২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৪০:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কড়া চিঠি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কড়া চিঠি ঢাকায় শ্রমিক আন্দোলন


বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকারী পোশাক শ্রমিকদের গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তারের হুমকি ও তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিজিএমইর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। 

গত ১৮ মার্চ এএএফএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানকে চিঠি লিখেছে এএএফএ। তবে চিঠির ভাষা ছিলো অত্যন্ত কড়া। শুধু বিদেশেই নয়, দেশেও গত শুক্রবার (২২ মার্চ ২০২৪) দেশে তৈরি পোশাকশিল্পে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে শ্রমিক নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি গণতদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, শ্রমিক সংগঠক, অর্থনীতিবিদ, লেখক, গবেষকেরা রয়েছেন। 

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতে গণতদন্ত কমিটি’ নামে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। নবগঠিত গণতদন্ত কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। 

এএএফ’এর চিঠিতে যা লেখা রয়েছে 

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এএএফএর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিফেন ল্যামার বলেন, ‘আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের পক্ষ থেকে আমি আবারও ২০২৩ সালে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে চলমান আটক ও আটকের হুমকি বন্ধের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় প্রাণহানি ও শ্রমিক আহত হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’ 

চিঠিতে স্টিফেন ল্যামার আরো লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহৎ সরবরাহকারী বাংলাদেশ। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জুতা ও ভ্রমণে ব্যবহৃত পণ্য সরবরাহও দ্রুত বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সুবিধাজনক সম্পর্ক উভয়ের জন্য সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এসেছে।

এএএফএর চিঠিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে শ্রমিকদের বিষয়ে তাদের আবারও আহ্বান জানাতে হচ্ছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার সব ব্যক্তিকে মুক্তি প্রদান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা সব ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার এবং আরও হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তারের হুমকি বন্ধ করতে হবে। মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া জুয়েল মিয়ার মতো যেসব শ্রমিক সংগঠকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় এএএফএ। 

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান লেখা চিঠিতে এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের সংগঠনের ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষিত হয়। গত বছরের এপ্রিলে প্রায় ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। এরপর গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। এর বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব দেয়। পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভার ও মিরপুরে শ্রম অসন্তোষ ছড়ায়। তিন সপ্তাহের এই আন্দোলনে রাসেল হাওলাদার, ইমরান হোসেন, আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিন নামের চার পোশাকশ্রমিক নিহত হন। আহত হন অনেকে। ঘটনায় শ্রমিকনেতা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের অনেককে মামলায় আসামি করা হয়। 

সুষ্ঠু তদন্তে ৩১ সদস্যের গণ কমিটি গঠন 

দেশে তৈরি পোশাকশিল্পে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে শ্রমিক নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি গণতদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, শ্রমিক সংগঠক, অর্থনীতিবিদ, লেখক, গবেষকেরা রয়েছেন। 

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খা হলে ২২ মাচ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতে গণতদন্ত কমিটি’ নামে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। নবগঠিত গণতদন্ত কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে আহ্বায়ক ও জহিরুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে গঠিত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মনজুরুল আহসান খান, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাদিয়া আরমান, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম এ সবুর, লেখক-গবেষক মাহা মির্জা, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন প্রমুখ। 

সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্য মজুরি চাওয়ার পরিণামে শিল্পাঞ্চল রক্তাক্ত হয় কেন? কেন অকালমৃত্যু হয় নারী-পুরুষের? কেন জখম হয় শত শত শ্রমিক? কেন রাষ্ট্র তার সব রকম সংস্থা নিয়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়? শিল্প পুলিশ আসলে কার স্বার্থ রক্ষা করে, মালিকের না শ্রমিকের?-এই সব প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার রয়েছে বাংলাদেশের সব নাগরিকের। সরকার এসব অনিয়ম ও জুলুম-হত্যাকাণ্ডের কোনো কার্যকর তদন্ত না করায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমরা মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গণতদন্ত কমিটি গঠন করেছি।’ আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘এই কমিটির অধীনে যে পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন, সেটি ও তাঁদের দাবি পর্যালোচনা; আন্দোলন নিয়ে মালিকপক্ষ, পুলিশ, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা; শ্রমিকদের আন্দোলনে হামলায় জড়িতদের শনাক্তকরণ; গুলিবর্ষণকারীদের পরিচয় ও কারণ উদ্‌ঘাটন; নিহত-আহত শ্রমিকদের পরিচয় প্রকাশ; হতাহতের ঘটনায় মামলা, তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি বিধান বিষয়ে সরকার ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ ও ব্যাখ্যা এবং শ্রমিকদের মজুরি, কর্মপরিবেশ, অধিকার নিয়ে অস্থিরতা ও দমন-পীড়ন বন্ধ করতে করণীয় নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালানো হবে। এ জন্য আমরা প্রকাশিত খবর, লেখালেখি, রিপোর্ট পর্যালোচনার পাশাপাশি শ্রমিক, মালিক ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহণ করব। নিহত শ্রমিক পরিবারসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘোষিত কমিটি আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করবে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে গণতদন্তের প্রতিবেদন জনসমক্ষে পেশ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মনজুরুল আহসান খান, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাদিয়া আরমান, মোশরেফা মিশু, বাবুল হোসেন প্রমুখ।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুব হাসানকে লেখা চিঠি নিয়ে রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, বর্তমান সময়ে স্টিফেন ল্যামার এই চিঠিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার চিঠির ভাষাও কঠোর। বিশেষজ্ঞদের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন কিছু করার আগে সরকার প্রধান বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানতে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। এটা সেই রকমই একটি চিঠি। তারা বলেন, হতে পারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের উপর কোন মার্কিন শ্যাংসন বা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এটা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের উপর অশনি সংকেত।

শেয়ার করুন