শেষ না হলেও মূল উৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের মতো দেশ যে কোনো সময়ে এই জাতীয় সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বলেও যোগ করেন তিনি। শাহরিয়ার বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চান যেখানে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে, যেখানে সকলের মতামতের পরিবেশ বজায় থাকবে; তাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে যা জাতির গর্ব। তিনি বলেন, র‍্যাবকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা আগেও ছিল এবং প্রশিক্ষণ ও অর্থ দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যে কাজগুলো করেছেন, সেখানে যে ব্যত্যয় হয়েছে সেইগুলো নিয়েও কিন্তু এখন উই আর এনগেইজড, উই আর ওপেন। আমরা এগুলো সুরাহারও পথ খুঁজছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কোনো মহল থেকে কোনো হস্তক্ষেপ চায় না।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন প্রতিবেদনে দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ফুটে উঠেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বর্তমান ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের ফলে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গুম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কী আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে

১২ এপ্রিল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান দেশটিতে একটি সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে, যাতে অধিকাংশ ক্ষমতাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কুক্ষিগত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে, শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ দলটি পরপর তৃতীয় বারের মতো পাঁচ বছর মেয়াদে জয়লাভ করে, যার ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বহাল থাকেন।

অনিয়মের অভিযোগে পর্যবেক্ষরা নির্বাচনটিকে স্বাধীন ও সুষ্ঠু হিসেবে বিবেচনা করেননি। এসব অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়া এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের হয়রানি। প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে পুলিশ, বর্ডার গার্ডস অব বাংলাদেশ, এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মত সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপারে এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যাগুলোর মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে:

বেআইনি বা বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত; জোরপূর্বক গুম; সরকার বা তার নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা সরকারের তরফে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ বা শাস্তির ঘটনা; কারাগারের কঠোর বা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিবেশ; বিধিবহির্ভূত গ্রেফতার বা আটক; রাজনৈতিক বন্দি; বিদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ গ্রহণ; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ে গুরুতর সমস্যা; গোপনীয়তায় বিধিবহির্ভূত বা বেআইনি হস্তক্ষেপ; কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের শাস্তি প্রদান; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা বিচার করা এবং সেন্সর এবং মানহানি ও অপবাদ বিষয়ক ফৌজদারি আইনের অস্তিত্ব; ইন্টারনেটে স্বাধীনতা বিষয়ে গুরুতর বিধিনিষেধ আরোপ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও জোটের স্বাধীনতা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানের সংগঠন, অর্থায়ন, বা পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক আইন; শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ আরোপ; শরণার্থীদের প্রতি দুর্ব্যবহার; রাজনৈতিক অংশগ্রহণে গুরুতর ও অযৌক্তিক বাধাপ্রদান; সরকারি পর্যায়ে গুরুতর দুর্নীতি; পারিবারিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সরকারি বিধিনিষেধ বা হয়রানি; লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব, এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে যার মধ্যে রয়েছে, পারিবারিক ও অন্তরঙ্গ সঙ্গীর সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে, এবং

অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা; জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা আদিবাসী মানুষজনকে লক্ষ করে সহিংস অপরাধ বা সহিংসতার হুমকি; সমকামী, উভকামী, লিঙ্গ পরিবর্তনকারী, কুয়্যার, বা উভলিঙ্গ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ বা সহিংসতার হুমকি; সমলিঙ্গের পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে সম্মতিক্রমে যৌনমিলনকে ফৌজদারি অপরাধ সাব্যস্তকারী আইনের অস্তিত্ব বা ব্যবহার; স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের জোট গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ; এবং জঘন্যতম রূপে শিশুশ্রমের অস্তিত্ব।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যায় ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তির প্রতিবেদন রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি ও অন্যায় এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে সরকার সামান্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।


শেয়ার করুন