২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:০৯:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা পরিলক্ষিত হয়েছে: টিআইবি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা পরিলক্ষিত হয়েছে: টিআইবি


একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, প্রকৃত বিরোধী দল না থাকা এবং প্রধান বিরোধী দলের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়ে গেছে। এসব বক্তব্য উঠে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র  পক্ষ থেকে নেয়া এক গবেষণায়। 

“পার্লামেন্ট ওয়াচ; একাদশ জাতীয় সংসদ; ১ম হতে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০১৯ এপ্রিল ২০২৩)” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা পরিলক্ষিত হয়েছে। আর এসব তথ্য দিয়ে সংস্থাটি জাতীয় সংসদের কাছে প্রত্যাশিত ভূমিকা নিশ্চিতে গবেষণা প্রতিবেদনে ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপনা করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট রাবেয়া আক্তার কনিকা এবং মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান সাখিদার। 

প্রধান বিরোধী দলের দ্বৈত ভূমিকা 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন জোটভুক্ত দল হিসেবে সংসদীয় কার্যক্রমে প্রধান বিরোধী দল দ্বৈত ভূমিকা পালন করেছে । এবং সংসদকে কার্যকর করে তুলতে বিরোধী দলের শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে প্রধান বিরোধীদলের অবস্থান ছিল প্রান্তিক এবং সরকারকে জবাবদীহী করার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা ছিল সার্বিকভাবে গৌণ। ক্ষেত্র বিশেষে প্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যে অন্যান্য বিরোধী দলের পর্যালোচনা ও সমালোচনা প্রধান্য পেয়েছে যা প্রধান বিরোধী দলের দ্বৈত ভূমিকা ও পরিচয়কে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। 

আক্রমণাত্মক সমালোচনার প্রাধান্য

গবেষণায় বলা হয় সংসদীয় কার্যক্রমে বিষয়ভিত্তিক, প্রাসঙ্গিক ও গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে সরকার ও দলীয় অর্জন ও প্রশংসা এবং প্রতিপক্ষদলের প্রতি আক্রমণাত্মক সমালোচনার প্রাধান্য পেয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদে বিভিন্ন কার্যক্রমে ৭৪৪ ঘন্টা ১৩ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে, যার মধ্যে জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদীহী প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম মোট সময়ের ২৬.৬% (১৯০ ঘন্টা, ২৬ মিনিট), রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনা মোট সময়ের ২৫.৭% (১৯১ ঘন্টা, ২৩ মিনিট), বাজেট আলোচনায় ১৪২ ঘন্টা ৩০ মিনিট (১৯.২%), আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে ১২৪ ঘন্টা ১৮ মিনিট (১৬.৭%) এবং কিছু বিশেষ কার্যক্রমে ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট (১.২%) সময় ব্যয় হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতির ভাষণে প্রায় চার পঞ্চমাংশ সময় সরকারের অর্জন বিষয়ক আলোচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনায় সরকারদলীয় সদস্যরা সবোর্চ্চ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা এবং সরকারের বিভিন্ন অর্জনের প্রশংসায়। একইভাবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে ৪৮.৭% প্রশ্নকর্তা প্রশ্নের বাইরে অন্যান্য আলোচনা (প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, দলের প্রশংসা, অন্য দলের সমালোচনা ইত্যাদি) করেন যা প্রশ্ন উত্থাপনে মোট ব্যয়িত সময়ের প্রায় ৮০%। একইভাবে, মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ৫৬.৭% প্রশ্নকর্তা প্রশ্নের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, দলের প্রশংসা, অন্য দলের সমালোচনা করেন যা প্রশ্ন উত্থাপনে মোট ব্যয়িত সময়ের প্রায় ৬৫%। অন্যদিকে উত্তর প্রদানের প্রায় ৩৯.৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে উত্তর বহির্ভূত আলোচনায়। একইভাবে, সাধারণ আলোচনায় একক ভাবে বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট আলোচনায়ই প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি সময় ব্যয়িত হয়েছে যা শতাংশের হিসেবে ৪৫.১%। বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করতে গিয়ে সদস্যরা আত্মপ্রশংসা ও অন্যদলের সমালোচনায় ব্যয় করে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময়। 

গবেষণায় আরে দেখা যায়, সংসদীয় কার্যক্রমে সদস্যদের অনুপস্থিতি, যথাযথ গুরুত্ব সহকারে অংশগ্রহণ না করা, প্রতিপক্ষের মতামত প্রকাশে বিঘ্ন ঘটনো ও মতামত গ্রহণ না করার প্রবণতার কারণে কার্যক্রমসমূহের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে। স্থায়ী কমিটি-গুলোর নিয়মিত বৈঠকের ঘাটতি বিশেষত, দেশের জরুরি পরিস্থিতিতেও সংশ্লিষ্ট কমিটিসমূহের বৈঠক করার প্রতি গুরুত্বহীনতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক কমিটির প্রতিমাসে নূন্যতম ১টি করে সভা করার নিয়ম থাকলেও, কোনো কমিটিই সে নিয়ম পালন করেনি। ন্যূনতম নির্ধারিত সভা সংখ্যার ৬৬.১% সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি। 

জাতীয় সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের অভাব, প্রধান বিরোধী দলের “আত্মপরিচয়ের সংকট” এবং এর সঙ্গে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও একচ্ছত্র ভূমিকার কারণে জাতীয় সংসদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংসদের মূল ভূমিকা- আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও জনগণের পক্ষে সরকারের জবাদীহীতা নিশ্চিত করা। আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভূমিকা পালনের সুযোগ থাকলেও, বাস্তবে ব্যাপক ঘাটতি উঠে এসেছে গবেষণায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একাদশ জাতীয় সংসদে একটি আইন পাশ হতে আন্তর্জাতিক চর্চার অনেক কম সময় লেগেছে। আইন প্রণয়নে কম সময় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণে ঘাটতি রয়েছে গেছে। বিশেষ করে আইন কতটুকু জনকল্যাণমুখী হলো, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের রূপান্তর যার প্রকট উদাহরণ। অন্যদিকে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যক্রমে ব্যাপক দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রতি মাসে একটি বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সবগুলো কমিটিগুলো তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশ্নোত্তরে ও বাজেট আলোচনার বিষয়বস্তুর বাইরে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সরকারি সাফল্য ও প্রশংসা এবং প্রতিপক্ষের সমালোচনায় সংসদের সময় ব্যয় হয়েছে কিন্তু জবাবদিহিতার উপাদান অনুপস্থিত থেকেছে। অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা হলেও, এ বিষয়ে জবাবদিহিতা বা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’ 

টিআইবি’র আশা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সংসদের প্রত্যাশিত ভূমিকা নিশ্চিতের জন্য সংসদকে কার্যকর ও জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের বিষয়ে জোর দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে জনমনে উদ্বেগ রয়েছে। কার্যকর সংসদ ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও অন্যান্য অংশীজন যেমন রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনসহ সবাইকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব মুক্ত থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

শেয়ার করুন