২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৩১:২৮ পূর্বাহ্ন


প্রবাসে বিভিন্ন সংগঠনের একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০২-২০২৪
প্রবাসে বিভিন্ন সংগঠনের একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করছেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত


প্রবাসেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। একুশের এসব অনুষ্ঠান থেকে প্রবাসে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠাদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে উডসাইডের তিব্বতি সেন্টারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সম্মিলিত একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিাবাগত রাতে উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে। শাহীন কামালী এবং মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় এস্টোরিয়াস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবনে। এছাড়াও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, আঞ্চলিক সংগঠন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, রাত ১২টা ১ মিনিটে অস্থায়ী শহিদ মিনারের পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রবাসে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলিন, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কসসহ অন্যান্য এলাকায় অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে মহান একুশ পালন করা হয়।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস

মহান ভাষা আন্দোলনের সব শহিদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে দূতাবাস বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গকারী সব ভাষা বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দিনব্যাপী এক কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, মার্কিন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্কট উরবম।

রাষ্ট্রদূত ইমরান তার বক্তব্যে মহান ভাষা আন্দোলনের সব শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বাঙালি জাতির ‘বাতিঘর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভাষা সৈনিকদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার উপযুক্ত কূটনৈতিক মাধ্যম হতে পারে। রাষ্ট্রদূত বলেন মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরো জানার জন্য উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি স্কট উরবম বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, গত ৫০ বছরে তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছর এবং এর পরও বাংলাদেশের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আরো দৃঢ় করতে আগ্রহী।

স্কট উরবম বলেন, মাতৃভাষা দিবস শুধু বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়েই নয়, সমগ্র পৃথিবীর মানুষের হৃদয়েও বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে সেসব বীরদের মহান আত্মত্যাগের কথাও উল্লেখ করেন যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বাংলা ভাষা রক্ষায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মার্কিন ভারপ্রাপ্ত উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আজ বাংলা পৃথিবীতে অন্যতম সর্বাধিক উচ্চারিত ভাষা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এবং এটি সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার প্রভাব ও গুরুত্বের প্রমাণ বহন করে।

পরে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দূতাবাস পরিবার, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ফরেন গার্ভিস ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ভারত, নেপাল, জাপান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীরা এবং একটি বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক দল কবিতা আবৃত্তি, সংগীত ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ইমরান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দূতাবাস আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই গৌরবোজ্জ্বল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ও ডিফেন্স অ্যাটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলাম অংশ নেন। রাত ১২টা ০১ মিনিটে দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ‘প্রভাতফেরি’ বের করার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন

গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সদর দফতরে টানা ৮ম বারের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বলিভিয়া রোমানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী মিশনসমূহ, জাতিসংঘ সদর দফতর ও ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস।

এই বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানটিতে বহু ভাষার ব্যবহারে সমৃদ্ধ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, বাহরাইন, বলিভিয়া, রোমানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রিয়া, ভারত, হাঙ্গেরি, পাপুয়া নিউগিনি এবং তানজানিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি/রাষ্ট্রদূতগণ, জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সুশীলসমাজের একজন প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৪-এর মূল প্রতিপাদ্য-‘বহু ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান চর্চার স্তম্ভ’-এর ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ছয়টি দাফতরিক ভাষার পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও রোমানিয়ান ভাষায় প্রদত্ত বক্তব্য ভাষান্তর করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উদ্বোধনী সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি কর্তৃক পরিবেশিত যন্ত্রসংগীত এবং অভিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশিত গান অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাশহিদদের এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশির উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাতৃভাষাভিত্তিক পাঠদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত মুহিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও অন্য বক্তারা জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। মাতৃভাষার জন্য বিশেষ একটি দিন নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষায় শিক্ষা প্রদানকে জ্ঞানার্জন ও মেধা বিকাশের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে, তারা এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে ভাষা ও ভাষাবিষয়ক এনজিও কমিটির সভাপতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, জাতিসংঘ সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। 

জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের পূর্বে সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিশনে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহিদ সদস্য এবং মহান একুশের ভাষাশহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট গত ২১ ফেব্রুয়ারি কনস্যুলেট ভবনে এবং নিউইয়র্ক কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সহযোগিতায় কুইন্স সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’ উদযাপন করে। নিউইয়র্ক স্টেটের সিনেটর ও অ্যাসেম্বলি মেম্বার, বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল ও বিদেশি কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, নতুন প্রজন্ম ও কমিউনিটি সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। 

প্রথম পর্বে কনস্যুলটে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’-এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ৫২-এর সব ভাষাশহিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহিদ সদস্য, ৭১-এর সব শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। 

দ্বিতীয় পর্বে কুইন্স সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, জ্যামাইকাতে ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা তার স্বাগত বক্তব্যে ৫২-এর মহান ভাষাশহিদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ-সব শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল এবং তিনিই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর সঙ্গে বাংলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। 

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সাধুবাদ জানিয়ে বহুভাষা ও বহুসংস্কৃতিবাদকে আরো প্রসারিত ও বিকশিত করার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট ডেনিস এম ওয়ালকট এবং ভারত, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, পেরু ও থাইল্যান্ডের কনসাল জেনারেলসহ অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড কনস্যুলেটের কূটনীতিকবৃন্দ।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয় যা দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। 

উল্লেখ্য, কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । এছাড়াও তিনি সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত কুইন্স প্যালেসে অস্থায়ী শহিদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ০১ মিনিটে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

শেয়ার করুন