২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৪০:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশকে ইরেশ যাকের
ইচ্ছে করলেই পরিচালনায় যাওয়া উচিত না
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৮-২০২২
ইচ্ছে করলেই পরিচালনায়  যাওয়া উচিত না ইরেশ যাকের। মডেল ও অভিনেতা/ফাইল ছবি


ইরেশ যাকের। মডেল ও অভিনেতা। দর্শকের কাছেও তিনি জনপ্রিয়। নিয়মিত কাজ করছেন সিনেমা, নাটক আর ওয়েব সিরিজে। সম্প্রতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন পরিচালিত ‘চাঁদের অমাবস্যা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের। ব্যক্তিজীবন ও কর্মমুখর ব্যস্ত জীবন নিয়ে ইরেশ যাকের কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। 

প্রশ্ন: সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি সিনেমা নিয়ে এখন খুব আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ইরেশ যাকের: দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের সিনেমার অকাল চলছিল। সেই জায়গা থেকে মুক্তি মিলেছে এবারের ঈদে। ‘পরাণ’ সিনেমাটি দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। সেই উত্তাপ শেষ না হতেই ‘হাওয়া’ নামের আরেকটি সিনেমা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। এটা আমাদের সিনেমার জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। 

প্রশ্ন: কিন্তু এতোদিন ভালো কেন ভালো করা যায়নি। সবাই তো ছিলেন। দায়টা কার?

ইরেশ যাকের: আমরা সামাজিক প্রাণি। ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে কী করবো, সেখানে শুধু নিজস্ব চাহিদা নয়, অন্যদের চাহিদা ও প্রত্যাশা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে কারণেই আমাদের অনেক সময় এমন সব কাজ করতে হয়, যেগুলো হয়তো আমরা নিজেরা চাই না। কিন্তু আশপাশের মানুষকে খুশি করার জন্য আমাদের করতে হয়। সমাজের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য করতে হয়। কিন্তু এতেই বাঁধে বিপত্তি। অনেক সময় ভালো করতে গিয়ে হয় মন্দ। সেরকম কিছু ঘটেছিল বলেই হয়তো দর্শক এতোদিন ভালো কিছু পায়নি। 

প্রশ্ন: চাঁদের অমাবস্যায় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন।

ইরেশ যাকের: উপন্যাসটি অসাধারণ। আর এ উপন্যাস থেকে নির্মিত সিনেমায় কাজ করা অবশ্যই আমার জন্য অন্য রকম ছিল। বেশিরভাগ সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা যায় সংলাপের ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটার গল্প এগোয়। তবে চাঁদের অমাবস্যায় পরিবেশটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা যায়, এ সিনেমার একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র চাঁদ। আমরা পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে অভিনয় করেছি। আমাদের কাজে এক ধরনের ভিন্নতা ছিল। যে সিকোয়েন্স আমরা ২ মিনিটে করতে পারি সেটা আমরা সচেতনভাবেই সময় নিয়ে করেছি। এর ভেতরে আমরা বিভিন্ন জিনিস উপস্থাপন করেছি। পরিবেশটাকে যাতে গল্পটা সমর্থন করে সেভাবেই আমাদের অভিনয় করতে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় সিনেমাটি দেখতে গিয়ে দর্শকের নতুন অভিজ্ঞতা হবে।

প্রশ্ন: এ সিনেমায় আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই।

ইরেশ যাকের: চাঁদের অমাবস্যায় হিরো বা ভিলেন চরিত্র বলে কিছু নেই। তবে এখানে অ্যান্টি-হিরোর চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। এটা খুব বিখ্যাত একটা গল্প। এখানে একটা ঘটনা ঘটে যেটা ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে, সেটা আমার চরিত্রটাই ঘটায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সিনেমাটা।

প্রশ্ন: প্রথমবার অ্যান্টি-হিরোর ভূমিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ইরেশ যাকের: প্রথম কবে অ্যান্টি-হিরোর চরিত্র করেছি এটা আসলে মনে নেই, তবে হতে পারে এটা ২০০৯ সালের দিকে অনিমেষ আইচের প্রাইভেট টিউটর নাটকে। এটাকে ভিলেন চরিত্র বলা যাবে না, এখানে একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের চরিত্রে কাজ করেছিলাম। আমি এটা খুব উপভোগ করেছিলাম। পুরোপুরি ভিলেনের অভিনয় কবে করেছি ভুলে গেছি, কিন্তু এটা বলতে পারি শুরুর দিকে এটা আমার খুব ভালো লাগত। শুরুর দিকে আমাকে সবাই সহজ সরল চরিত্রগুলো দিত। এটা করতে করতে একটা পর্যায়ে আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে যখন বিভিন্ন ধরনের চরিত্র পেতে থাকলাম, খুবই ভালো লাগত কাজ করতে। আমি এখন চেষ্টা করছি ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার।

প্রশ্ন: সামনে দর্শক আপনাকে কোন কাজে দেখতে পাবে?

ইরেশ যাকের: কাজল রেখা নামের একটা সিনেমায় আমি কাজ করছি। এবারের ঈদ আমি কোনো কাজ করিনি। আমার যেহেতু অফিস থাকে আর আমার মেয়েকেও সময় দিতে হয়। সব মিলিয়ে আমি আর সময় পাই না। তাই আমার পরিকল্পনা রয়েছে একটা কাজ শেষ করে অন্য কাজ করার।

প্রশ্ন: পরিচালনায় আসছেন কবে?

ইরেশ যাকের: এটা খুবই কঠিন কাজ। আমি ফটোগ্রাফি করি আর অভিনয় করি। সবারই একটা সুপ্ত বাসনা থাকে পরিচালনায় যাওয়ার। তবে আমি একইসঙ্গে এটা মনে করি যে ইচ্ছে করলেই পরিচালনায় যাওয়া উচিত না। যদি করতেই হয় তাহলে অনেক প্রস্তুতি নিয়ে করতে হবে। যদি আমি সে প্রস্তুতি নিতে পারি, তাহলে অবশ্যই পরিচালনা করার চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন: ব্যক্তিজীবনের একটি বড় অংশ অভিনয়। অন্যদিকে পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়ে। এর পেছনের গল্পটা কী?

ইরেশ যাকের: আমরা যখন দেশের বাইরে পড়তে যাই, তখন যে বিষয়গুলোর ভালো ভবিষ্যৎ আছে সেটাতেই পড়ি। আমার পড়াশোনার বিষয় ছিল ইকোনমিকস, অ্যানথ্রোপোলজি অ্যান্ড ম্যাথ। আমার অভিনয় করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পরে বাংলাদেশে এসে দুই বছর ভয়েস অ্যাকটিং করার পর একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আমি কেন অভিনয় করছি না। এভাবেই আমার আসলে অভিনয়ে আসা।

ইকোনমিকস নিয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই পড়েছেন। আসলে আমাদের সময় নিজের ইচ্ছায় পছন্দ করে পড়ব এমন ভাবনা ছিল না। বাবা আমাকে সবসময় বলতেন তুমি যেটা ভালোবাসো সেটা করো। আমি আসলে সামাজিক মূল্যবোধের কারণে ওই সময়ে ইকোনমিকস পড়েছিলাম। আমার হয়তো ফিল্ম বা ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়া উচিত ছিল। আমার কন্যার বিষয়ে আমি চাইব সে যে বিষয়ে প্যাশেনেট সেটা নিয়েই যেন পড়ে। ওই সময়ে আমাদের মাথায় কাজ করত যে ইকোনমিস নিয়ে পড়লে ব্যাংকে কাজ করা উচিত। কিন্তু বর্তমানে নিজের যে প্যাশন সেটা নিয়েই পড়া উচিত এবং সেভাবেই কাজ করলে ভালো হয়। আশা করি আমার মেয়ের ক্ষেত্রে এ ভুল করব না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকা আলী যাকের স্যার। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তার স্মৃতিরক্ষায় পারিবারিকভাবে কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে কি?

ইরেশ যাকের: উনি যে কাজগুলো করেছেন সেগুলোয় তিনি আছেন। তবে আমরা আমাদের মতো করে অন্য কিছু করার কথা ভাবছি। আমরা ফ্রি গ্যালারি করার পরিকল্পনা করছি, যেখানে মানুষ ছবি, ভাস্কর্য প্রদর্শন করতে পারবে। বাবার স্মরণে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করব। বাবার ফটোগ্রাফি নিয়ে একটা বই বের করছি। একটা ফাউন্ডেশন করার পরিকল্পনাও চলছে। তার স্মৃতি যাতে বাংলাদেশে টিকে থাকে সেটা মাথায় রেখে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।

 

শেয়ার করুন