২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:২০:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


হঠাৎ ইসির সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৪-২০২৩
হঠাৎ ইসির সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার


আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার দোলাচল। বিরোধীদলসমূহ যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনেই যাবে না বলে কঠোর শর্তে আন্দোলনে মনযোগ। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের যখন সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে সেখানে নির্বাচন কমিশন গা-ঝাড়া দিচ্ছেন সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে। তাদের অধীনে আগামীতে যেসব নির্বাচন আসছে সেখানে অন্তত ১০টি শর্তের বেড়াজালে আটকে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ইতিহাসে সাংবাদিকদের এমন নিয়ন্ত্রণমূলক শর্তে আটকে দেয়ার ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেনি। অথচ খোদ হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকেই মানছে না দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ বেশকিছু দল। ক’দিন আগেও সংলাপের আহ্বান জানায় নির্বাচন কমিশন। সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করেনি বিএনপিসহ অন্যরা। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশনে আস্থার অভাব রয়েছে বলে তাদের মন্তব্য। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের ভূত কেন চাপলো নির্বাচন কমিশনের ওপর  সে আলোচনাই সর্বত্র। চলছে নানা সমীকরন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে প্রধান বিরোধীদলসহ বেশক’টি দল নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা সংকটে। সেখানে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে বরং সাংবাদিকদের কাছাকাছি রেখে স্বচ্ছতা প্রমাণে সচেষ্ট হওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনের। সেটা না করে একগাদা ‘না’ শর্ত দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বরং সাংবাদিকদের বিরাগভাজনে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। 

তাছাড়া বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিকদের জন্য এমন বেড়াজাল তৈরি করেনি কোনো নির্বাচন কমিশনই। ফলে হঠাৎ করে কেন এমনটার প্রয়োজন হলো, নির্বাচনের কী লুকাতে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিলেন তারা সেটা বোধগম্য নয়। দীর্ঘসময়ে সরকারের আমলা থাকা অবসর গ্রহণ করে এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাওয়া আউয়াল অবশ্য কিছুটা আশ্বাস দিয়েছেন অবশ্য। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের দিন গণমাধ্যমকর্মীরা জন্য করা নীতিমালা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

কী সব শর্ত রয়েছে ঐ নীতিমালায় 

* গত বুধবার যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

* নির্বাচনের দিন সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না। 

* ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কিংবা ভোট গণনার সময় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। 

* ফেসবুক লাইভ করা যাবে না।

* নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

* ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন- তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভিতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না।

* একইসঙ্গে দুইয়ের বেশি মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। 

* ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না।

* ভোটকক্ষে নির্বাচনি কর্মকর্তা, নির্বাচনি এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না।

* ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।

* ভোটকেন্দ্রের ভিতর হতে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।

* সাংবাদিকরা ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।

* নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

* কোনো প্রকার নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।

গত ২৮ মার্চ সাংবাদিকদের খসড়া সমন্বিত নীতিমালা প্রণীত হয়। এ ব্যাপারে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা, সার্বিক কর্মকা-কে জনস্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়, সেটা আমরা দেখব। আমরা আপনাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবো।’

যা সিইসির আশ্বাস 

এদিকে এটি প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেননা এ নীতিমালা শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই নয়। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচনের জন্যই প্রযোজ্য। যেমনটা জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং উপনির্বাচনে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। 

এ ব্যাপারে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের জন্য জারি করা নীতিমালা নিয়ে বোধ হয় কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমরা মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি।’ আমরা যে কথা আপনাদের বলতে চাই, তা হলো কোনো ডকুমেন্টই স্যাকরোস্যাংক্ট (অলঙ্ঘনীয়) নয়। যেকোনো ডকুমেন্ট যদি প্রয়োজন হয়, যেকোনো সময় রিভিউ (পর্যালোচনা) করে পরিবর্তন করা যায়।’ এ নীতিমালা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে যেসব মতামত বা সমালোচনা এসেছে বা আসবে, সেগুলো আমরা বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখব যে নীতিমালায় অধিকতর কোনো সংশোধন, বিয়োজন বা সংযোজনের প্রয়োজন আছে কি না। বিষয়গুলো দেখে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে আমরা শৃঙ্খলা বিধানের চেষ্টা করব। যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত না হয়। এটা মাথায় রেখেই আমরা নীতিমালা করেছি। তারপরও যেহেতু আপনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করবেন, আপনাদের যে মতামত, সেগুলো আরও পেয়ে নিই, সেগুলো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আপনাদের যথাসময়ে অবগত করবো।’ 

উল্লেখ্য, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে শুধু দেশি সাংবাদিকই নয়, সরকার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন বিদেশি সাংবাদিক/পর্যবেক্ষকদের।

শেয়ার করুন