২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:২২:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


বাংলাদেশে কী বার্তা দেবেন নুল্যান্ড ও লু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৩
বাংলাদেশে কী বার্তা দেবেন নুল্যান্ড ও লু ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ও ডোনাল্ড লু


কুরবানি ঈদের পর অর্থাৎ আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছে চার সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তবে জানা গেছে দলটি একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া। ওই প্রতিনিধিদলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র নামও রয়েছে। 

বাংলাদেশ সফরে তারা ক্ষমতাসীন দল ছাড়াও বিরোধী দল যেমন বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গেও তারা কথা বলবেন। উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দল এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যার মাস তিনের পর নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে দেবেন। কারণ নির্বাচনের ৯০ দিন ওই কার্যক্রম শুরু করার কথা নির্বাচন কমিশনের।  

বাংলাদেশে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই চারদিকে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। কী বার্তা নিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার প্রভাব কী পড়বে? কেননা সম্প্রতি ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বিশেষ করে ভিসানীতির পর থেকে ওই সব বৈঠকের বেশ গুরুত্ব ছিল। যার সর্বশেষ ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গেও ছিল তার সে বৈঠক। এখান থেকে একটা রিপোর্ট হয়তো তৈরি করেছেন তিনি তার দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফর কেন্দ্র করে কিছু একটা হয়তো হতে পারে এমন একটা খবর চাউর হলেও মোদী বাংলাদেশ ইস্যুতে কোনো কথাই বলেননি বাইডেনের সঙ্গে এ খবরও এসেছে। এতে অনুমান করা যায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিনীরা যে নীতি ঠিক করেছে সেখানে বাধা দেয়ার বা প্রতিবন্ধকতা তৈরীর কেউ আর অবশিষ্ট নেই।   

কেননা মার্কিন চার সদস্যদের বাংলাদেশ সফরের খবরটি প্রচারিত হয়েছে এমন একটি মুহূর্তে, যার কদিন আগে বাংলাদেশের দুই প্রবীন রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক  দলের নেতা হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ভুখন্ড (সেন্টমার্টিন দ্বীপ) দখল ও লীজ নেয়ার পায়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন। একই সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেন্টমার্টিন নিয়ে কথা বলেছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ জুন বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? আমি তো এইটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত দিয়ে এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখনও যদি বলি ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনও অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।” যেহেতু হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন, এরপর প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত বক্তব্যে দেশের নাম উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিত মেনন ও ইনুর বক্তব্যের দিকেই বলে অনেকেই ধারণা করছেন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সেন্টমার্টিন দখলের ইচ্ছা শুধু মায়ানমারের। আর এ মুহূর্তে ওই দেশটির এমন খায়েশের কথা মনে আনারও সময় তাদের নেই। 

বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা নতুন নয়। বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তাদের নির্বাচনি অঙ্গিকার হিসেবে তারা যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল ও পিছিয়ে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। বাইডেনে মানদন্ডে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দিক থেকে আপ টু দ্যা মার্কে নেই। যার জন্য বাইডেনের বিশ্বের সকল দেশসমূহ নিয়ে গণতান্ত্রিক সম্মেলনের যে দুটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। বরং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ব্যাপক আলাপ অলোচনা করে যাচ্ছেন। সে সূত্র ধরেই ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ডসহ আরো অনেক মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। একবার এসেছিলেন ডোনাল্ড লু’ও। ডোনালন্ড লু’কে একটু বেশিই চেনে এশিয়ার লোকজন। কারণ তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খানের আভিযোগ রয়েছে। 

শুধু বাংলাদেশে এসেই নয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবকেও আমেরিকাতে ডেকে নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য বারবার পরামর্শ দিয়েছে। 

দেশেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সহ ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও সে দেশের রাষ্ট্রদূত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য প্রমুখ দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছেন।  এর পাশাপাশি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসানীতিও ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে প্রচন্ড প্রেসার তৈরি করছে তারা বাংলাদেশের প্রশাসনকে যেন অন্তত ২০১৪ ও ২০১৮ সনের মত কোনো নির্বাচন যাতে আর অনুষ্ঠিত না হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। কেননা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী পক্ষে থাকা বিএনপি ও অন্যান্য দলের মতপার্থক্য বিস্তর। কোনোভাবেই এ দুই পক্ষের আলোচনার টেবিলেও বসার আর সুযোগ নেই। ফলে উন্নয়নসহযোগী বা দাতা দেশসমূহের প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও কোনো সুযোগ নেই। যদিও সরকার বলছে আগামী নির্বাচনটা তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবেই অনুষ্ঠান করবে। যার বাস্তব উদহরন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। যেখানে একজন জাদরেল আওয়ামী লীগ নেতা হেরে গেছেন একজন সাধারণ গৃহবধুর কাছে। যদিও তিনি বিগত মেয়রের মা। কিন্তু এসব কথায় আস্থা রাখতে পারছেনা সম্ভবত মার্কিনীরাসহ অন্যান্য দেশ তথা পশ্চিমা জোট। 

এজন্যই আবারও শীর্ষ মার্কিন প্রতিনিধি দলের এ সফর, যাতে তারা কোনো সমঝোতার উপায় বের করে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন কি-না সে লক্ষ্যে। ইতিমধ্যে ওই শীর্ষ চার মার্কিন প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্নস্তরে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন এ বছরের ডিসেম্বরে বা ২০২৪ এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। আর বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের দাবি ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যা কোনোভাবেই মানছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন