২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:০৪:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


ফেডারেল কোর্টে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় বাইডেন জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার শুনানি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
ফেডারেল কোর্টে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় বাইডেন জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার শুনানি বিবাদী প্রেসিডেন্ট বাইডেন, সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং সেক্রেটারি অব ডিফেন্স অস্টিন


ফিলিস্তিনিনের গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক গণহত্যা, অবরোধ ও নির্বিচারে ফসফরাস বোমার ব্যবহারে ইসরায়েলকে আরো অস্ত্র, অর্থ, ব্যাপক সামরিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান থেকে বাইডেন প্রশাসনকে বিরত রাখতে দায়ের করা মামলার প্রাথমিক শুনানি গত ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার শেষ হয়েছে। সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনার রাইট (সিসিআর) বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিক কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালির্ফোনিয়ার আদালতে এই মামলার দায়ের করা হয়। গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণের জন্য মার্কিন সামরিক এবং কূটনৈতিক সমর্থন বন্ধ করার জন্য আদালতের কাছে একটি ইমার্জেন্সি আদেশ দিতে আবেদন করা হয়। যার মধ্যে ইসরায়েলি সরকারকে আরো অস্ত্র এবং অর্থ হস্তান্তর বন্ধ করা। মামলাটির শুনানি হয় ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনিয়র জজ জেফ্রি এস হোয়াটের এজলাসে।

মামলার বাদীরা হলেন-ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন এবং আল-হক, মার্কিন নাগরিক আহমেদ আবু আর্তেমা, ডা. ওমর আল-নাজ্জার এবং মোহাম্মদ আহমেদ আবু রোকবেহ। মার্কিন নাগরিকদের পরিবার যারা গাজায় বসবাস করেন, তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মোনাদেল হারজাল্লাহ, লায়লা এলহাদ্দাদ, ওয়াইল এলভাসি ফেডারেল কোর্টে এবং বাসিম এলকারের পক্ষ থেকে সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনার রাইট (সিসিআর) বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিক কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালির্ফোনিয়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন, সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং সেক্রেটারি অব ডিফেন্স অস্টিনকে বিবাদী করা হয়েছে।

আদালত শুনানিতে সাত সিভিল রাইটস, হিউম্যান রাইটস ও প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন ও প্রাক্তন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা জশ পলকে অ্যামিকাস কিউরি (আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন। আট অ্যামিকাস কিউরি আদালতে তাদের আইনি মতামত উপস্থাপন করেন। মতামত উপস্থাপন করা আট অ্যামিকাস কিউরি হলেন-এ জুইশ ভয়েস ফর পিস, কাউন্সিল ও আমেরিকান -ইসলামিক রিলেশনস ক্যালিফোর্নিয়া (কেয়ার-সিএ), আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি কমিটি, আরব রিসোর্সে অর্গানাইজিং সেন্টার, আরব আমেরিকান সিভিল রাইটস লিগ, ইন্টারন্যাশনাল এইচ আর ও, পলিস্টিনিয়ান জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট, মেডিকেল প্রফেশনালস, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস অফ নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়া।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে অংশ নেন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস সিভিল ডিভিশনের স্পেশাল লিটিগেশন কাউন্সিল জিন লিন ও ট্রায়াল অ্যাটর্নি জনাথন কসাক। বাদীদের পক্ষ থেকে অংশ নেন সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস অ্যাটর্নিরা, ভ্যান ডার হাউট এলএলপির সহ-কাউন্সিলরা বাদীদের পক্ষে মামলার শুনানি করেন এবং মামলাটি খারিজ করার জন্য সরকারের সব প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন। শুনানিতে একজন বাদী গাজা থেকে স্কাইপির মাধমে সাক্ষ্য দিয়েছেন, একজন রামাল্লা থেকে এবং পাঁচজন বাদী আদালতে লাইভ উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকা- একটি গণহত্যা। সেক্রেটারি অব স্টেট ব্লিঙ্কেন এবং ডিফেন্স সেক্রেটারি অস্টিনের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যা প্রতিরোধে এবং তাদের জড়িত থাকা এবং আইনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। মার্কিন প্রশাসন প্রকাশ্য সংগঠিত গণহত্যা রোধ না করে সরাসরি মার্কিন অস্ত্র ও তহবিল দিয়ে সংগঠিত গণহত্যায় সহায়তা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইন, কূটনৈতিক নীতি, গণহত্যা কনভেনশন এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। মামলায় আদালতকে রাষ্ট্রপতি বাইডেন, সেক্রেটারি অব স্টেট ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি অস্টিনকে আইনি বাধ্যবাধকতায় আনতে এবং ইসরায়েলের গণহত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য একটি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করার আবেদন জানান। 

প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার শুনানির সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও বিবাদীদের দাবিগুলো হলো-(১)এই মামলাটি ও বাদীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক কারণ তারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। (২)বাদীরা এই আদালতকে ব্যবহার করে রায়ের মাধ্যমে নির্বাহী শাখার বৈদেশিক নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা তদারকিতে রাখতে চায়, যাতে ইসরায়েলকে গাজায় কথিত গণহত্যা থেকে বিরত রাখতে সরকারকে বাধ্য করে। (৩) মামলাটি জাতীয় ফরেন পলিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। (৪) বাদীদের করা মামলার আবেদন ফেডারেল টর্ট দাবি আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। কারণ বাদীরা এই মামলাটি রাষ্ট্রপতি, সেক্রেটারি অব স্টেট এবং সেক্রেটারি অব ডিফেন্সের বিরুদ্ধে আনেন। (৫) এই আদালতের একটি ব্যক্তিগত কার্যকারণকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো কর্তৃত্ব নেই। এই মামলাটি এটিএসের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। (৬) বাদীদের মামলা করার আইনগত অবস্থান নেই, কারণ তাদের কথিত আঘাতগুলি একটি স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। বাদীদের অবস্থানের অভাব রয়েছে। কারণ তাদের কথিত আঘাতগুলো একটি স্বাধীন বিদেশি সার্বভৌম ক্ষমতার সামরিক ও অন্যান্য কার্যকলাপের ফলাফল। যার ওপর এই আদালতের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তাদের সন্ধানযোগ্যতা এবং প্রতিকারযোগ্যতার দাবির জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম আদালতের জুরিস ডিসিশনকে অনুমান করা প্রয়োজন। এই আদালত আগে দেখতে হবে কীভাবে ইসরায়েল তার সামরিক অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে তার রায় প্রয়োগ করেছে বা করবে। (৭)একটি আদেশ জারি করার বিরুদ্ধে ইক্যুইটি টিপসের ভারসাম্য। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য প্রেসিডেন্ট এই মামলা খারিজের আবেদন করেন।

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে, বৃহৎ আকারে সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বেশি প্রদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার বৃদ্ধি ও অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে যা বাইডেনের প্রশাসন প্রকাশ্যে সমর্থন করছে এবং অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। মামলায় ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ এবং কটূনৈতিক সহায়তা প্রদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা দিতে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন, সেক্রটারী অব স্টেট অ্যান্টনি ক্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনকে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে তাদের ক্ষমতার মধ্যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদেশ দিতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে চাপ দেওয়া, গাজা ভূখ-ের অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বিতাড়ন রোধ করা।

জশ পল আদালতে দাখিলকৃত একটি ঘোষণায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রচুর পরিমাণে ক্রিটিক্যাল সামরিক প্রযুক্তি, দক্ষতা, সক্ষমতা ক্ষমতা প্রদান করে এবং হস্তান্তর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচেতন যে, এই ক্রিটিক্যাল সামরিক প্রযুক্তি এবং ক্ষমতাগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা হবে যা মার্কিন আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কারণ হবে না। চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক আইনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পালনে ইসরায়েল বিপরীত। ইউএস অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে এই ধরনের লঙ্ঘনের উদ্ভব হলে তা মোকাবিলা করতে ইচ্ছুক এবং করতে সক্ষম। শুধু ইসরায়েলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নীরব। আদালত যদি বাইডেন প্রশাসনকে ইসরায়েলকে এই ধরনের সামরিক স্থানান্তর এবং সহায়তা স্থগিত করার নির্দেশ দেয়, তবে এটি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ওপর প্রভাব ফেলবে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জশ পল যিনি ইসরায়েলকে অব্যাহত মার্কিন সমর্থন এবং অস্ত্র স্থানান্তরের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন।

ড. ব্যারি ট্র্যাচেনবার্গ, একজন গণহত্যা এবং হলোকাস্ট পন্ডিত যিনি অন্যান্য এমিকাসদের সঙ্গে একটি ব্রিফ জমা দিয়েছেন এবং আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালতকে তিন বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে আমেরিকান জনগণের দ্বারা অর্থায়ন করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েল লড়াই করেছে। হোয়াইট হাউস নিষিদ্ধ অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় আরো উৎসাহিত করছে। অতীতে গণহত্যার অনেক পর এটি থামানো হয়, কিন্তু তার আগে এটি থামানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেগুলো শেষ হওয়ার অনেক পরে বিচার করা হয়েছিল। আমাদের কাছে এটিকে থামানোর সুযোগ রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা অনেক বেশি এবং অনেক দিন ধরেই ভুগছে।

সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের অ্যাটর্নি মারিয়া লাহুড আদালতকে বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করছে, এখন পর্যন্ত ৮ হাজারেরও বেশি এবং আমাদের ক্লায়েন্টদের পরিবারসহ বাকিদের ক্ষুধার্ত করছে। কারণ বাইডেন, ব্লিঙ্কেন এবং অস্টিন আরো অস্ত্র দিচ্ছে এবং তাদের থামাতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদিও বিশ্ব এটাকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে দেখছে, শক্তিহীন বোধ করছে, আদালতের ক্ষমতা এবং কর্তব্য রয়েছে গণহত্যা করার। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের যুক্তিগুলো খ-ন করে তিনি আদালতকে ব্যাখ্যা করেন গণহত্যা প্রতিরোধ এবং জড়িত না হওয়ার জন্য আসামিদের আইনি বাধ্যবাধকতা প্রয়োগ করার জন্য আদালতের একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, ইসরায়েল এবং মার্কিন উভয়ই স্বীকার করেছে যে, ইসরায়েলের গণহত্যা মার্কিন অস্ত্র এবং কূটনৈতিক কভার ছাড়া ঘটতে পারে না।

সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের অ্যাটর্নি আস্থা শর্মা পোখারেল আদালতকে বলেন, আমাদের অ্যাটর্নি দলকে আমাদের ক্লায়েন্টদের আত্মীয়দের মৃত্যুর সংখ্যা একাধিকবার আপডেট করতে হয়েছে। কারণ আমরা এই মামলা এবং মোশন প্রস্তুত করার সময়ও তাদের হত্যা করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কতটা জরুরিভাবে প্রয়োজন তার কোনো স্পষ্ট দৃষ্টান্ত নেই। তিনি নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই অভিযোগ দায়ের করার পর বাদী আল হকের আহমেদ পরিবারের কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য নিহত হন।

ইসরায়েলি সরকারের কাজগুলির প্রমাণ করে এটি গণহত্যা এবং গণহত্যা কনভেনশন সংজ্ঞায়িত করে। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গণহত্যার অভিপ্রায় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন এবং দেশটির সামরিক বাহিনী নিরলসভাবে বেসামরিক এলাকা এবং অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৪৮ সালের হলোকাস্টে কনভেনশনে, হলোকাস্টের পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত, গণহত্যাকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে, একটি জাতীয়, জাতিগত, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার অভিপ্রায় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। কনভেনশনের প্রথম প্রবন্ধে গণহত্যাকে ‘প্রতিরোধ ও শাস্তি’ দিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলায় ইসরায়েলের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের তালিকা রয়েছে, যা সিসিআর ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার পরিমাণ বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক মৃত্যুর মাত্রা, পদ্ধতিগত যৌথ শাস্তি এবং ’জীবনের সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চনা’।

অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র হস্তান্তর এবং ব্যবহারের রিপোর্টসহ বিস্তারিত তথ্যও ফাইলিংয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কমপক্ষে ১৫ হাজার বোমা এবং ৫০ হাজারটি ১৫৫ মিমি আর্টিলারি শেল হস্তান্তর করেছে, যা অন্তর্নিহিতভাবে নির্বিচার। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ১৪ হাজার ট্যাংক শেল জরুরিভাবে পাঠানোর জন্য ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং গাজা অবরোধে ৭৬ দিনে ২৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে।

শুনানির পর আদালত বলেন, আদালতে আমরা যে সাক্ষ্যগুলো শুনেছি তা সত্যিই ভয়ংকর। গাজায় কী ঘটছে তার সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। গাজায় কী ঘটছে তা গাজার মানুষ ও ফিলিস্তিনিদের কাছে থাকে আদালত শুনেছে। সাক্ষ্যদানের সময় এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করার সরকারের পক্ষ থেকে গুরুতরভাবে বিতর্ক করা হয়নি বা আপত্তি দেওয়া হয়নি। যদিও ডক্টর ট্র্যাচেনবার্গের সাক্ষ্যের ওপর কিছু নির্দিষ্ট কারণে বিবাদীদের (বাইডেন) আপত্তি ছিল। আমি তার সাক্ষ্য শুনেছি একজন এক্সপার্টের কাছ থেকে। আমি তার সাক্ষ্যে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, কিন্তু সমাজতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক গঠন থেকে শুনেছি। তারা বিশ্বাস করেন যে, একটি গণহত্যা চলছে। 

আমাকে বলতে হবে যে এই বেঞ্চে ২৭ বছরের মধ্যে বাস্তবিকভাবে এটি সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন মামলা। এই আদালতে যতো মামলা হয়েছে, সবচেয়ে কঠিন মামলাগুলোর মধ্যে এটি একটি। আইনগতভাবে আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। যেমনটি আমি শুরুতেই বলেছি এবং আইনজীবীরা যেমন যুক্তি দিয়েছেন। আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আদালতের ক্ষমতার সীমা কী? তাই আমি শুনেছি এবং আমি সেসব সাক্ষী বলতে চাই, যারা সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে এবং জুমের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিয়েছেন, আপনাদের দেখা হয়েছে। আমি আপনাদের সাক্ষ্য বিবেচনা করতে যাচ্ছি। আমি আইন বিবেচনা করবো এবং আইনের মধ্যে আপনাদের দেওয়া তথ্যগুলো প্রয়োগ করবো এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমি আদালতকে সত্যিই সাহায্য করার জন্য উভয় পক্ষের কৌঁসুলিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আদালতকে একটি খুব কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য।

শেয়ার করুন