২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:০১:২১ পূর্বাহ্ন


আমেরিকায় মাইগ্রেট করার জন্য বর্তমান পরিস্থিতি সুবর্ণ সময়
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২২
আমেরিকায় মাইগ্রেট করার জন্য বর্তমান পরিস্থিতি সুবর্ণ সময়


আমেরিকায় বৈধভাবে ইমিগ্র্যান্টের জন্য এই সময় অত্যন্ত ভালো সময় বলে প্রতীয়মান হয়। ইমিগ্র্যান্ট ভিসা নিয়ে নয়, কেউ যদি ভ্রমণ ভিসা (বি-১, বি-২), কিংবা শিল্পী ভিসা (পি-১, পি-২ বা পি-৩), ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এসে ইবি-১ বা ইবি-৩ ভিসায় রূপান্তরের যোগ্যতা থাকে, কিংবা কাজের মাধ্যমে (এইচ১বি) ভিসায় রূপান্তর করতে চায়, তারাও কিন্তু আমেরিকায় তাদের ভবিষ্যৎ নির্বাহ করতে বা এখানকার নাগরিক হয়ে জীবন কাটাতে চাইলে এই সময়টা উত্তম সময় বলে অনেক করপোরেশনের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন নিয়োগকর্তাদের পক্ষ থেকে কিংবা ইমিগ্রেশন নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তুলেছে নিজেদের সংস্থায় কাজ নেয়ার লোকের অভাবে যারা ভুগছেন, কিংবা যারা স্পন্সর দিয়ে লোকদের এখানে বৈধতা দিতে আগ্রহী বা ক্ষমতা রয়েছে, তারা কথা বলছেন। যদিও অনেক ভিসা অ্যাডজাস্টের জন্য কিংবা অ্যাসাইলামের মাধ্যমে নিজেদের স্ট্যাটাসের জন্য যারা অপেক্ষায় আছেন তারাও সুদিনের আশা করতে পারেন। স্বদেশে যারা অত্যাচারিত নিগৃহীত, গোত্রগত, জাতিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, পেশাগত বা সামাজিক কারণ বা বিভিন্ন কারণে চরম অত্যাচারের সম্মুখীন, তারা বৈধ কিংবা অবৈধ পন্থায় সহজে আমেরিকায় প্রবেশ করে বৈধভাবে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। কথা হচ্ছে, এখানে প্রবেশের পরপরই বৈধতা লাভের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। 

এমনকি এখন রিপাবলিকান কোক ব্রাদার্স, যারা রিপাবলিকান প্রার্থীদের সর্ববৃহৎ অর্থদান করে থাকেন, তারাও ইমিগ্র্যান্টের পক্ষে লবির জন্য অর্থ ব্যয় করছেন। তারা এমন সব প্রার্থীকে অর্থ দিচ্ছেন, যারা ইমিগ্রেশনের পক্ষে কথা বলেন, সিমেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে বৈধ পন্থায় এদেশে আসার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তারা এ কথাও প্রচার করছে যে, ট্রাম্প বৈধভাবে প্রবেশকারী ইমিগ্র্যান্টদের  বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। তিনি র‌্যালি করেছেন অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে আসা লোকদের বিরুদ্ধে। আর সীমান্ত গলে যারা এসেছেন, এমন লোকদের অনেকেই অসুস্থ পন্থায় এদেশে জীবন নির্বাহ করে থাকে। অনেকে আইনের প্রতি কোনোরকম শ্রদ্ধা রাখে না। এখনো বিভিন্ন পন্থায় ভারত ও চীন থেকে বৈধ ইমিগ্র্যান্ট বেশি। তারা ইবি-৫ বা এইচ১বি ভিসায় সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। তাই এই চীন ও ভারত ছাড়া অন্য যে কোনো দেশ থেকে আমেরিকায় চাকরির বাজারে দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের মূল্যায়নের জন্য এখন কোনো ঘাটতি নেই। কারণ আমেরিকার শ্রমবাজারে এখন শ্রমিক স্বল্পতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই শ্রমিক স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন করপোরেশন দক্ষ শ্রমিকদের কাজ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেশে ইমিগ্র্যান্টের জন্য স্পন্সরও করছে। তবে মনে রাখতে হবে, এমন কারো খপ্পরে পড়া যাবে না, যাদের স্পন্সর করার যোগ্যতা নেই। স্পন্সর খুঁজে পেলে আপনি যখন অপেক্ষা করবেন এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাবেন, সবসময় নজরে রাখবেন যাতে কাজ পরিবর্তন করতে না হয়। এমনকি প্রমোশন পেলেও কাজ পরিবর্তন না করে ধৈর্য ধরতে হবে। যদি চাকরি হারান, তাহলে আপনার দক্ষতার কাজের অন্য চাকরি খুঁজে নিতে কয়েক মাস সময় থাকবে। তবে যদি কেউ স্বদেশে ফিরে গেলে জীবনের ওপর ভয় থাকে, তাহলে তার উচিত অ্যাসাইলাম করা। কিন্তু যে কারো কাছে অ্যাসাইলাম না করে যারা সঠিকভাবে আপনার জীবন কাহিনি ও আপনার বাংলাদেশে জীবন শঙ্কার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শুদ্ধ ভাষায় লিখতে পারবে তাদের কাছে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বৈধ ইমিগ্র্যান্টদের জন্যও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাদের প্রসেসিং দীর্ঘসূত্রতার জটিলতায় জড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। জো বাইডেনের প্রশাসন সেসব জটিলতা নিরসন করলেও সে সময়ে সৃষ্ট ব্যাকলগ এখনো অপসৃত হয়নি। তবে যথাসম্ভব ইমিগ্রেশনকে সহজ করার প্রক্রিয়া চলছে।

আমেরিকায় যদি অন্যদিকে চাকরির অবস্থান ও সম্ভাবনা নিয়ে বিবেচনা করা যায়, তাহলে দেখা যায় গত আগস্ট মাসেও চাকরির বাজার ছিল তেজি, যদিও তা অনেকটা দেখতে শান্ত দেখায়। মাসিক নিয়োগ হাল হকিকত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেডারেল যে রিজার্ভ রয়েছে তাতে ভালোভাবেই মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেয়া যাবে কোনো প্রকার আর্থিক মন্দার সৃষ্টি না করে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে চাকরি সৃষ্টি হয়েছিল ৬ লাখ আর এ বছর আগস্টে তা বেড়েছে মাত্র ৩ লাখ ১৫ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৮ লাখ। ফেডারেল রিজার্ভ ইতিমধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পথ চলছে। তারা শ্রমবাজর বেশি উত্তপ্ত দেখতে চায় না। কারণ যদি বেশি চাকরির পথ প্রশ্বস্ত হয়, অথচ তা পূরণে ওয়ার্কার পাওয়া না যায়, তাতেও বাজার অস্থির হবে। কাজেই শ্রমবাজারে ঘাটতি রোধে ইমিগ্রেশনের বিকল্প নেই। আর এক্ষেত্রে যদিও শ্রমবাজার ও জনশক্তি প্রাপ্তির মধ্যে ব্যালান্স করা না যায়, তাহলে বিগত দু’বছরে সৃষ্ট অগ্রগতিও ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি বর্তমান প্রশাসনের নজরে রয়েছে। ফেডারেল তাই সুদের হার বাড়াচ্ছে। ক্রমাগত তাদের কাজ আরো বাড়বে। জুলাই মাসে ছিল প্রায় ৫ লাখেরও বেশি চাকরির সংস্থান। তারপরও চাকরিতে নিয়োগ অনেক বেশি স্থিতিশীল। কারণ বর্তমান বাজারে ২ লাখ ৫০ হাজার চাকরির সংস্থান যথেষ্ট। কিন্তু আমেরিকার প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে উৎপাদন ও ভোক্তা বাড়ানো এবং ব্যয় বাড়ানোর মধ্যে। এদিক থেকে ইমিগ্রেশন এদেশের জন্য বরাবরই আশীর্বাদ।

শেয়ার করুন