রাঙ্কিংয়ে যোজন যোজন ব্যাবধানে এগিয়ে থাকা মধ্য প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের সঙ্গে অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে (০-১) হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিলো বাংলাদেশ। প্রতাপশালী প্রতিদ্বন্দীর বিরুদ্ধে লড়াকু মেজাজ নিয়ে চোখে চোখ রেখে লড়েছিল বাংলাদেশ। বড় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত জয়ের স্বল্প অভিজ্ঞতা এবং কিছুটা ভাগ্য বিড়ম্বনার কারণে এহেন পরাজয়ে কষ্ট পেলেও আমি আশাহত হইনি। স্কুল জীবনে বাংলা ব্যাকরণে সব কারকে প্রথম বিভক্তি হিসাবে শিখেছিলাম পাগুটা দীপ্তি। সেখানে অপাদান কারকে প্রথম বিভক্তি ছিল পরাজয়ে ডরে না বীর। পন্ডিত স্যারের কাছ থেকে শেখা। বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা পরাজয়ে সেই কথাটাই বলবো। বীরের মতো লড়াই করেই হেরেছে বাংলাদেশ।
গোটা ম্যাচে রাংকিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষ দলের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখেকরা অটল অচল হিমাদ্রি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গোল রক্ষক জিকো। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলার প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রক্ষণভাগের তপু বর্মনের কিছুটা ব্যার্থতায় জিকো তাল হারিয়ে গোল খেলে হৃদয় ভাঙে বাংলাদেশের। হেরে গেলেও আশা জাগানিয়া ফুটবল উপহার দিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ফুটবলের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
কুয়েতের রাইট-ব্যাক আবদুল্লাহ আল বাউসি করেছেন ম্যাচে সোনার হরিণ হয়ে ওঠা একমাত্র গোলটি। তাঁর গড়ানো শট বাংলাদেশের সেন্টার-ব্যাক তপু বর্মণের দুই পায়ের ফাঁক গলে জালে গেছে। এ ম্যাচে ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে ওঠা বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান বলের গতিটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তাঁকে কিছুটা বিভ্রান্ত করে বল জালে যেতেই হাঁফ ছেড়েছে কুয়েত। সাফে প্রথমবার অতিথি দল হিসেবে খেলতে নেমেই কুয়েত উঠে গেছে ফাইনালে। আজই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত-লেবানন ম্যাচের জয়ী দলকে ৪ জুলাই ফাইনালে পাবে কুয়েত।
অথচ বাংলাদেশের হয়ে মোরসালিন এবং রকিব গোল করার সুযোগ পেয়েছিলো। খেলার ৯০ মিনিট সমানতালে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ।
নানা সমস্যা সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশ ফুটবলের কঠিন সময়ে এবারে বাংলাদেশ এবার গ্রুপ পর্যায়ের খেলাগুলোতে অভাবনীয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ফুটবল প্রেমিকদের মনে আশার প্রদীপ জেলে দিয়েছিলো। ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গোল করার একাধিক সুযোগ পেয়েছিলো। শুরুতেই মোরসালিন এবং অন্তত দুইবার রকিব সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কুয়েত বাংলাদেশের গোলে বার বার আঘাত হেনেছে। অধিকাংশ সময়ে গোল রক্ষক জিকো রুখে দিয়েছে অসামান্য দৃঢ়তায়। রক্ষণ ভাগ সুরক্ষিত রেখে বাংলাদেশ প্রতি আক্রমণ করেছে।
খেলটা কখনো একতরফা হয় নি। এমন খেলার জন্য বাহবা পেতেই পারে গোটা দল। হয়তো বাংলাদেশ ফাইনালে না ওঠায় অনেকেই বলবেন তীরে এসে তরী ডুবলো। কিন্ত বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে স্মরণ করা সাফ টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ অর্জন অবশ্যই আশা জাগানিয়া। এভাবে উন্নয়ন ধারা বজায় থাকলে অচিরে বাংলাদেশ ফুটবল ঐতিহ্য ফিরে পাবে। এমন পরাজয়েও গর্ব করা যায়.
এই দলকে নিয়ে পরিকল্পিত পথে এগুলে এবং সঠিক প্রণোদনা দেয়া হলে বাংলাদেশ অনাগত সময়ে উত্তর উত্তর সাফল্য অর্জন করবে।