৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


সরকারপ্রধান মাঝেমধ্যে অসহায়-একাকী
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২৪
সরকারপ্রধান মাঝেমধ্যে অসহায়-একাকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


শেষ হয়ে গেল মার্চ ২০২৪। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে এই মাসেই ২৬ মার্চ ১৯৭১ সূচনা হয়েছিল সশস্ত্র হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে পৈশাচিক আক্রোশে ঢাকা এবং প্রধান প্রধান শহরগুলোতে আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নির্মম গণহত্যায়। পিলখানা তৎকালীন ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পুরান ঢাকা অঞ্চলে নিরীহ ঘুমন্ত বাংলাদেশিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল জনপদ। মধ্যরাতের পরেই ইপিআর বেতারযন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর তরফ থেকে প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। 

পরদিন সারাদিন নানাভাবে নানাজন চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতের কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বোমার আক্রমণ থেকে বেতার ট্রান্সমিটার রক্ষা করে সাময়িকভাবে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্থানান্তরিত করা হলে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর তরফ থেকে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছে নানা সময়ে ঘোষণা দুটি নিজ কানে শোনার। ইতিহাস চলে নিজের গতিতে। ইতিহাসকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। 

আজ নানা ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট, দুইজনই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে পরলোকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নানা দেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশি এখন ১৮ কোটি। দেশে প্রবাসে আজ নানা গৌরবে গৌরবান্বিত বাংলাদেশ। অথচ কিছু দিকভ্রান্ত মানুষ এখনো নানা বিতর্কে মেতে আছে। জাতি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখনো চলছে বিতর্ক বাহাস। 

স্বীকার করে দ্বিধা নেই আজও স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা দেশকে সঠিকভাবে ভালোবাসতে শিখিনি। জনগণের মৌলিক অধিকার সত্যিকার অর্থে অর্জিত হয়নি। মীমাংসিত অনেক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি জনযুদ্ধ। প্রতিবেশী ভারতের সক্রিয় সহায়তায় সাড়ে ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ বীর শহিদের আত্মদান এবং লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে এখনো মুক্তিযুদ্ধ বিতর্কিত হয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অবর্তমানে তার আদর্শ এবং নির্দেশনায় মুজিবনগর সরকারের সুযোগ্য পরিচালনায় অর্জিত স্বাধীনতার মূল নায়কদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। দেশে অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সরকারি সুবিধা ভোগ করলেও অনেক সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে দিন পার করছেন। দেশে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলাচ্ছে ফসল, শ্রমিকের ঘামে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা, কিন্তু প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় শোষকশ্রেণির একটি মহল অবাধ লোপাটের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে দেশের বাইরে পাচার করছে। সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্র এখনো বাধা পাচ্ছে পদে পদে। এমন দেশের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেননি। এই দেশ এই সমাজব্যবস্থার জন্য ৩০ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মাহুতি দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধ কারো দয়ার দান ছিল না, ছিল না কোনো রূপকথা। 

বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তিনি পাকিস্তানের কোটিপতি ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ দেশে ২২ হাজার পরিবার কোটিপতি সুশাসনের অভাবে। অথচ সাধারণ মানুষ অধিকার বঞ্চিত, রাজনীতি এখন জনস্বার্থ সংরক্ষণের পরিবর্তে অবৈধ লোপাটের বাণিজ্যে পরিণত। বঙ্গবন্ধু নিজে বলতেন, ‘আমার কৃষক, আমার শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়।’ কিন্তু দুঃখ হলেও সত্ত্বেও সারাক্ষণ যারা মুজিব বন্দনায় মুখে ফেনা তুলছে, তারাও অনেকে মুজিব আদর্শ বিচ্যুত। 

অস্বীকার করা যাবে না বঙ্গবন্ধুকন্যা জীবন বাজি রেখে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে একটি পর্যায়ে টেনে তুলেছেন। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কৌঁসুলি হতে হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই আপস করেছেন কিছু মহলের সঙ্গে হয়তো পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু সেই সুযোগে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, উপদেষ্টা, বেসামরিক আমলা গোষ্ঠী জনগণের সম্পদ লোপাট করেছে। সরকার প্রধানকে মাঝেমধ্যে অসহায় একাকী মনে হচ্ছে। তার ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এভাবে চললে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট এক সময় দেশের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশ কিন্তু আবারও শাসক এবং শোষকশ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। 

বিদ্যমান অবস্থায় আমি মনে করি, সরকারপ্রধান নিজে উদ্যোগ নিয়ে দেশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সংলাপ করে বর্তমান অবস্থায় করণীয় বিষয়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। দেশের অগ্রসরমান চিন্তাধারার তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গোড়ার নতুন মুক্তিযুদ্ধ এখন সময়ের দাবি। স্বাধীনতা সংগ্রাম সূচনার মাসে একজন সচেতন বাংলাদেশি হিসেবে এটি কামনা করি।

শেয়ার করুন