২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৫৩:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ হবে কবে?
আহবাব চৌধুরী খোকন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২২
প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ হবে কবে? ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।


বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে দেশের বাহিরে আসার সময় প্রবাসীদের হয়রানি এখন একটি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় দুই কোটির ও বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের অর্থনৈতির বুনিয়াদ শক্তিশালী হয়েছে। শুনা যায় অনেককেই প্রবাসীদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশে যাওয়া আসার পথে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন। সরকারের পররাষ্ট্র এবং বিদেশি কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বারবার বিচার চেয়েও কোনো সুরাহা মিলেনি। বন্ধ হয়নি প্রবাসী হয়রানি। আমাদের মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা দেশের বাহিরে গিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। কিন্তু দেশে গিয়ে ভুলে যান প্রবাসীদের কথা। ফলে বছরের পর বছর ধরে বন্ধ হচ্ছে না বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি। অথচ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে যতো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হয়েছে তার সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার প্রবাসীরা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত প্রবাসীরা।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশি প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখলেও এই মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীরা দেশে গিয়ে ঢাকা বিমান বন্দরে পদে পদে নিগৃহীত ও নাজেহাল হন। ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য প্রবাসী কর্মজীবী মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার এমনকি তুই-তুকারি করে কথা বলতে কুণ্ঠিত হন না। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে বহু প্রবাসী বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসরত অনেকে দীর্ঘদিন পর একবার দেশে গিয়ে আর কখনো দেশে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ঢাকা বিমানবন্দরে অভ্যন্তরের চিত্র দেখলে মনে হবে বিমানবন্দরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী হচ্ছেন পুরো দেশের মালিক আর প্রবাসীরা যেন চোর- ডাকাত। প্রবাসীদের নাজেহাল করা যেন তাদের ধর্ম। নিরাপত্তা তল্লাশির নামে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হন। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্র লাগেজ গায়েব করে উলে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা বিশ্বের অন্যান্য এয়ারপোর্টগুলোতে চমৎকার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরলেও নিজ দেশের এয়ারপোর্টে গিয়ে শিকার হন বিড়ম্বনার । ঢাকা বিমানবন্দরে অনেকগুলো ধাপে বিপদে উলে সুকৌশলে প্রবাসীদের নিকট থেকে চাহিদা মাফিক টাকা আদায় করা হয় বলে ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জানিয়েছেন। হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামার সংখ্যা বাড়লে ও বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার অনেক ক্ষেত্রে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় প্রবাসীদের। এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডেস্ক থেকে দায়িত্বশীল কোনো আচরণ কিংবা সৌজন্যতা লক্ষ করা যায় না। 

সম্প্রতি সৌদি আরব প্রবাসী কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট শাহাবুদ্দীন খালেদ টেলিফোনে আমাকে তার সাম্প্রতিক দেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। খালেদ জানান ঢাকা এয়ারপোর্ট নেমে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তার সামনে মধ্য বয়সী এক ভদ্রলোক ইমিগ্রেশন পেপার পূরণের সময় ভুলে মোবাইল নম্বর দিতে ভুলে গিয়েছেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তাকে মোবাইল নম্বর লিখে দিতে বলেন। ভদ্রলোক কর্মকর্তা বরাবরে অনুরোধ করেছিলেন, স্যার আপনার কলমটি একটু দেন। আমার কাছে কলম নেই। কর্মকর্তা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দিলেন তোমাকে কলম দেয়ার জন্য আমি এখানে বসেনি। জবাবে খালেদ বলেন, এমন অভিযোগ নতুন নয় ইমিগ্রেশন ডেস্কে কর্মরত ব্যক্তিরা মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীদের সাথে অহরহ অশালীন আচরণ এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেও কুণ্ঠিত হন না। ফ্রান্স প্রবাসী কামরুল ঢাকা বিমানবন্দরে সেবার মান নিযে অভিযোগ করে বলেন, একবার বিমানবন্দরে প্রবাসী এক ভদ্রলোককে সাহিয্য করতে গিয়ে তিনি উল্টো ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিকট থেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এছাড়া অতি সম্প্রতি জামিলা চৌধুরী নামে এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিলা অভিযোগ করেছেন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের অসৌজন্যতা ও অসহযোগীর কারণে তিনি নির্ধারিত সময়ে যুক্তরাজ্য যেতে পারেননি। তাকে বলা হয় তার সঙ্গে থাকা দ্রব্যাদির ওজন বেশি হওয়ায় বারকোড যুক্ত ফর্মের প্রিন্ট কপি জমা দিতে হবে। তিনি এই কপি প্রিন্ট করতে গিয়ে দেখেন কাউন্টারে দীর্ঘলাইন। এই সময় তিনি উপস্থিত সকল কর্মকর্তার নিকট সহযোগিতা চাইলেও কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। ফলে তিনি লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় তার ফ্লাইট ছেড়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে দেশ ও প্রবাসে তোলপাড় শুরু হলে বিমানের সিলেট স্টেশন ম্যানেজার ওমর হায়াত মিসেস জামিলা চৌধুরীর সাথে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেন ও তাকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার টিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। দুবাই প্রবাসী এক ভদ্রলোক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন দেশে যাওয়ার সময আত্মীয় স্বজনের জন্য পাঁচটি মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঢাকা নামার পর ফোনগুলো রেখে দেয়। ৩ বার এয়ারপোর্টে গিয়েও তিনি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি ঢাকা এয়ারপোর্টে যাত্রী সেবা প্রসঙ্গে বলেছেন দশ ঘণ্টার টানা যাত্রাপথে আমরা যখন ঢাকা বিমানবন্দরে যাই তখন এই পোশাকধারী লোকগুলো প্রথমে আমাদের কাছে ঘুষ চায়। না দিলে আচরণ শুরু করে ডাকাতের বেশে। আমাদের মালামাল নিয়ে শুরু করে টানাটানি। এদেরকে কিছু না দিলে শুরু করে তল্লাশির নামে হয়রানি। জানিনা এই বিড়ম্বনা থেকে কবে আমরা মুক্তি পাবো।

আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ দু’জনই প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের লোক ও সাংসদ। জনাব মোমেন দীর্ঘ দিন নিউইয়র্ক ও সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলেন।

এই প্রবাসের অনেকের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচয় রয়েছে। এই দুই গুণী ব্যক্তি প্রবাসী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রবাসীরা আশা করেছিলো এখন অন্তত প্রবাসীদের বহু সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু গত তিন বছরে তাদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে প্রবাসীদের সমস্যাগুলো দেখার সময় তাঁদের নেই। প্রবাসীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও তারা দেশ ও দেশের বাহিরে সর্বত্র উপেক্ষিত ও গুরুত্বহীন।

এইতো গেলো বিমানবন্দরের বিড়ম্বনা কথা। অন্যদিকে প্রবাসীরা দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করতে গেলেও একই অবস্থা। পদে পদে তাদেরকে সমস্যা পোহাতে হয়। যার ফলে অনেকেই দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ হারিয়ে উলেন। প্রবাসীরা যাতে নির্বিঘেœ এবং বিনা বাধায় নিজ দেশে যাতায়াত করতে পারে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন। প্রবাসীদের সুবিধার্থে সকল বিমানবন্দরে স্পেশাল ডেস্ক স্থাপন, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানসহ দেশে প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকল মহল এই ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন এবং অচিরেই দেশে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লেখক: কলাম লেখক ও কমিউনিটি নেতা, নিউইয়র্ক

শেয়ার করুন