২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৫৯:৪০ অপরাহ্ন


পশ্চিমাদের এ্যাকশনে আগ্রহ বিএনপির, দুশ্চিন্তায় আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
পশ্চিমাদের এ্যাকশনে আগ্রহ বিএনপির, দুশ্চিন্তায় আ.লীগ


বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে পশ্চিমারা কি করে বা করতে যাচ্ছে তা দেখার অধীর অপেক্ষায় মাঠের প্রধান বিরোধী দলের আন্দোলনরত সাথে সমমনা দলগুলি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সার্বক্ষণিক ব্যস্ত আছে পশ্চিমাদের সম্ভাব্য পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে রাখতে। সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি উদ্বিগ্ন হয়ে এখন দেশের ভেতরে ও বাইরে ঐক্যের ডাক দিচ্ছে। এর পাশাপাশি পশ্চিমারা কখন কি করে বসে সে বিষয়ে কূটনৈতিক নজরদারি বাড়িয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

বিএনপি কি চুপচাপ?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবার পর থেকে দৃশ্যত বিএনপি’কে চুপচাপ মনে হচ্ছে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। কারো মতে, বিএনপি চুপসে গেছে, কিংবা রাজনৈতিকভাবে বড়ো ধরনের হোঁচট খেয়েছে। কারো কারো মন্তব্য এমন বিএনপি প্রচন্ড হতাশায় ভুগছে। বলা হচ্ছে, বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছে।

জাপাই বিএনপি’র মনোবল চাঙ্গা করেছে

রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি’কে নিয়ে যখন এমন হাসি তামাশা চলছে তখন দলের বেশ কয়েকজন নেতা এই প্রতিনিধিকে ভিন্ন তথ্য দেন। তাদের ভাষ্য বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হতাশায় নেই। বরং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তারা বেশি উৎফুল্ল। তাদের ভাষ্য হচ্ছে এধরনের ডামি বা পাতানো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তই যুগান্তকারী। তাদের ক্ষোভ ২০১৮’তেও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে আজ এমন পরিস্থিতি হতো না। বিএনপি’র এই মতের অধিকারীদের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপি’কে আসলে বাঁচিয়ে রেখেছে জাতীয় পার্টির আফসোস হায় হুতাশ। তাদের মতে, একটি প্রতিবেশী দেশ জাপার চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বুঝিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায়। বলা হয়, জাপাকে ক্ষমতায় বসানোর মাস্টার প্লান আছে তাদের। মুলা ঝুলিয়ে দেখানো হয় আপাতত বেশি সংখ্যক আসনে বিজয়ী করে আনা হবে। আশ্বাস দেয়া হয় যে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে বসানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা-তো হয়ই-নি বরং পাল্টা দলটির অবস্থান এখন খুবই অসম্মানজনক অবস্থায় আছে। এখন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলে বেড়াচ্ছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ৭ জানুয়ারির ভোট শেষ না হতেই সরকার কথা রাখেনি বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের । বলেছেন, “নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছিলাম কিন্তু সরকার আমাদের যে কথা দিয়েছিল, সেই কথা রাখেনি।” আবার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তা আমি বলতে পারছি না। তবে আমার মূল্যায়নে সরকারের নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কথা না- এসব বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি’র ওই নেতা দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, এমন নির্বাচনে না গিয়ে তাদের দল (বিএনপি)’র লাভের পাল্লা ভারি করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে সরকার আরো ভয়ংকর খেলা খেলতো। তার মতে, বিএনপি’কে ১০ থেকে ১২ আসন দিয়ে জাপাকে এর চেয়ে আরেকটু বেশি দিয়ে তাদেরকে (জাপা) সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসিয়ে আমাদের (বিএনপি)’র রাজনীতি চিরতরে ধবংস করে দিতো। অথবা শর্ত জুড়ে দিয়ে আমাদের দলকে (বিএনপি) সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনটি দেয়া হতো। সেকারণে বিএনপি’কে এখন বলাবলি হচ্ছে জাপা’র সর্বনাশ দেখে তাদের (বিএনপির) নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের হতাশা বা ক্ষোভ নেই। 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও বিএনপি’র পক্ষে

তাছাড়া বিএনপি’র পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া তাদের (বিএনপি’র) পক্ষেই গেছে। তাদের মতে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য প্রায় একিই সময়ে বিবৃতি দিয়েছে। কূটনৈতিক অঙ্গনে এটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ যখন এই দু’টি দেশ কোনো ঘটনায় একিই সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেটা এবার ঘটেছেন ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এটি তাদের মতে সুষ্ঠু হয়নি। গণমাধ্যম প্রকাশিত খবরে দেখা যায় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এতে বলা হয় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদন্ড অনুযায়ী হয়নি বলে অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। 

নির্বাচনের সময় এসব মানদন্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। ভোটের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন- এসব বিষয় তুলে ধরে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, বিএনপি এখন সত্যিই অপেক্ষায় দেখা যাক পশ্চিমারা কি রিয়েক্ট করে। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে তারা আপাতত দম নিবে। এর পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। কেননা তাদের মতে, সর্বশেষ জাতিসংঘও একিই রকম কথা বলেছে। প্রকাশিত খবরে বিষয়টি আরো পরিস্কার যে আর্ন্তজাতিক অঙ্গন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ভালোভাবে নেয়নি। কেননা আবারও বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলেছে জাতিসংঘ। 

স্থানীয় সময় সোমবার (২২ জানুয়ারি) জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ফের উঠে আসে নির্বাচন ইস্যু। তবে এক্ষেত্রে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে সোমবারের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতিসংঘের দেওয়া চিঠির বিষয়ে জানতে চান। কেননা এতে সরকারের পক্ষ থেকে সমসাময়িক বিষয়ে কৃতিত্ব জাহির করে। জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিবের এমন চিঠি নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের পূর্বের অবস্থান এবং নির্বাচন নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাওয়া হয়? জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, এটি সাংঘর্ষিক না। জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন যেমনটা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানরা পুন:নিবাচিত হলে মহাসচিব পাঠিয়ে থাকেন।

উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যর কথা বলছেন

যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অতি সম্প্রতি বলেই ফেললেন যে তার সরকার কারো নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা করে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এই সরকার যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সে জন্য তারা (বিরোধী দল) তাদের বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো নিষেধাজ্ঞা বা ভিসা নীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা বুঝে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান দায়িত্ব পেয়েই বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে সুসম্পর্ক এবং সেই নীতি নিয়েই আমরা সবার সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলবো ।

প্রশ্ন তাহলে এখনো কি করছে ইইউর বিশেষজ্ঞ দল?

আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিশেষ করে পশ্চিমারা আসলে কি করবে তা দেখতে কারো কারো অভিমত মাস দু’য়ে লাগবে বলে দক্ষ কূটনীতিকরা মনে করেন। প্রশ্ন হচ্ছে পশ্চিমারা যদি চুপচাপই থাকতো এবং সব ঠিক হয়ে যেতো তা-হলে কেনো এভাবে বললেন যখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে বলেছেন, যেমনটা বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানরা পুনঃনির্বাচিত হলে মহাসচিব পাঠিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কি সব কিছু মেনে নিয়েছে? বা নেবে? তাহলে সেটা কার স্বার্থে? 

বিশ্লেষকদের মতে, এমন যদি হয় তাহলে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে কেনো জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দলসহ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই)? সম্প্রতি ইইউর বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরাও ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানে ভোটের হার নিয়ে জানতে চাওয়া হয় বলে ইসি সচিবালয় সূত্র গণমাধ্যকে জানিয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, ইইউর দলটি এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। তাদের সব তথ্য বিস্তারিতভাবে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন এরপর কি হবে? তথ্য উপাত্ত ঘেটে তুলে ধরা হবে বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়ার নেপথ্যে? আর এসব কারণ বিশ্লেষণ করেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন আওয়ামী লীগ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন যদিও তা মুখে প্রকাশ করতে পারছে না।

শেয়ার করুন