২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৪২:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


খালেদা জিয়ার কঠোর অবস্থান
হঠাৎ চাঙ্গা বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
হঠাৎ চাঙ্গা বিএনপি অতি সম্প্রতি প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মী/ফাইল ছবি


সরকারের সাথে সিট ভাগাভাগি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা নিয়ে সমঝোতার ব্যাপারে সাফ না বলে দেয়ার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙ্গা ও আরো আন্দালনমুখী। এর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার দৃঢ় মনোবলের খবরেও উৎফুল্ল তারা। 

সম্প্রতি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সরকারের সাথে কোনো ধরনের আপোষ করতে কঠেরাভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার নেতাকর্মীদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। বলেছেন, তারা অনেক ধৈর্য ধরেছে। অনেক কিছু হারিয়েছে। তাই তাদের (সরকার) সাথে কোনো সমঝোতা হবে না। সমঝোতায় গেলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশবাসি বিএনপির নেতাদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করবে সমর্থক ও কর্মীরা। 

প্রায় এক বছর পর ঈদের দিনে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তিনি সরকারের সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের সমঝোতা করে সিট ভাগাভাগির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া তার দেয়া বক্তব্যের ব্যাপারে সাফ সাফ বলে দিয়েছেন তিনি যা যা বলছেন তা জেনে বুঝেই বলেছেন।

 এব্যাপারে অন্য কারো পরামর্শ বা নির্দেশ শোনার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে তার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান।

দলে সুপ্রিম কমান্ড প্রতিষ্ঠা ও চাঙ্গাভাব 

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সিনিয়র নেতারা একধরনের কোণঠাসা ছিল দলে ভেতরে ও বাইরে। তাদের মধ্যে হতাশা ছিল যে এক সময়ের সব আন্দোলনের সহযোদ্ধা বুঝি ধীরেধীরে দলের হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। কেননা সরকারের একটি অংশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপির সিনিয়রদের পাশাপাশি সর্বস্তরের নেতাকর্মী কর্মীদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল যে,দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের আর কেউ না। বিএনপিতে হাল ধরার কেউ নেই। 

অন্যদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও দলের হাল ধরতে পারছেন না বলে প্রচারণা চালায় বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও সারা দেশে তারেক রহমান বিভিন্নভাবে দলকে চাঙ্গা রেখে দলের সাংগঠনিক ভিতকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। তারপরে দলে ভেতরে বাইরে একটা গুমোট ভাব ছিল এই বলে যে বিএনপি এখন মুরুব্বি ছাড়া, কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর থেকে তার পক্ষ থেকে পাওয়া দিকনির্দেশনা পেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়রা এখন একটা ভরসার জায়গা পেয়েছেন বলে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে। 

আর হঠ্যাৎ করে যেনো তাদের মুখে খৈ ফুটেছে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বেশ জোরেশোরে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকে প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পরই এক সমাবেশে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসন ভাগাভাগির পরিকল্পনা হচ্ছে। এ অভিযোগ করে তারা আসন ভাগের নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না এবং যারা তাতে অংশ নেবে, তাদেরও প্রতিহত করবেন হুংকার দেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীন কোনো নির্বাচন হবে না। আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না।

আসন ভাগের নির্বাচনে যারা যাবে, সরকার ও তাদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেছেন, ‘প্রতিবেশী ও বাংলাদেশ সরকারের কতিপয় লোক ফেরি করে বেড়াচ্ছে- কাকে কয়টা আসন দিয়ে নির্বাচনে নেবে। এ অধিকার কে দিয়েছে?’আসন বণ্টনকারী এই দালালদের ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা সরকারের ফাঁদে পা দেবে, তাদের প্রতিহত করতে হবে।


কর্মীরা চাঙ্গা কর্মসূচি, বেড়েছে উপস্থিতি

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করার পর থেকে বিএনপিতে বেশ চাঙ্গাভাব লক্ষ করা গেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। তার প্রতিফলন দেখা গেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি সমাবেশে। এসপ্তাহে জেলায় জেলায় বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে শনিবার বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ‘দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ গত ১৪ মেজেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে নাটোর, নড়াইল ও চট্টগ্রামে কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

 নাটোরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় দুই ছাত্রদল নেতা আহত হয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের দল ভোটের মাঠে থাকবে। চোরের মাঠে থাকবে না। দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ৮০ ভাগ আসন পাবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনা হবে। মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের ঘরে রাখা যাবে না।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এ সরকারকে বাধ্য করা হবে। একইসঙ্গে আগামী দিনে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচি থেকে। দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বক্তব্য রাখেন। 

শেষ কথা

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর থেকে তার পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানের খবরের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এভাবে সারা দেশে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়াকে নেতা-কর্মীরা ভরসার জায়গা পেয়েছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আর এজন্য মাঠে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের ঐক্য লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ ধরনের ঐক্য ধরে রাখতে সামনে বিএনপিকে অনেক পরীক্ষায় পাশ করতে হবে বলে কেউ কেউ মনে করেন।


শেয়ার করুন