বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নির্বাচন তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে মনোয়নপত্র জমাদানের সময় শেষ হয়ে গেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগসহ নির্বাচন কমিশন তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। বেশকিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সেখানে শাসক দলের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর দলছুট সদস্য রয়েছে। চলছে যাচাই বাছাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বিরোধীপক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের বিরুদ্ধে এমন কোনো গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পারেনি যে, নির্বাচন বন্ধ বা পিছিয়ে যেতে পারে। নির্বাচন বর্জনকারীরা নিরূপায় হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিকে চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্থ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক মহল যদি কোনো কঠোর নির্দেশনা আসে-স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না গত ১৫ বছরে ক্রমাগত তিন টার্ম ক্ষমতায় থেকে সরকারের অনেক অর্জনের পাশাপাশি অনেক ব্যর্থতা আছে। কিন্তু তাই বলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ বিষয়ে সরকার প্রধানের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করতেই হবে। দেশের অর্থনীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু অতিমাত্রায় আমলা নির্ভরতার কারণে এবং একশ্রেণির সরকার ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেটের তৎপরতায় দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, যাতায়াত, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, শিল্পবাণিজ্য সব মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেনি।
দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে হয়ে গেছে। অবাধ মেধা পাচার দেশকে মেধাশূন্য করে ফেলেছে। মেধাবী তরুণদের বিশাল অংশ সুযোগ পেলেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি তাই এখন ভঙ্গুর, জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় এবারের নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক হওয়া একান্তই বাঞ্ছনীয় ছিল। দেশি-বিদেশি নানা মহলের ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও মূল বিরোধীদল নির্বাচনে না আসায় সংকট কেটে গেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। এমনিতেই অর্থনীতি ভঙ্গুর। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কমে যাচ্ছে রফতানি আয়। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পকারখানাসমূহ পরিচালনা চ্যালেঞ্জের মুখে। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো দেনার দায়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। ২০২৪-২০২৫ সালে দেশে ঘোরতর জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা। এমতাবস্থায় নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলের বিবেচনায় স্বচ্ছ, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক না হলে সংকটে পড়তে পারে দেশ।
দেশে বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধীদলের নির্বাচন প্রতিরোধ বিষয়টির নেতিবাচক দিক ভালো ঠেকছে না। কোনো রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন নির্বাচন থেকে দূরে থেকে টিকে থাকতে পারে না। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে না এসে ভুল করেছিল। এবারও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতিবাচক অবস্থানের কারণে দলে ভাঙ্গনের সূচনা হয়েছে।
শাসক দলের সুযোগ হয়েছে একচেটিয়া নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করার। নির্বাচন হয়ে গেলে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নির্বাচিত সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ফেলতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা কি হয়। তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।