২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:০৬:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রাজনীতির মাঠে ভারতীয় পণ্য বর্জন ক্যাম্পেইনের উত্তাপ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
রাজনীতির মাঠে ভারতীয় পণ্য বর্জন ক্যাম্পেইনের উত্তাপ সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান


ক্রমশই দানা বেঁধে উঠছে ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলনের সুচনা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরপরই। যা ছিল কল্পনাতীত। কখনও কেউ ভাবেনি এভাবে একটি সামাজিক আন্দোলন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, বা এমনটা হবে। সূচনার গল্প আরেকটু আগের। ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ গাজায়। নির্বিচারে শিশু, মহিলা ও বেসমারিক মানুষ মরতে শুরু করে ইসরাইলের বিমান হামলায়। হাজার হাজার মানুষের বাড়ি ঘর, মসজিদ, হাসপাতাল গুড়িয়ে দিচ্ছিল ইসরাইল কথিত স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনী যোদ্ধা হামাসকে নির্মুল অজুহাতে। এটা মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ রয়ে সয়ে কথা বললেও সাধারণ মুসলমানদের ভাল লাগেনি। শিশু, মহিলাও বেসমরিক লোকজন তো আর সন্ত্রাসী নয়। তাহলে কেন তাদের বাড়ি ঘরে আক্রমণ হবে, গুড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। সে থেকেই সামাজিক আন্দোলন শুরু, ইজরায়েলের পৃষ্ঠপোষক যে প্রতিষ্ঠানসমূহের পণ্য বাংলাদেশের মার্কেটে, সেগুলো বয়কট। আজও সে বয়কট বেশ ভালই চলছে এবং বিশেষ করে তরুল সমাজে এটা ব্যাপক বিস্তার করেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভার বিস্তর। 

বাংলাদেশে এর সঙ্গে যুক্ত হলো ভারতীয় পণ্য বর্জন শ্লোগান

বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র হত্যার পেছনে ভারতকে দায়ী করে দেশটির পণ্য বর্জনের প্রচারণা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের চাপ উপেক্ষা করে বিএনপিকে ছাড়াই যে নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ করতে পারলো তার পেছনে ভারতকেই মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখেন দেশের সাধারণ জনগণ। কেননা ঠিক দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সীমান্তের ওপারের ভারতীয় শাসক শ্রেণী যখন বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তরায় হওয়ার কার্যকরি ভূমিকা নিয়েছে, এবং যা তাদের ও বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর কথাবার্তায় স্পষ্ট হয়, তখন থেকেই কিছু মানুষ নিরুপয় হয়ে উপায় খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব কিভাবে হ্রাস করা যায়।

সে থেকেই সামাজিকভাবে শুরু ভারতীয় পণ্য বয়কটের। যা প্রতিনিয়ত কঠিন থেকে কঠোর হতে চলেছে। বিষয়টা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যা নিয়ে স্টেড ডিপার্টমেন্টে প্রশ্ন তুললেও যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি অবহিত বলে জানান দেয়। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। ভারতের অনেক পন্য বাংলাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন প্রধান্য বিস্তার করে দেশীয় পণ্যকে পেছনে ফেলে।

সামাজিক ওই বয়কটের ফলে সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সারা। ভারতীয় পণ্য ক্রয়ে অনেক মানুষ এখন চিন্তাভাবনা করছেন। এবং বিকল্পটা খুঁজেও নিচ্ছেন। বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ভাটার টান। ভোক্তা পর্যায় চাহিদা না থাকলে কেনই আমদানিতে উৎসাহী হবেন ব্যবসায়ী। এটা নিয়ে ভারতীয় পত্রপত্রিকাতেও বড় বড় হিডিংয়ে নিউজ হচ্ছে। ভয়টা অন্যখানে। মালদ্বীপেও ভারত খেদাও আন্দোলন হয়। সেখানে সেটা সফল হয়। ভারতীয় প্রধান্যমুক্ত এখন মালদ্বীপ। বাংলাদেশও সেভাবে যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এ শঙ্কায় এখন ভারত। সমালোচনার ঝড় ভারতে। কেন বাংলাদেশের নীতিতে প্রকাশ্যে ভারতীয়রা, এটাই তাদের ক্ষোভ।

বাংলাদেশে কিছু সামাজিক আন্দোলনরত মানুষ কিছু ওয়ার্ক করে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের পণ্য বয়কটের শ্লোগান তুলে। এরপর এতে যোগ দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি। যিনি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা চাদর (শীত নিবরনের শাল) ছুড়ে ফেলে দিয়ে পণ্য বয়কেটর ঘোষণা দেন পল্টস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে। সেটা বিএনপির ভারতীয় পণ্য বয়কট বলে কয়েকবার উচ্চারন করলেও সেটা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত সেটা এখনও ধোয়াশা। তবে বিএনপির অনেকেই এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ব্যাক্তিগতভাবে। তবে রুহুল কবির লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছিলেন বিএনপিসহ সমমনা ৬৩ দল এমন পন্য বর্জনের আন্দলোনের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে। 

চরমোনাইর পীর

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই। গত ২৫ মার্চ সোমবার ইসলামী আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার আহ্বান জানান। সর্বশেষ পীর সাহেব চরমোনাই ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের’ প্রচারণার প্রতি সংহতি জানান। মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভারতীয় পণ্য বর্জনে ইসলামী আন্দোলনের এই সমর্থনের প্রশংসা করেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরপরই বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা গণঅধিকার পরিষদ নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক সভায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। বিদেশে অবস্থানরত আলোচিত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য মূলত সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের সূচনা করেন। তার সাথে যোগ দিতে থাকে দেশের অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের এ্যাক্টিভিসরা।

ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে ক্ষমতাসীন দল :

ড. হাছান মাহমুদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই ভারত থেকে আসে। ভারতের সঙ্গে আমাদের হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এবং কিছু সীমান্ত বাণিজ্যও হয় বৈধভাবে। আসলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য; এতে দেশে যাতে জনগণের ভোগান্তি হয় এবং পণ্যের মূল্য বাড়ে। শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভারত থেকে আসা পেয়াঁজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরিধান করবেন, আপনাদের নেত্রী যেগুলো মাঠে গলা ফাটায়- তারাও আবার ভারতীয় শাড়ি পড়বেন। ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে আপনারা ইফতার করবেন, সেহেরি খাবেন। ক’দিন আগে তাদের নেতা ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবার আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিবেন- এগুলো হিপোক্রেসি ছাড়া অন্য কিছু নয়। বিএনপির আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে বাজার অস্থিতিশীল করে পণ্যেও মূল্য বাড়ানো। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক যারা দিয়েছে, তাদের সাথে শামিল হয়ে রিজভী সাহেব নিজের পরনের শালটিও জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আসলে শালটি ভারত থেকে কিনেছিলেন, নাকি বঙ্গবাজার থেকে আমি জানি না!

ওবায়দুল কাদের

এর আগে ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ২৪ মার্চ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ’পণ্য বর্জন এটা কি সম্ভব! বাংলাদেশ ও ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে লেনদেন, যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার মধ্যে এমন বর্জনের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত কিনা! আসলে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা ব্যর্থতার জন্য তাঁরা নিজেরাই ক্লান্ত, তাঁদের কর্মীরা হতাশ। নেতাদের কারো সাথে কারো কথার মিল আমরা দেখি না। মঈন খান ভারতের সহযোগিতা চান, রিজভী আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি'র দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিন্তা সরকার কেন করবে? এর কোন যুক্তিও নেই, বাস্তবতাও নেই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে হবে। আমাদের সংবিধানে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন কথা বলা নেই।

শেয়ার করুন