২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


নিউইয়র্কের সাবওয়ের ট্রাক থেকে তন্ময়ের লাশ উদ্ধার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০২-২০২৪
নিউইয়র্কের সাবওয়ের ট্রাক থেকে তন্ময়ের লাশ উদ্ধার হাবিবুর রহমান তন্ময়


বাংলাদেশি মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান তন্ময়। অন্য দশ বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীর মতো স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেছিলেন উন্নত জীবনের আশায়। কিন্তু তার স্বপ্ন যে কয়েক বছরের মধ্যে ফিকে হয়ে যাবে- তা কি কেউ জানতেন? বা তাকে যে লাশ হয়ে ফিরতে হবে তাও কি কারো চিন্তায় ছিল। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান তন্ময়কে লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান তনয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের একটা সাবওয়ে ট্র্যাকে পাওয়া গিয়েছিল তার নিথর দেহ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে এমন নির্মম ঘটনা ঘটে। এমন এক জায়গায় তার দেহ পাওয়া গেছে, সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমনকি, সাবওয়ের লোকজনেরও স্বাভাবিক চলাচল নেই। জানা গেছে, হাবিবুর রহমান তন্ময় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডায়। ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে। আমেরিকায় পা ফেলার ২২ দিনের মাথায় মায়ের মৃত্যুতে হতাশ হয়ে পড়েন তন্ময় তার পরিবারের তথ্য এমনই। সেই সময় থেকে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। একসময় পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগটাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই হাবিবুর রহমান তন্ময়ের বাবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক। মা সরকারি চাকরি করতেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। পরিবারের তথ্য, তন্ময়কে তার উচ্চশিক্ষা শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু জানা যায় অন্য তথ্য। তন্ময়ের মা মারা যাবার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। যদিও তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, তাকে সহযোগিতা করতেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। মা মারা যাবার পর তন্ময়ের মামা এবং বোনররা তার থেকে সম্পত্তি নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক সময় তন্ময় দেশে গেলে সম্পত্তির জন্য তার উপর বিভিন্ন ধরনের চাপ দেওয়া হয়। মারধরও করা হয়। কিন্তু হাবিবুর রহমান তন্ময় সম্পত্তি না দিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন। আমেরিকায় আসার পরই তন্ময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং ভবঘুরের মত রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতেন। একটি সূত্র জানায়, তন্ময় পারিবারিক ওই চাপ নিতে পারেনি। যে কারণে কলেজ বন্ধ করে দেয় এবং ২০১৮ সালে ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্ক চলে আসে। নিউইয়র্কে আসার পরও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। মানসিকভাবে যে অসুস্থ ছিল।

২০ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ফোনকল পেয়ে বাংলাদেশে তার পরিবার এ মৃত্যুর খবর জানতে পারে। নিউইয়র্কে তন্ময়ের পরিচিত কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিবার বা আত্মীয় কাউকেও পাইনি পুলিশ। পুলিশ তন্ময়ের কাউকে না পেয়ে তার পকেটে রাখা কাগজপত্রে বাড়ির মালিকের নম্বর পায়। সেই নম্বরে পুলিশ কল করে তন্ময়ের পরিবারের ঠিকানা নেয় এবং পুলিশ বাংলাদেশে তার পরিবারকে জানায়। তন্ময়ের তার মরদেহ রাখা ছিল সিটির চিফ মেডিকেল অফিসারের জিম্মায়। এক সময় যোগাযোগ করেন বাংলাদেশি কম্যুনিটির অন্যন্ত পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু। তিনিই বাংলাদেশে লাশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব ব্রুকলিনের বায়তুল জান্নাহ মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে আমিরাতের একটি ফ্লাইটে তার লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে তার লাশ গ্রহণ করছেন মেহেদী হাসান- জানিয়েছেন জাহিদ মিন্টু।

উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমানের দেশের বাড়ি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও তার জন্ম হয় ঢাকায়।

শেয়ার করুন