২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৩৩:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


বাইডেনের চিঠিতে আ.লীগ সরকারে একধরনের স্বস্তি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
বাইডেনের চিঠিতে আ.লীগ সরকারে একধরনের স্বস্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর চীন, ভারত, রাশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দানের পরও অস্বস্তি কাটছিল না আওয়ামী লীগের। শেষ পর্যন্ত আরেকটি চিঠি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। যদিও আওয়ামী লীগ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে চিঠি প্রত্যাশা করেনি। এর কারণটা ছিল, নির্বাচনের পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ কথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এরপরও বলা হয়েছে কয়েকবার। এরই মধ্যে এলো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ওই চিঠি। 

কী লেখা ওই চিঠিতে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চিঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থ‌নৈ‌তিক লক্ষ্য অর্জনে সহ‌যো‌গিতা করার বিষ‌য়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব‌লেও জা‌নি‌য়ে‌ছেন তিনি। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা‌কে লেখা এক চিঠিতে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানান দেওয়া আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চিঠি ঢাকার মা‌র্কিন দূতাবাস সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল‌য়ে হস্তান্তর ক‌রে‌ছে। বাইডেন তার চিঠিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোতে সমর্থন করে। একই সঙ্গে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের পরবর্তী অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এবং আরো অনেক বিষয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার কথা জানাতে চান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে এবং আমাদের জনগণের সঙ্গে জনগণের শক্তিশালী বন্ধন এই সম্পর্কের ভিত্তি।

যা প্রমাণ দিলো ওই চিঠি 

বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে রয়েছে অনেক কথা। ওই নির্বাচনে মানুষের উপস্থিতি ঘটেনি। নির্বাচন ছিল একতরফা। কারণ দেশের প্রধান প্রধান বিরোধীদলসমূহ অংশ নেয়নি। মূলত আওয়ামী লীগ এ প্রান্তে আর নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে সিলেক্ট করে দেয়া হয় কারা কারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারবেন। ফলে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরাসরি জয় লাভ করে ২২৩ আসনে। ৬২ আসনে জিতে আসে সেই সব স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি দল জাতীয় পার্টি ও অন্যরা পায় অবশিষ্ট আসন। সব মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব যে প্রত্যাশা করেছিল নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহনমূলক সেটা হয়নি বলেই দাবি নির্বাচনের পরের দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৮ জানুয়ারি দেওয়া বিবৃতি। এতেই প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ তাদের সমমনা (যারা নির্বাচন বর্জন করে) তাদের কিছুটা স্বস্তি মেলে যে, অন্তত তাদের দাবির সঙ্গে ওই দুই দেশ একাত্মতা দেখিয়েছে। এ স্বস্তিতেই এতোদিন ছিলেন তারা। একই সঙ্গে নির্বাচন হয়ে গেলেও খুব শিগগিরই কিছু একটা ঘটতে পারে সে আশায়ও বুক বাঁধেন তারা। এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে শঙ্কাও তৈরি হয়। একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যার প্রমাণও মেলে যে নির্বাচনের পর অস্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ, মন্ত্রিপরিষদ গঠন শপথ এমনকি সংসদ অধিবেশনও শুরু করে দেওয়া। অথচ পুরোনো (একাদশ জাতীয় সংসদ) সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি, সুযোগ পায়নি ওই সংসদের সদস্যরা পদত্যাগের। সব মিলিয়ে এখানেও ছিল একরকম অস্বস্তি। তবে ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকে। 

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির পর সবকিছুই ফ্যাকাশে এখন বিএনপিসহ সমমনাদের। কি হওয়ার কথা এখন কী দেখছে। অবশ্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলসমূেেহর মধ্যে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। দীর্ঘ আন্দলোনের পরও তাদের মোটেও পাত্তা না দেয়াটা তাদের কাছে অযৌক্তিকও মনে হচ্ছে। 

এখন হয়তো প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে, তাহলে জো বাইডেনের গণতান্ত্রিক সম্মেলনেও কী ডাক পাবে বাংলাদেশ। এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায় না বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। এ সরকারের প্রধান লক্ষ্য দেশের উন্নয়নযাত্রা অব্যহত রাখা। সে পথে এগিয়ে যাওয়ার প্ল্যান কষে এগোচ্ছেন তারা। আর গণতন্ত্রের জন্য আমেরিকার সার্টিফিকেট এক্ষুণি বড় বিষয় এটাও মনে করছেন না তারা। দেশের মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে পারা ও দেশের অবকাঠামো উন্নতির অগ্রযাত্রা ঠিক রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ। সেটা ঠিক রেখেই বর্তমান সরকার এগিয়ে যেতে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে সেখানে এক এক করে বিশ্বের প্রায় সব দেশই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। 

সবশেষ 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এটাই এখন এক ধরনের বড় স্বস্তি। যে বা যারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের চিন্তাধারা বা সংবিধান ধারার বিপক্ষে অনেকটাই বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের মিত্রদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে থাকা মিল রেখে প্রত্যাশা পূরণে চাপ প্রয়োগ করে আসা। আওয়ামী লীগ সেগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, পাত্তাই দেয়নি শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সেই দৃঢ়তার কাছে বিশ্বের সব পরাশক্তি প্রকারান্তে হলেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। এটাই বড় প্রাপ্তি দলটির। যেভাবেই হোক, বিশ্ব পরিস্থিতির সাপোর্ট তাদের দিকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরে বিএনপি বা অন্যদল কী করবে সেটা নিয়ে মোটেও ভাবার সময় নেই এখন দলটির!

শেয়ার করুন