২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৩৩:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


হঠাৎই ফুসে উঠছে গার্মেন্টস সেক্টর
গার্মেন্টস সেক্টরে আন্দোলন, নেপথ্যে কী
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২২
গার্মেন্টস সেক্টরে আন্দোলন, নেপথ্যে কী ৪ জুন রাস্তায় নেমে আন্দোলনে নামা গার্মেন্টস শ্রমিকরা এক পর্যায়ে মিরপুর - ১০ গোলচত্তর অবরোধ করে রাখে/ছবি সংগৃহীত


হঠাৎ করেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দেশের সবচে বড় রপ্তানি খাত পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিকদের মাঝে। ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে দেশের গার্মেন্টস সেক্টর! গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে গার্মেন্টস কর্মীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছেন। গার্মেন্টস বা তার আশপাশে সীমাবদ্ধ নেই সে আন্দোলন। প্রশাসন তথা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টায় শামিল হচ্ছেন তারা। কেউ কেউ বলছেন- বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ গার্মেন্টস সেক্টরের এ অস্থিরতা দেশে অস্থীতিশীল পরিস্থিতি তৈরির শামিল। কেউ কেউ নিম্ন আয়ের এ শ্রমিকদের আন্দেলনকে যৌক্তিক বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারী 

গত ৭ জুন মঙ্গলবার এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে এদিন আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতির বক্তব্যে তিনি গার্মেন্টস সেক্টরে অশান্ত হওয়ার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে বলেন, ‘যেই নেতারা উসকানি দিচ্ছে, তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছে- সেটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। আমি সরাসরি বাস্তব কথাটাই বললাম। উন্নত দেশে আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি এর মধ্যে পোশাক অন্যতম। এই শিল্পের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করছে ঠিক আছে। কিন্তু যেসব দেশ আমাদের গার্মেন্টস পণ্য কিনবে। এখন আমরা ভালো সুবিধা পাচ্ছি, উৎপাদন বাড়ছে, শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ কারণ যারা কিনবে তাদের ক্রয় ক্ষমতাই নেই। যাদের কাছে রপ্তানি করি, তাদের ক্রয় ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে আরো খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকা, ইউরোপে পাঠাই। সেসব জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সেখানে কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবার খাদ্য, পোশাক, ভ্যাকসিন অন্তত আমরা দিয়ে যেতে পারছি। সেখানে যদি কেউ কেউ অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে আমি বলবো- শেষে একূল-ওকূল দু’কূলই হারাতে হতে পারে। এটাও যেন সবাই মনে রাখে।’ 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আর কেউ যদি মনে করেন আন্দোলন করে এই কারখানা বন্ধ ওই কারখানা বন্ধ করে দেবো। তাহলে কারখানা বন্ধ হলে কিন্তু চাকরিও চলে যাবে। তখন বেতন বাড়ানো নয়, বেতনহীন হয়ে যাবে। সেটা না বুঝলে আমাদের কিছু করার নেই।’ তিনি প্রশ্ন করে বলেন,‘বেসরকারি খাতে আমরা আর কতো দেব? আমরা তো ভর্তুকি দিয়েই যাচ্ছি। সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েই যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। করোনাকারীন তো আমরা কোনো কারখানা বন্ধ হতে দেইনি। চালু রাখার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলাম। আমরা সেখানে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, ভর্তুকি দিয়ে গার্মেন্টের শ্রমিকরা যাতে বেতন পায় সেই ব্যবস্থা করেছি। আমরা সরাসরি ফোনের মাধ্যমে এই শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতেও দেইনি। এখন তার সুফল পাচ্ছি। কাজ পাচ্ছি, রপ্তানি বাড়ছে।

সেটা মাথায় রেখইে সবাইকে চলতে হবে।’  তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে কোনো সময় যে কোনো আন্দোলনের যৌক্তিকতা রয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক, তারা অধিকার আদায়ে মাঠে নেমে দাবি তুলতে পারেন। কিন্তু সে সবেরও দিনক্ষণ রয়েছে। দেশ ও বিশ্বের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা না করে শুধু আন্দোলন করলে সেটা সফলতার মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ সেটা বুঝতে চান না। বা তাদেরকে সেভাবে বুঝানো হচ্ছে কি-না সেটা নিয়েও প্রশ্ন। কারণ যে দাবি দাওয়া নিয়ে তারা মাঠে সেগুলো বেশ আগেরই। এটা নিয়ে মাঠে নেমে কঠোর আন্দোলন করার পরামর্শ তাহলে কার? কে পেছন থেকে এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। নতুবা সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিজ নিজ থেকে মাঠে নেমে এত বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন না। যা প্রকারান্তে ক্রমশ বড় এর দিকেই যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

 তবে পদ্মা সেতুর মত বিশাল এক অর্জন সাফল্যের আনন্দ উদযাপনের দেশের মানুষ যখন প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে সে মুহূর্তে সীতাকুন্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে অন্য কোনো নাশকতা আছে কি-না সন্দেহ হচ্ছে। একই সঙ্গে মিরপুর উত্তরাসহ বিভিন্নস্থানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ফুসে ওঠাটাকেও ভাল নজরে দেখছেন না অনেকেই। ওই ঘটনায় গত ৬ জুন সোমবার সন্ধ্যায় দগ্ধদের দেখতে গিয়েছিলেন সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। সেটির ধারাবাহিকতায় দেশবাসীর দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে যেতে সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় কোনো নাশকতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’ 

এদিকে গত ৪ জুন শনিবার সকাল ১১টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। তাদের দাবি, হয় বেতন বাড়াতে হবে, নয়তো নিত্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। শ্রমিকরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সয়াবিন তেল ২৩০-২৪০  টাকা। একটি ডিমের দাম ১৫ টাকা, আটা-চালের দাম বাড়ছে। সবজিসহ সবকিছুই দিন দিন চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। কিভাবে বাঁচব? মালিককে বলেছি বেতন বাড়াতে, কিন্তু বেতন বাড়াচ্ছে না। তাহলে কী করব আমরা? তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুরে এপেক্স, এমবিএম, সারজ, ভিশন, আইডিএস, কলকা, ঝুকি, ডিমক্স কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নামলে রাস্তার দু’পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল সাড়ে তিনটার সময়ও মিরপুর ১৩, ১৪ ও ১০ নম্বরে গোলচত্বরে শ্রমিকরা অবস্থান করে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ সেখানে কাটায় তারা। ফলে ওই এলাকায় চলাচল করা শিক্ষার্থী, অফিস আদালতের কর্মচারি, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। 

এর আগে বৃহস্পতিবার (২ জুন) ও একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। শুরুটা সেখান থেকেই। তবে সেটা ছিল ছোট্ট পরিসরের। এরপর টানা চারদিন মিরপুরে আন্দেলন ও সড়ক অবরোধের পর সেটা উত্তরাতে ছড়িয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মত উত্তরাতে হলো সে আন্দোলন। গত ৬ জুন উত্তরার দক্ষিণ খান অঞ্চলের অন্তত ৪-৫টি গার্মেন্টের  কর্মীদের সকালে তাদের গার্মেন্টেসে হাজিরা দেয়ার পরপরই ডেকে রাস্তায় নামায় বহিরাগত এক শ্রেণীর নেতারা। তাদের ডাক দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মরত শ্রমিকরা কাজ ফেলে নেমে আসেন রাস্তায়। শামিল হয়ে যান আন্দোলনে। এদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে, যা সবার মুখেই যেন এক ও অভিন্ন। যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার বিভিন্ন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে গিয়ে অবরোধ করেন। পরে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারগ্যাস (কাঁদানে গ্যাস) নিক্ষেপ করে। শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ওই এলাকায়। 

এ বিষয়ে বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে আমরা ছত্রভঙ্গ করে দিই।’

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, ‘বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের বেতন-ভাতা বাড়ছে না। তাই ন্যূনতম বেতন ২০ হাজার টাকা করার দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। চলমান উর্ধ্বগতির বাজার ব্যবস্থায় যে বেতন দেয়া হয় তাতে আমাদের সংসার চালানো দায়। ঘরভাড়া দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না। যেহেতু সরকার বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে সরকারই আমাদের বেতনভাতা বাড়িয়ে দেবেন। না হয় আমরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। এটা মানতেই হবে। আমরা এরজন্য যেভাবে নেতারা বলবেন, সেভাবেই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়বো। কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন, ৬ জুন উত্তরা আজমপুরস্থ ময়মনসিংহ সড়কে অবরোধ করতে যেয়ে পুলিশের টিয়ার সেল খেয়ে ফেরা শ্রমিকেরা। ওই ঘটনায় সংঘর্ষও হয়। গার্মেন্টস কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে টিয়ারসেল থেকে নিজেদের চোখ সেভ করতে রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধাগ্রস্থ হয়ে প্রতিষ্ঠানটির দেয়াল ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। পরের দিন ৭ জুন একই ভাবে গার্মেন্টস কর্মীরা সকাল ৮-২০ মিনিট থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করে আন্দোলনের মাঠে যেতে দেখা গেছে। 

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন

ঢাকার মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন শ্রমিক এলাকায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান আন্দোলনে দমন-পীড়ন বন্ধ করে চলতি মাস থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা চালু এবং অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম বেসিক মজুরি ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। গত ৬ জুন, সোমবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সকল দাবি উত্থাপন করেন। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, জালাল হাওলাদার, এম এ শাহীন, দুলাল সাহা, আলম সরকার প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি এবং জীবন ব্যয়ের মাত্রাহীন বৃদ্ধির মুখে দাঁড়িয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পক্ষে আর কোনোভাবেই জীবনধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিভিন্ন শিল্প এলাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। শ্রমিকদের এই চলমান আন্দোলন দমনে সরকার দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা-গ্রেফতার ও নির্যাতন চলছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি ও বাড়ি ভাড়াসহ জীবন যাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত প্রায় দুই বছর ধরে গার্মেন্ট শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু শ্রমিকদের বাঁচার মত মজুরির দাবির প্রতি সরকার ও মালিকপক্ষ কর্ণপাত করছে না।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অতীতে প্রতিবারই শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলন, অনেক ত্যাগ শিকার এবং জুলুম-নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। তার পরেও কখনোই শ্রমিকদের দাবির কাছাকাছি কিংবা তৎকালীন বাজারদর অনুযায়ী কোন মতে বাঁচার মত মজুরিও আদায় হয়নি। প্রতিবারে গ্রেড চুরিসহ নানান কারসাজির মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

সমাবেশ থেকে বলা হয়, আন্দোলন দমনের পথ পরিহার করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার মধ্য দিয়েই শিল্পে উৎপাদনের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন দেশ’কে বলেন, ‘মিরপুর উত্তরাতে শ্রমিকরা মাঠে নেমে আন্দোলন করলেও সাভার এলাকাতে এরকম কিছু এখনও ঘটেনি। তবে যে কোনো মুহূর্তে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে মাঠতে নামতে পারেন। কারণ শ্রমিকরা এভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছেন আমাদেরকে। ভেতরে ভেতরে সবাই বাজারের মূল্যবৃদ্ধিতে অস্থির। খবর রাখছেন, তারা মিরপুর উত্তরা সহ যারা মাঠে নেমেছেন যোগ্য দাবি দাওয়া নিয়ে সেসব ব্যাপারে। কারণ এটা তো সত্য, শ্রমিকদের অনেকেই লাঞ্চ বিরতি নেমে টং দোকানে যেয়ে যে রুটিটা দশ টাকা দিয়ে ক্রয় করে খেতে পারতেন। আজ সেটার দাম ১৫ টাকা। এভাবে সব কিছুর দামই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমিকদের যে বেতন সেটা দিয়ে তো চলতে হবে। সংসার চালাতে হবে। বাজারে সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তুলনায় বেতন বাড়েনি। আমাদের যে বেতন কাঠামো সেটা ২০১৮ সনের শেষের দিকে বাস্তবায়িত হওয়া। অনেক দিন আগের। সে থেকে বাজার মূল্য কতটা বেড়েছে সে হিসেবটা সবাই জানেন। তাহলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন কেন বাড়বে না। তাছাড়া আমরা বাড়তি তো চাইনি। আমাদের যে পুরানো দাবি যে অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবি, সেটাই চাচ্ছি। এটা যৌক্তিক।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘আমরা শ্রমিকরা এমন কিছু করি না যেটাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরি হয়। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিটুকুর বাইরে অন্য কিছু চিন্তাও করি না। তবে হ্যাঁ, কেউ কেউ এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। আমরা সে ব্যাপারে কঠোর নজর রাখি।’ 

‘ইনফ্লেশন, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি চ্যালেঞ্জেস’

শিরোনামে ভাচুর্য়াল সংবাদ সম্মেলন 

গত ৫ জুন রোববার (৫ জুন) ‘ইনফ্লেশন, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামে ভাচুর্য়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পিপিআরসি-বিআইজিডি। অনুষ্ঠানে এক যৌথ সমীক্ষার সর্বশেষ রাউন্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন বক্তারা। এতে বক্তব্য রাখেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। 

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গবেষণাটি শুরু হয়। শহরাঞ্চলের বস্তি ও গ্রামাঞ্চলের বড় জনগোষ্ঠীর ওপর একাধিক সমীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করা হয় কীভাবে বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করছে। এ বছরের মে মাসে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ওপর জরিপের পঞ্চম রাউন্ড চালানো হয়েছিল। 

জরিপে দেখা যায়, মে ২০২২-এর সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় ‘নতুন দরিদ্রের’ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশে। বলা হয়, দ্বিতীয় দফায় দেওয়া লকডাউনের পরে মাথাপিছু দৈনিক আয় বেশ ভালোভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছিল। আগস্ট ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত আয় বৃদ্ধির এই হার ছিল ২৭ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে জানুয়ারি এবং মে ২০২২-এর মধ্যে এই আয় আবার ৬ শতাংশ কমতে শুরু করে। ফলে মানুষ কোভিড-পূর্বে যত আয় করত, বর্তমানে প্রকৃত আয় সে রকম হচ্ছে না।

এদিকে চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো তাদের প্রকৃত আয়, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় খরচের ক্ষেত্রে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯-এর ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এখনো দেশে অনেক দরিদ্র।


শেয়ার করুন