২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সুষ্ঠু নির্বাচন ও কোয়াডে প্রকাশ্যে গ্যারান্টি চায় যুক্তরাষ্ট্র
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচন ও কোয়াডে প্রকাশ্যে গ্যারান্টি চায় যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডোনাল্ড লু, পাশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও অন্যরা


বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এব্যাপারে কোনোভাবেই চাড় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্যাটেজি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক ও প্রকাশ্যেই দেখতে চায় তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপির অধীনে বাজার সুবিধা পাওয়ার নিশ্চয়তা যেমন মেলেনি, তেমনি র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে জোরালো কিছু জানানো হয়নি দেশটির পক্ষ থেকে। 

অন্যদিকে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সব কিছু আশা করেছিল বাংলাদেশ সেব্যাপারে থেকে কার্যত তেমন সরে আসেনি যুক্তরাষ্ট্র। বরং এই প্রতিষ্ঠানটি এমন নিষেধাজ্ঞায় সামনের দিকে এগুতে তাদের কার্যক্রমে হোচট খেয়েছে এবং খাচ্ছে। এবষিয়টি বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে মার্কিনীদের জানানো হলেও এরা একে অন্যভাবে নিয়েছে। বলা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিনীদের অভিযোগের যে সত্যতা মিলেছে, সেটিই বড়ো করে নিজেদের কৃতিত্ব হিসাবেই দেখছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য মিলেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবরে আরো জানা গেছে,বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যেভাবে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে ফলাও করে খবর প্রকাশ করা হয়েছে বাস্তবে মার্কিন মুল্লুকের এমন শক্তিধর ব্যক্তির সফরটিতে ছিল আরো অন্য বিষয় নিয়ে। জানা গেছে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি সরকার অন্যভাবে মার্কিনীদের সাথে লবিং করে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ডোনাল্ড লুর সফরে এটি মিডিয়ায় গুরুত্ব মিললেও যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্যাটেজি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানটি সরকারের (বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে একধরনের ফয়সালা করে নেয়া হয়েছে বলেই শোনা যায়। 

গত বছরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রিক ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়। প্রথম অবস্থায় আলোচনায় অংশ নিয়েছে ১৩টি দেশ। ওই ফ্রেমওয়ার্কের বিরোধিতা করছে চীন। অন্যদিকে বেশ কয়েকবারই শোনা গিয়েছিল যে আমেরিকা একটি ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমি তৈরি করতে চাইছে। আর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাস বারবার বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে শামিল হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ডোনাল্ড লুর সফরে এটি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। আর বাংলাদেশকে থেকে শক্ত ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। তাছাড়া এর সত্যতাও মিলেছে। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমে বলেছেন, আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আমি নিজে খোলামেলা আলোচনা করেছি। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শ্রমপরিস্থিতি, নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আলোচনায় শাহীনবাগে ঘটনা

এদিকে বৈঠকের একটি সূত্র জানায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে রাজধানীর শাহীনবাগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েও ডোনাল্ড লুর সাথে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা হয়েছে। কেননা তার ঢাকা সফরের আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে রাজধানীর শাহীনবাগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ওয়াশিংটন পর্যন্ত গড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরের আসার আগেই। ডোনাল্ড লু এদেশে এসেই এবিষয়টি নিয়ে চুলচেড়া জানতে চেয়েছেন। এবং এব্যাপারে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। জানা গেছে রাজধানীর শাহীনবাগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনে কারা ছিল, কেনো করেছে সেব্যাপারে ডোনাল্ড লুরকে অনেক কিছুতেই আশ্বস্ত করা হয়। 

বিএনপি কোনো ডোনাল্ড লু’র সাথে সাক্ষাৎ করলো না..

দুই দিনের ভারত সফর শেষে ডোনাল্ড লু গত ১৪ জানুয়ারি শনিবার রাতে দিল্লি­ থেকে ঢাকায় পৌঁছান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ইস্কাটনের বাসায় যান।  সেখানে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর দায়িত্বে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ওই কূটনীতিকের সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগ্রহে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সফরের দ্বিতীয় দিনে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের করেন। এরপর তিনি গুলশানে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে তিনি মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে তাঁর সম্মানে পররাষ্ট্রসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন ডোনাল্ড লু।

তিনি সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাতে তিনি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন, সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না তাও জানতে চান ডোনাল্ড লু। কিন্তু ওই মতবিনিময়ে বিএনপির কেউ ছিলেন না। কিন্তু কেনো ছিল না বা  আদৌও তাদের ডাকা হয়েছিল কি-না সেব্যাপারটি নিয়ে এখনো কোনো কথা বলেনি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে ডোনাল্ড লু বলেছেন, গণতন্ত্র এবং সার্বজনীন মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেই জোর দিয়েছেন।  

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সফর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এধরনের সফরে আগে সরকারের মধ্যে একধ রনের অস্থিরতা ছিল। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দল বিশেষ করে বিএনপি অনেক কিছু আশা করেছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে তা মানতে এধরনের চাপ সৃষ্টির কৌশলে সফল হয়েছে বলা চলে। এ কারণেই সংবাদ বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর হাসিমুখেই তাকে দেখা গেছে। অন্যদিকে দফা দফায় বক্তব্য উঠে এসেছে যে, গণতন্ত্র এবং সার্বজনীন মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে- এমন কথাই এই সফরে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এমনকি জানা গেছে, এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়তা তিনি যে কোনো একভাবে নিয়ে গেছেন। কেননা তিনি বলে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্র সেই নিশ্চয়তার ওপরই বিশ্বাস করে কাজ করবে, আর বিষয়টি নজরে রাখবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে গ্যারান্টির  কথা জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাকে। 

শেষ কথা

মার্কিন নেক নজর আসলে বর্তমান শাসকরা কতটা কেড়েছে তা বুঝতে আরো সময় লাগবে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) ও হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সফরেও একটি মেসেজ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে। তার ওই প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের তরফে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় তারা।

তাছাড়া যে এই সরকার মার্কিনীদের চাপেই অনেক কিছু করেছে তারও সত্যতা মেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানান, তাদের মধ্যে রাজনীতি, নির্বাচন এবং র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর আমরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের (বিএনপি) সমাবেশের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আকাংখা এসরকার কিভাবে ভবিষ্যতে ম্যানেজ করবে তা সময়ই বলে দেবে।

শেয়ার করুন