৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৪৮:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


কঠোর মানসিক চাপে রাখতেই উপজেলা নির্বাচনকেও বিএনপি’র `না'
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
কঠোর মানসিক চাপে রাখতেই উপজেলা নির্বাচনকেও  বিএনপি’র `না'


রাজনীতির মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কোনোভাবেই অংশগ্রহণ করতে চায় না। এব্যাপারে দলের হাই কমান্ড কঠোর অবস্থানে আছে। তারা মনে করে এমুহূর্তে বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হলে নেতাকর্মীরা একে বড় ধরনের নেতিবাচক বার্তা হিসাবে ধরে নেবে। সরকারের চাপে কৌশলে বিএনপি কার্যত রাজনৈতিক মাঠে হেরে গেছে-এমন বার্তা পাবে নেতাকর্মীরা। বিএনপি’র রাজনৈতিক কৌশলের পরাজয় হয়েছে মনে করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দেবে আরো চরম হতাশা। তাই উপজেলা নির্বাচনে যে কোনোভাবে বা কৌশলের নামেও অংশ না নেয়ার পক্ষেই আছে রয়েছে বিএনপি হাই কমান্ড। বিএনপি’র একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে এসব তথ্য। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়। এবার ৪৮১টি উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে মোট ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। এবার উপজেলা নির্বাচন হবে মোট চারটি ধাপে, আর মনোনয়নপত্র জমা অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ২৩ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।


আওয়ামী লীগ যেভাবে অংশ নিচ্ছে

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থ্যাৎ এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। ফলে কেন্দ্র থেকে যে একক দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও আর থাকছে না। যার যার মতো করে স্বতন্ত্রভাবে দলের নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন। যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমন কৌশলের নেপথ্যে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনকেও আন্তর্জাতিকমহলে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করতে এই কৌশলটি তিনি নিয়েছেন। 

নেমেছে জাপা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নানান ধরনের নাটকের আশ্রয় নিলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলটি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে রাখঢাক নেই। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলটি এবার বড়ো ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এজন্য দলটি ইতোমম্যে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। জাতীয় পার্টি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ- এ দুপক্ষে ভাগ হয়ে গেছে জাপা। আর এজন্য জি এম কাদের গ্রুপ এই উপজেলা নির্বাচনকে তাদের সাংগঠনিক কৌশল হিসাবে নিয়েছে। জিএম কাদের অংশ দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই নির্বাচন করছে বলে নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। 

বিএনপির না এর নেপথ্যে

এদিকে সর্বশেষ পাওয়া খবরেও জানা গেছে, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তই বিএনপি বহাল রেখেছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন রহুল কবির রিজভী। ১৫ এপ্রিল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব একথা জানান। এর পরের দিন ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি। সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে মঙ্গলবার দলীয় প্যাডে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তাঁর সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে দলটির হাইকমান্ড আরো মনে করেন আওয়ামী লীগ হয়তবা কৌশলে বা চাপ সৃষ্টি করে বিএনপি’র কোনো কোনো নেতাকে এই নির্বাচনে অংশ নেয়াতে চেষ্টা করবে। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করাতে বাধ্য করার পেছনে আওয়ামী লীগের কৌশল হচ্ছে বহুমুখী। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশল। এর অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকার বিষয়টি। এটি অনেকে মনে করছে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থিতা নিয়ে সংসদ সদস্য বনাম তৃণমূল দ্বন্দ্ব সংঘাত বেড়ে গেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকলে এমন দ্বন্দ্ব সংঘাতের রশিতে কিছুটার টান পড়বে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসলে অন্য একটি কারণেও আওয়ামী লীগ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন ব্যবস্থা করা গেলে একদিকে যেমন দলে দ্বন্দ্ব সংঘাত কমবে এর পাশাপাশি বিএনপি’র কিছু নেতাকর্মী এই উপজেলাতে তাদের জয় হতে পারে সে আশা বুকে নিয়ে কোমর বেধে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়বে। আর এতেই সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে শান্ত করা যাবে। কেননা পশ্চিমাদের শক্তিধর দেশগুলি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে মন্তব্য করেছে। কিন্ত এখন বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে পশ্চিমাদের বোঝানো যাবে যে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হচ্ছে। বিএনপি অংশ নিয়ে বিএনপি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে যে বিএনপি ভুল করেছে তা-ও রাজনৈতিক মাঠে প্রমাণ হয়ে যাবে। এতে বিএনপি’তে তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব সংঘাত বেড়ে যাবে, দল বড়ো ধরনের বিপর্যযের মুখে পড়বে। জানা গেছে বিএনপি’র হাই কমান্ড এই বিশ্লেষণটি-ই বেশি করছে। আর একারণে তারা উপজেলা নির্বাচনের দিকে দলকে নিয়ে গিয়ে কোনোভাবে সরকারের ফাঁদে পা দিতে চায় না বিএনপি। 

সাধারণ ভোটার সমর্থকরা হতাশ হবেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসি গণমাধ্যমে বলেছেন, এবারের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন। তাদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এর শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ ভাগ। কিন্তু এর আগে সারা দেশে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে ভোটের এই হিসাব জানতে পেরেছেন তাঁরা। তবে সারা দেশে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ায় অর্থাৎ বাকি ভোটাররা ভোট দিতে না আসায় মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একে ইতিবাচক হিসাবে নিয়েছে। ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাওয়া ভোটারদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে। জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি বিএনপিসহ ২৭টি দলের। ভোট বর্জন করায় তারা ভোটারদের ধন্যবাদও জানিয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জন কর্মসূচি সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এজন্য ভোটারদের ’স্যালুট’ জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই বিএনপিসহ ২৭টি দল যদি এই সরকারের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়? বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করেন এমন ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারের পাশাপাশি যারা কোনো দল সংগঠন না করে ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন তাদেরও মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তারা বিএনপি’কে তার দ্যুতিয়ালি রাজনীতির জন্য ধিক্কার দেবে। দলটির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, শুধু বিএনপি’ই না সাধারণ ভোটার যারা নিজের ভোট নিজে দিতে না পারা বেদনায় এবার ভোট কেন্দ্রেই যায়নি তাদের মতামতকে সম্মান দিতে চায় দলটি। আর সে কারণেও বিএনপি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে চায় না। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন বর্জনেও সরকার আরো মানসিক চাপে থাকবে বলে বিএনপি’র নেতারা মনে করেন। জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এসব নির্বাচন বর্জনের পথে থাকলে সরকারের ওপর আরোও কঠোর রাজনৈতিক মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। সরকারের উপর কঠোর চাপ অব্যাহত রাখতেই বিএনপি উপজেলা নির্বাচনকেও না বলছে, এমনকি আমলেই নিচ্ছে না।

শেয়ার করুন