২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


পরিকল্পিতভাবে জাপাকে সাইজ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
পরিকল্পিতভাবে জাপাকে সাইজ


জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রতি পুরোপুরি আস্থা, বিশ্বাস না থাকায় মাত্র ২৬টি আসনে সমঝোতা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন সমঝোতা নিয়ে বড়ো ধরনের হোঁচট খেয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অংশ নিচ্ছে। এর চেয়ে বেশি আসন নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করে দলের শীর্ষরা চুপসে গেছে। এধরনের পরিস্থিতিতে দলটি ভবিষ্যতে কি প্রধান বিরোধী থাকবে না সাদামাটাভাবে অবস্থান করবে তারও নিশ্চয়তা মিলেনি। এমন সব খবর মিলেছে গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মধ্যে আসন ভাগাভাগির সংবাদ সংগ্রহে পর্যবেক্ষণে। 

পিছনে আছে আওয়ামী বাঘ ‘স্বতন্ত্র’ 

পুরোপুরি আস্থায় না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগে ২৬টি আসনেই সমঝোতা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এর পাশাপাশি রাখা হয়েছে স্বতন্ত্রদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের এই ২৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জন্য নৌকা প্রতীক ছাড় দেওয়া হলেও পেছনে রাখা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে যা জাপাকে বড়ো ধরনের ধাক্কা দিচ্ছে মাঠে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ের তাদের সমঝোতার ২৬ আসনেই জয়ীর ব্যাপারে শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না। 

যে সব কারণে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠিততব্য আগামী ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছে না। দলটি আদৌ নির্বাচনের মাঠে থাকবে কি-না সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সন্দিহান। আর একারণে ২৬ টি আসন দিয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিয়ে আওয়ামী লীগ। কেননা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাপা)’র আগে ভাগেই বড়ো ধরনের পরিকল্পনা আছে। তারা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা মতে এগুচ্ছে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলটি কখন কি করে বসে আওয়ামী লীগ এনিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। তারা মনে করে জাপা নির্বাচনের আগে একটি প্রতিবেশী দেশের বড়ো ধরনের আস্থা অর্জন করেছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, জাপা’র চেয়ারম্যান জি এম কাদের নির্বাচনের আগে একটি দেশের বিশেষ আমন্ত্রণে সেখানে সফর করেছেন। যদিও সেই দেশটির আস্থায় বা গুড বুকে মাঠের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি’র এখনো আসতে পারেনি। বিএনপি’র সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে পরিচিত জামায়াতের সর্ম্পকের কারণে ভারত মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে এখনও। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের সাথে এই সর্ম্পক নিয়ে বিএনপি তেমন মাতামাতি না করলেও দলের একটি আংশ এদের আবারও কাছে টানতে চায়। আর এসব কারণে জাতীয় পার্টি বিশেষ করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রতি বেশি আস্থা প্রতিবেশি দেশটির। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের প্রতি এমন আস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। 

বেশি আসন নিয়ে বিরোধী দল হওয়ার আশ্বাস

জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, ভারত থেকে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঘুরে আসেন এবছরের আগস্টে। চার দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় ফিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে সময়মতো একটি সুন্দর নির্বাচন চায় ভারত। এবং তারা চায়, নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে যাতে কোনো ক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়। কিন্তু এমন বক্তব্যের পর সবচেয়ে বেশি রহস্যের সৃষ্টি করে আরেকটি বিষয়ে। তা হলো জি এম কাদের জানান, তাঁরা বলেছেন (ভারত) তাকে, যেহেতু জাতীয় পার্টির সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাই সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সবাইকে একসঙ্গে করে, সুন্দর একটা নির্বাচন করতে পারলে তারা খুশি হবেন। তবে রহস্য আরও ঠেকেছে যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে জি এম কাদের বলেন, ভারতে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কার কার সঙ্গে সে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং কী বিষয়ে হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না।

তাহলে কি সে-ই আলোচনা

সাংবাদিকদের প্রশ্নে জি এম কাদের কিছু না বললেও দলের বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানান, তাদের দল জাতীয় পার্টির (জাপা)কে প্রতিবেশী দেশটি থেকে বড়ো ধরনের আশ্বাস পেয়েছে। বলা হয়েছে জাপা এবার বড়ো ধরনের আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেবে। সংসদে প্রায় সত্তরটি আসন পাবে এবারের নির্বাচনে। এর পাশাপাশি একটি বড়ো ধরনের আশ্বাস মিলেছিল। তা হলো জাতীয় পার্টির (জাপা)’কে অতীতে যেভাবে রাজনৈতিক প্রশাসনিভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা করতে পারবে না। অর্থ্যাৎ সংসদে রাজপথে বাংলাদেশে প্রকৃত একটি প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাবে জাতীয় পার্টি। সে ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়।

কিন্তু সব আশা প্রত্যাশা শেষ

এমন সব আশ্বাস পেয়ে ভারত থেকে জাতীয় পার্টির (জাপা)’ চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঘুরে আসার পর বেশ ফুরপুরে মেজাজেই ছিলেন। খুব একটা দলের কার্যালয়েও আসতেন না। ধারণা করা হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) বিশেষ করে এখন আর কারো চোখ রাঙানিতে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে কাহিল করতে পারবে না। কিন্তু সব ভেস্তে গেছে। অর্থ্যাৎ সত্তর নয় ২৬ আসন নিয়ে জি এম কাদেরকে চুপ থাকতে হয়েছে। মেনে নিতে হয়েছে নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার যা তার রাজনৈতিক জীবনে খুবই অস্থস্তিকর বলেই অনেকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। 

পরিকল্পিতভাবে জাপাকে সাইজ 

জাপা’র একটি সূত্র জানায় আওয়ামী লীগ আসলে জাপাকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এরা যে শুধু নির্বাচনের আগেই ঝামেলা করতে পারে তা-কিন্তু নয়। ধারণা করা হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগেও যেমন জাপা আওয়ামী লীগের কাছে নিরাপদ না, তেমনি ক্ষমতাসীন আমলেও হবে না। আর এজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরেও যেনো জাপা পুরোপুরি স্যান্ডউইচ সাইজে থাকে সে ব্যবস্থাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করেছে বলে সূত্র জানায়। আওয়ামী লীগ জাপাকে সাইজ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিশেষ একটি বাহিনী ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে পরে বিশাল বহর নিয়ে বিরোধী বনে গেলে এই জাপা কোন রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে সে ব্যাপারেও সজাগ আওয়ামী লীগ। সত্তর বা তার অধিক আসন পেয়ে সংসদে জাপা’র আচরণ ‘আমি কি হনু রে” হয় কি-না সে ব্যাপারে সর্তকতার সাথে রাজনৈতিক চাল দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

শেষ কথা : কি করবে

এখন প্রশ্ন এমন হম্বিতম্বি দিয়ে জাতীয় পার্টি প্রমাণ করতে চেয়েছিল তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা ফ্যাক্টর। প্রমাণ করতে চেয়েছিল তারা আওয়ামী লীগকে এবার মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র ভয় দেখিয়ে চাপে রাখতে পারবে। কিন্তু সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে জাতীয় পার্টি কার্যত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চালে পুরো সাইজ হয়ে গেছে। দলটি পুরোপুরি স্বাধীনভাবে চলাচলের ক্ষেত্রে অতীতের মতোই যে তিমিরে ছিল সেখানেই যে আছে তা পুরোপুরি স্পষ্ট। পর্যবেক্ষক মহল এর কারণ হিসাবে মনে করেন, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি যেনো কোনো ধরনের ছল-চাতুরির আশ্রয় নিতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ আওয়ামী লীগ। এসব কারণেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জাপা’র সাথে পরিকল্পিতভাবে মাত্র ২৬ আসনে সমঝোতা করেছে। আবার সমঝোতার ক্ষেত্রেও নেয়া হয়েছে আরেক কৌশল। যেসব আসনের জাপা’র প্রার্থীরা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে তাদের (আওয়ামী লীগ) বলয়েই থাকে এবং থাকবে তেমনদেরই বাছাই করা হয়েছে। আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এধরনের কৌশলে হাত-পা বাধা বন্দী জাপা এখন কি করবে তা ভবিষ্যত বলে দিতে পারে।

শেয়ার করুন