২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:২২:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন কার্যকর হচ্ছে না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন কার্যকর হচ্ছে না বাপার আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ


বেলার প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অভিযোগ করেছেন, শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই বৃক্ষ নিধন রোধে ২০১৬ সালের বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন এখনও কার্যকর হয়নি। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা কলেন। রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হল (দ্বিতীয় তলা) “বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাবঃ আমাদের করণীয়”-শীর্ষক এ আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, সরকার যখন উন্নয়নের পরিকল্পনা করে তখন তা জনগনকে জানতে দেয় না। তিনি বলেন, সাত মসজিদ সড়কের ১৫-৩০ বছর বয়সী গাছ কেটে তদস্থলে বাগান বিলাশ গাছ লাগিয়ে ধানমন্ডীবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। গাছ কাটার পিছনে আর্থিক বাণিজ্য কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে এমন গাছ রোপণ, সংরক্ষণ, এবং মাদার ট্রি- বড় গাছ রক্ষার আইন চাই।

বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান এর সভাপতিত্বে এবং বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের নেতা  শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরিকালচার সেন্টারের পরিচালক, অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, পরিবেশবিদ, অধ্যাপক ড. তাওহীদা রশীদ, গ্রীন সেভার্স এর প্রধান নির্বাহী, আহসান রনি প্রমুখ। এতে উপস্থিতি ছিলেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক, মিহির বিশ্বাস, হুমায়ুন কবির সুমন ও পারান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, বাপা সদস্য হাজি আনসার আলীসহ বাপা অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। 

মূল প্রবন্ধে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশেই উন্নয়নের নামে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ নিধন চলছে। রাস্তার সংস্কার, বৃদ্ধি নতুন রাস্তা তৈরি কিংবা রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পের নামে দেশব্যপী বৃক্ষ নিধনের মহাৎসব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বৃক্ষ নিধনের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ। সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। এ ছাড়াও আমেরিকান গবেষকদের মতে পৃথিবীতে বজ্রপাতে যে পরিমাণ মানুষ প্রাণ হারান তার এক-চতুর্থাংশ প্রাণহানি ঘটে বাংলাদেশে।

শিরিন হক বলেন, রাতের অন্ধকারে চোরের মতো সিটি কর্পোরেশনের অনুমতিতে সাতমসজিদ সড়কের ৬০০টি গাছ কাটা হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি জনসাধারণকে আরো বেশি পরিবেশ সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে পরিবেশ রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র আজ ধ্বংসের দার প্রান্তে। যারা পাহাড়ে বসবাস করে তারা পাহাড় কাটে না, যারা বনে বসবাস করে তারা বন উজাড় করে না। যারা ইট পাথরের মধ্যে বাস করে তারা বন-পাহাড়কে ইট পাথরের শহর পানানোর জন্য গাছ কাটে এবং পাহাড় ধ্বংস করে। রামপাল ও চকরিয়ার গাছ না কেটেও গাছগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে মুনাফা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প। দন্ধ যতই প্রকট হবে পরিবেশ ততো দ্রুত পাল্টাবে।

অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ঢাকার মধ্যে সবুজে ঘেরা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের তুলনায় অন্যান্য স্থানের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশি তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। দেশের স্কুলগুলোতে পরিবেশ বিষয়ে ছোট বাচ্চাদের গাছ ও পরিবেশের প্রতি সহনশীলকরে তোলার জন্য হাতে কলমে বৃক্ষ রোপন ও সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।  

অধ্যাপক ড. তাওহীদা রশীদ বলেন, গাছের অভাবে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়, বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। ত্রিশ বছরের একটি গাছ প্রতিদিন ৫০০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করে যার বর্তমান বাজার মূল্যে ২৪ হাজার টাকা এবং মাসে দাঁড়ায় ৭,২০,০০০ টাকা। তিনি আরো বলেন, একটি গাড়ী ২৫ হাজার কিলোমিটার চললে যে দূষণ হয় তা একটি বড় গাছ শোষণ করতে সক্ষম।

আহসান রনি বলেন, দেশে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে গাছগুলোকে উন্নয়নের নিচে পিষে ফেলা হচ্ছে। উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে বৃক্ষ নিধন কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। এসকল প্রকল্পে আছে কোটি কোটি টাকার হিসাব। সেই জন্য ধানমন্ডিবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে এই গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমরা বৃক্ষ সংরক্ষণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। 

মহিদুল হক খান বলেন, উন্নয়নের নামে যত্রতত্র উপরিকল্পিতভাব গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। জীববৈচিত্র রক্ষা উপযোগী বৃক্ষ রোপন করা প্রয়োজন। তা না হলে জীববৈচিত্র হুমকির মূখে পড়বে। ঢাকার সড়কগুলো প্রশস্তের নামে রাস্তার গাছগুলো কাটা হচ্ছে অথচ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন  সবুজে ঘেরা একটি শহরে পরিণত হয়েছে শুধুই মানষিকতা পরিকল্পার তারতম্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন