২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৩৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


তর্জন গর্জন নয়, প্রয়োজন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
তর্জন গর্জন নয়, প্রয়োজন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি


আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। ১৯৬২, ’৬৬, ’৬৯-এর আন্দোলন দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত থেকে গৌরব আর গর্বের বাংলাদেশের অরুণ উদয়ের অগ্নিসাক্ষী হয়েছি। ঝরা পালকের ধ্বংসস্তূপে বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার সংগ্রাম দেখেছি কৈশোরে। ১৯৭৫-১৯৯০ স্বৈরশাসন দেখেছি। যৌবনে এরশাদবিরোধী আন্দোলন আর ১৯৯৬ গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনও দেখেছি। ১৯৯৬-২০০১ জ্বালানি বিদ্যুৎখাত উন্নয়নের অংশীদার ছিলাম। ২০০৫ বিএনপি-জামায়াত সরকারের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে প্রবাসী হতে বাধ্য হয়েছি, জীবিকার তাড়নায়। তবে নানাভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছি প্রবাসে থেকেও। 

ইদানীংকালে টানা তিনটার্ম ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন নিয়ে অনেক হুঙ্কার ঝংকার দেখছি। গত ১৪ বছরে স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করলেও আমি মনে করি না, সরকার গণতন্ত্র বিকাশে খুব কার্যকর কিছু করেছে। আর তাই রাজনীতি থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আমলাতন্ত্র নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ করে দুর্নীতি ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা অনেকটিই এককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এতোকিছুর পরেও বলবো সরকারকে আন্দোলন করে হটানোর সাধ্য, সামর্থ্য বা কৌশল সম্মিলিত বিরোধীদলের নেই। বরং বিরোধীদলের জনসমর্থনহীন কার্যক্রমের বিপরীতে সরকারের কৌশল ইতিমধ্যেই বিরোধীদলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।

অনেকেই ভাবেন, বিগত সময়ের মতো বর্তমান অবস্থায় বিকল্প শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমার মনে হয় না। রাজনীতি নিয়ে আদৌ উৎসাহিত হবে না দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, বরং তারা উন্নয়নশীল দেশে এখন উন্নয়ন সহযোগী। রাজনীতি থেকে তাদের ভাবনা অনেক দূরে।

এছাড়া যাদের কাছে বিরোধীদলগুলো ধরনা দিচ্ছে তারা ইতিপূর্বেও দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি। যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের ভূমিকা একেবারেই মন্দ নয়। তারা বর্তমান সরকারকেই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত, যা ক’দিন আগেও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ফলে সব মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো বর্তমান সরকারের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবেই দেখে আসছি, তাদের বিভিন্ন কর্মকা-ে। তাই অগণতান্ত্রিকভাবে সরকার পতনের সুযোগ নেই। 

আমি অনুরোধ করবো বিরোধীদল বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব, জনগণের কাছে সুস্পষ্ট করে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য। এটাই মঙ্গল দেশ ও জাতির জন্য। নির্বাচন হবে, তাতে সব দল অংশ নেবে এটাই নির্বাচনের সৌন্দর্য। সরকারি দলেরও উচিত বিরোধী মতের দলগুলো যেন সাংবিধানিক অধিকারমাফিক তাদের মৌলিক অধিকার পায়। অহেতুক বিরোধী মতকে ছাড় দেয়া হবে না, অমুক করা হবে না, তমুক করা হবে না, এটা করলে ওটা করা হবে ইত্যাদি জাতীয় কথাবার্তা মূলত সাধারণ মানুষে আতঙ্ক বাড়ে। এগুলো উচিত না। কারণ গ্রামগঞ্জে সরকারবিরোধী মত সবাই সহঅবস্থানে থেকে চলছে। সরকারের উন্নয়নের সুফল সবাই ভোগ করছে। ফলে সবাই যাতে স্বাধীনভাবে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারে, এটাই মুখ্য চাওয়া। এ গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনমত প্রকাশের জন্য, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠাও অন্যতম কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধ। 

ফলে এমন ধারাই হবে মূলত গণতান্ত্রিক চর্চা। সরকার ক্ষমতায় তাই তাদের সুযোগ-সুবিধা বেশি প্রচার-প্রচারণায় এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে বিরোধীদল তাদের অধিকারটুকু পাবে না সেটা হয় না। বিরোধী মতকে তাদের কথা বলার সুযোগ, রাজনীতির মাঠের অধিকার সম্পূর্ণভাবে প্রদান করতে হবে। নতুবা লেবেলপ্লেয়িং ফিল্ড হবে না, যা বিরোধীদলের অভিযোগ তোলার সুযোগ থেকে যাবে। 

আমি দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল চাই। সরকারকে দুর্নীতিমুক্ত আর দায়িত্বশীল রাখতে হলে শক্তিশালী বিরোধীদল প্রয়োজন, এর কোনো বিকল্প নেই। এখনো এক বছর সময় আছে নির্বাচনের। তবে বলতে পারি সরকারি দল এখন দারুণভাবে সুসংহত। এই অবস্থায় সরকারকে রাজপথে আন্দোলন করে বা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে না। দেশের স্বার্থে উভয়ই মিলেমিশে একটা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রেক্ষাপট তৈরির মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়া। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও এমনই।  

শেয়ার করুন