২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৫৬:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মার্কিন কোম্পানি শেভরনের বকেয়া ২৮০.৭১ মিলিয়ন ইউএস ডলার
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
মার্কিন কোম্পানি শেভরনের বকেয়া ২৮০.৭১ মিলিয়ন ইউএস ডলার পেট্রোবাংলার কাছে ২৮০.৭১ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাবে শেভরন


মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরনের কাছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার বকেয়া দেনা ২৮০ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এপ্রিল ২০২২ থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত মাসিক গ্যাস বিল নিয়মিত পরিশোধ না করে পুঞ্জীভূত হয়েছে দেনা। ৩১ আগস্ট ২০২৩-এর মধ্যে দেনা পরিশোধ না করলে উৎপাদন চুক্তির অধীন গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির ১৪.৩ ধারা অনুযায়ী শেভরন গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার সংরক্ষণ করে। বর্তমান মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি শেভরন তাদের পরিচালনাধীন বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজর গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে দেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছে। এমনিতেই নিজেদের গ্যাস ক্ষেত্রে সম্মিলিত উৎপাদন এবং ৮৪০-৮৫০ মিলিয়ন আমদানি করা এলএনজি সমন্বিত করেও গ্যাস ঘাটতি ১০০০ এমএমসিএফডির বেশি। 

এখানে একটি বিষয় সরল উপস্থাপন না করলেই নয় যে, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বা নিজ দেশের খনি থেকে উত্তোলিত গ্যাস (বিদেশি কোম্পানি দিয়ে উত্তোলিত) বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কেনে। আবার বিদেশ থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দামও এই পেট্রোবাংলাই পরিশোধ করে। আর পেট্রোবাংলাকে দুই ক্ষেত্রেই পেমেন্ট দিতে হয় ডলারে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিল দিতে না পারলে নির্ধারিত হারে জরিমানাও দিতে হয়। কিছু কিছু সময়ে সে জরিমানার মেয়াদ ছাড়ালেও বিদেশি কোম্পানির এখতিয়ার রয়েছে, চাইলে তারা সরবরাহ স্থগিতও করতে পারে। ইতিমধ্যে সে হুমকিও পেয়েছে পেট্রোবাংলা সে খবরও বের হয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, এতে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ভেবে দেখুন, আগস্ট থেকে শেভরন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করলে কি অবস্থা দাঁড়াবে দেশের গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার। খবরে জেনেছি, ফরাসি কোম্পানি টোটাল এবং সিঙ্গাপুরের কোম্পানি গানভোর স্পট মার্কেট এলএনজি সরবরাহের জন্য বকেয়া ১১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে। ডলার সংকটের এই মুহূর্তে কোথা থেকে আসবে প্রয়োজনীয় ডলার? সরকার নিজেই নানাভাবে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর সঞ্চিত অর্থ নিজেরা নিয়ে, ওদের তহবিল শুণ্য করে ফেলেছে। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর কারিগরি এবং ব্যাবস্থাপনা সক্ষমতা আমলাদের নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত হয়েছে। 

ভাবতে অবাক লাগে এই পেট্রোবাংলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন থেকে সৃষ্ট। কয়েকদিন পরেই জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস ঘটা করে পালন করবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সবিনয়ে প্রশ্ন একটা করি জ্বালানি উপদেষ্টা এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে। কিভাবে ম্যানেজ করবেন সংকট? কেন পেট্রোবাংলার এমন দশা হলো? পেট্রোবাংলা আগে কখনোই শেভরন বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক তেল দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। বর্তমান অবস্থার জন্য পেট্রোবাংলাকে একা দায়ী করার সুযোগ নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় সবার ব্যর্থতা রয়েছে। আমি নিশ্চিত বিষয়টি যথা সময়ে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়নি। সেটা যদি আনা হতো, তাহলে তিনি ঠিকই একটা উপায় বের করে ফেলতেন এবং এমন সংকটে যাতে না পওে, সে ব্যবস্থা তিনি করে রাখতেন। কেননা এটা নির্বাচনী বছর। এটা যেমন তার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তিল তিল করে জ্বলানি সেক্টরের উন্নতি তিনি যেভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে করেছেন, সেটাতে দুশ্চিন্তার ক্ষেত্র হওয়ার সুযোগ দিতেন না।   

এখন বড় সমাধান কী সেটাও হয়তো প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানেন। কিন্তু ডলার সংকটের এমন মুহূর্তে যত শিগগিরই ন্যূনতম বকেয়া পরিশোধ করে গ্যাস সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখতে হবে। এ ভিন্ন উপায় নেই। দেনা পরিশোধ না হলে আমেরিকান কোম্পানি শেভরন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন কাজ করতে পারবে না। জানি না বিপিসির তেল কেনা বাবদ কত দেনা জমা পড়েছে? কয়লা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহে সংকট হবে কি না?

সন্দেহ নেই যে, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে পেট্রোবাংলা এখন লাভ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ লাভ তেমন কাছে আসছে না। কারণ লাভ করছে টাকায়। কিন্তু সেটা দিয়ে তো ডলারের সংকট মেটানো যাবে না। বড় ধরনের আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। ডলারের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়ার চাপ বাড়ছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, শেভরন এক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল শর্ত দিয়েছিল। শেভরন চেয়েছিল পরিচালন ব্যয় মেটাতে পেট্রোবাংলা যাতে মাসে অন্তত আড়াই কোটি ডলার করে বিল দেয়। তাহলে তারা সব ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু পর্যাপ্ত ডলার না পাওয়ায় পেট্রোবাংলা পুরো অর্থ দিতে পারছে না। এক কোটি বা দেড় কোটি ডলার করে মাসে পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে প্রতি মাসেই বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। সংকটটা এখানেও। 

যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মিডিয়ায় বলেছেন, ‘ডলারের সমস্যা ছিল। এটি নিয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, শেভরনের বিল পরিশোধ শুরু হয়েছে। অন্যদের বিলও দেওয়া হচ্ছে। ডলার নিয়ে আর সমস্যা হবে না।’ মূল কথা যেটা বলবো, তা হলো দেশে এখন রিজার্ভ প্রান্তিক পর্যায়ে। সামনে আইএমএফর কিস্তি পেতে একটা গাইডলাইন রয়েছে। সেটা বিবেচনায় ওই গাইডলাইন ঠিক রাখতে হলে রিজার্ভ থেকে অর্থ রিলিজ কষ্টসাধ্য ব্যাপার নিঃসন্দেহে। কিন্তু এ প্রসঙ্গটাও অত্যন্ত জরুরি। সব মিলিয়ে বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী সব সংকটের সঠিক সমাধান বের করেছেন। সমাধানও দিচ্ছেন, ফলে এটাও তিনি করবেন এ আত্মবিশ্বাস আছে।   

শেয়ার করুন