২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ৬:৫২:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে বজলুর রশীদ
দুঃশাসন যতো দীর্ঘস্থায়ী মূল্য ততো বেশি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ।
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৫-২০২২
দুঃশাসন যতো দীর্ঘস্থায়ী  মূল্য ততো বেশি বজলুর রশীদ ফিরোজ / ফাইল ছবি


বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, দুঃশাসন যতো দীর্ঘস্থায়ী হয়, ততো কঠিন মূল্যে তা পরিশোধ করতে হয়। ঝড়ের পূর্বাভাসকালে ঝড় দেখা যায় না। সময় অনেক কিছুর বিবেচনা কষে সময়ের কাজ সম্পন্ন করে। রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা অন্যায়ের কিংবা জুলুমের সাফল্য প্রমাণ করে না।বজলুর রশীদ ফিরোজ এসব কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকাকে। 

ঢাকা জেলার ধামরাই থানার চৌহাট গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম বজলুর রশীদ ফিরোজের। পিতা মৃত মোন্তাজ উদ্দিন এবং মাতা মৃত মিসেস আমেনা বেগমের সন্তান বজলুর রশিদ ফিরোজ বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এসএসসি এবং ধামরাই ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সহ-ক্রীড়া সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)-এর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ডাকসুতে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন।

নিচে বজলুর রশীদ ফিরোজ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: দেশ কেমন চলছে? রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন আছে বলে মনে করেন? সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখেন?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: যেমনভাবে দেশ চলছে তাতে ক্ষমতাবান, বিত্তবানরা দ্রুত গতিতে আরো বিত্ত-ক্ষমতা কুক্ষিতগত করছেন আর সাধারণ জনগণের জীবন-জীবিকা দুর্গতির কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুস্থ, স্বাভাবিক, নিয়মতান্ত্রিকতার সকল সীমা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। এখন শাসকদের ক্ষমতা স্থায়ীকরণ আর বিপরীতে রাজনীতির ভিন্ন মেরুকরণের আভাস-পূর্বাভাস চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি সামগ্রিকতার বিচারে ক্রমঅবনতির দিকে।

দেশ: আপনারা বিশেষ করে বামজোটের পক্ষ থেকে গত মার্চে হরতাল আহ্বান করেছিলেন। এরপর আর কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না কেন? 

বজলুর রশীদ ফিরোজ: হরতালে ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। এখন সে জনমতকে সংগঠিত শক্তিতে টানার চেষ্টা চলছে। জনজীবনের প্রতিটি সমস্যাতেই জাতীয় ও স্থানীয়, দলীয় ও জোটবদ্ধ কর্মসূচি চলছে। হরতালের মতো সব কর্মসূচি একই চেহারায় প্রদর্শিত হয় না। কারণ প্রচার মাধ্যমের আগ্রহ অনাগ্রহের বিষয়টিও রয়েছে বলে।

দেশ: সরকারকে বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে তারা দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারটা কি আসলে? সরকারের আমলকে কেনো বলছেন দুঃশাসন?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল তার বিপরীতে দেশ শাসন করা কখনো সুশাসন হতে পারে না। মুক্তবাজারি পুঁজিবাদী শোষণ নীতি, দুর্নীতি, একের পর এক কালো আইন তৈরি করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যখন যেভাবে খুশি যাকে খুশি তাকে বিদ্ধ করা, শাসন-প্রশাসনকে বশংবদ করে ব্যবহার করা, একবার বিনা ভোটে আরেকবার দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করার মতো বহু কুকীর্তি-দুঃশাসনের চেহারা এতোটাই বড় এবং স্পষ্ট করে রেখেছে যে বোঝার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। ব্যাপারটা গণতন্ত্রের বদলে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার। স্বাধীনতার পর থেকে ৫০ বছরে এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুখোশ দেখেছে, গণতন্ত্র দেখেনি; সুশাসনের প্রত্যাশা করেছে কিন্তু পায়নি। বর্তমান সরকার তার ব্যতিক্রম তো নয়ই, বরং সম্প্রসারণ মাত্র।

দেশ: সরকারের ভালো কিছু কি চোখে পড়ে না?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: সরকারের তেলা মাথায় তেল ঢালা অর্থাৎ ধনীদের আরো ধনী, গরিবদের আরো গরিব করার নীতিতে বিত্তবানশ্রেণির জন্য অতিভালো খুবই দৃশ্যমান কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তা কতোটা খারাপ তার পরিমাপ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

দেশ: জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনো আপনাদের বা এমনকি বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলের ডাকে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ছে না? সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিশ্চয়ই তারা খুশি। কি মত আপনার?

বজলুর রশীদ ফিরোজ:ব্রিটিশের দুইশো বছরের শাসন ভারতবাসীর খুশির ফল ছিল না। একইভাবে পাকিস্তানি ২২ পরিবারের মাধ্যমে উপনিবেশিক শোষণ লুণ্ঠন ২৩ বছরব্যাপী স্থায়িত্ব পেয়েছিল তাতেও বাঙালি জনগণের খুশির কারণে ছিল না। দুঃশাসন যতো দীয়র্ঘস্থায়ী হয় ততো কঠিন মূল্যে তা পরিশোধ করতে হয়। ঝড়ের পূর্বাভাসকালে ঝড় দেখা যায় না। সময় অনেক কিছুর বিবেচনা কষে সময়ের কাজ সম্পন্ন করে। রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা অন্যায়ের কিংবা জুলুমের সাফল্য প্রমাণ করে না।

দেশ: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বামরা এখন বিএনপি-জামায়াত জোটে। এব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি? আবার মাঝে একথাও শোনা গিয়েছিলো সরকারের সাথে আপনাদের বিশেষ করে বাসদের সিট ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা হতে যাচ্ছেÑ এ পুরো বিষয়ের ব্যাপারে কিছু বলুন।

বজলুর রশীদ ফিরোজ: দেশের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্বহীন কথা বললে বা অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তাঁর ব্যক্তিত্বের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন্ন হয়। বাসদ আদর্শবাদিতার রাজনীতি করে, নীতিহীনতার পথে হাঁটেনা। ফলে কথিত সিট ভাগাভাগির উচ্ছিষ্ট ভোগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

দেশ: কেমন লাগছে সাধারণ সম্পাদকে পদ? দলকে নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: এটা একটা বড় দায়িত্ব। দলের নীতি-আদর্শের বাস্তবায়নের সংগ্রামকে সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যৌথতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাধ্যে কাজ করে যাওয়া।



শেয়ার করুন