২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ক্রমশ বাড়ছে গ্যাস সংকট
হাহাকার বিদ্যুৎ সারশিল্প সিএনজি গৃহস্থালিতে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২২
হাহাকার বিদ্যুৎ সারশিল্প সিএনজি গৃহস্থালিতে


বিশ্বজ্বালানি বাজারে এখনো জ্বলছে আগুন। জ্বালানি, তেল,গ্যাস (পাইপলাইন গ্যাস,এলএনজি, এলপিজি), কয়লা সবকিছুর মূল্য আকাশছোঁয়া। কবে থামবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আরোপিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে সংকটে না ফেললেও রীতিমতো সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপসহ সারাবিশ্ব। এদিকে নেট জিরো ২০৫০ মূল পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণকারী ফসিল ফুয়েল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে। চ্যালেঞ্জ প্রকট অন্তর্বর্তীকালীন জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার নিয়েও। কবে কমবে বিশ্ববাজারে গ্যাস,এলএনজির মূল্য কেউ বলতে পারছে না।

নিজেদের আবিষ্কৃত প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসলেও বাংলাদেশ ২০০০-২০২২ পর্যন্ত পর্যাপ্ত বা পরিমিত গ্যাস অনুসন্ধান করেনি স্থলভাগে। সাগরে বিপুল গ্যাসসম্পদ থাকার সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি আর পেশাদারিত্বের অভাব ও অদক্ষতার কারণে কিছুই করেনি বাংলাদেশ। বিশ্ব বাস্তবতায় অচিরে কিছু পারবে বলে সন্দেহ আছে। অন্যতম বিকল্প কয়লা উত্তোলন বিষয়েও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত বাংলাদেশ। অবকাঠামো সীমাবদ্ধতা আর উচ্চমূল্য কারণে এলএনজি আমদানি এবং সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করা অনিশ্চিত। এমন অবস্থায় গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া এখন সেরা বিকল্প। 

পেট্রোবাংলা মালিকানাধীন উৎপাদনে থাকা গ্যাসক্ষেত্রসমূহের উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২৩৫০ এমএমসিএফডি। গ্যাসকূপগুলোতে উৎপাদন করছে প্রতিদিন। কক্সবাজার উপকূলে থাকা দুটি ভাসমান ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ এমএমসিএফডি সমপরিমাণ আর এলেঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহও প্রায় ১০০০ এমএমসিএফডি কম। গ্যাস সংকটে ভুগছে বিদ্যুৎ, সার উৎপাদন। শিল্পকারখানা, সিএনজি,গৃহস্থালি সব গ্রাহক আছে সংকটে। দেরিতে হলেও পেট্রোবাংলা বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কাজ জোরদার করলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, বাপেক্সের একার পক্ষে বিপুল সংকট সামাল দেয়া সম্ভব নয়। অনেকেই অচিরে জল-স্থলে পিএসসির মাধ্যমে আইওসিদের নিয়োগের সুপ্রিম করছে। অচিরের কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাগিদ দিচ্ছে। একটা অবস্থায়ও সিস্টেম লসের নাম চলছে গ্যাস চুরি, অবৈধ ব্যবহার চলছে। পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলো হিমশিম খাচ্ছে সামাল দিতে।

মোট গ্যাস সরবরাহের ৪০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে, ১৮ শতাংশ ক্যাপটিভ, ১৮ শতাংশ গৃহস্থালি,অবশিষ্ট সিএনজি, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য খাতে। ২ জুলাই ২০২২ গ্যাস সর্বোত্তম ব্যবহারের কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি নামের একটি পেশাদারি প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছিল ডিজিটাল ওয়েবিনার। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকট অধ্যাপক ডক্টর ইজাজ হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল আলোচক ছিলেন প্রাক্তন বুয়েট অধ্যাপক ডক্টর নুরুল ইসলাম, বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ডিন ডক্টর এম তামিম এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য সচিব, ক্লাইমেট ভালনেরাবল ফোরামের উপদেষ্টা, বিএইএস সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুবুর রহমান। ওয়েবিনারে বিপিডিবি চেয়ারম্যান, তিতাস গ্যাস,জিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার, পত্রিকার সম্পাদকসহ বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি পেশাদাররা অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় সম্মত সুপারিশ ছিল- 

বিদ্যুৎ উৎপাদন: 

এখনো গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫০ শতাংশ গ্যাস, ৩৫-৪০ শতাংশ আমদানি কৃত তরল জ্বালানি, ৮ শতাংশ কয়লা এবং ৮ শতাংশ আমদানিকৃত বিদ্যুৎনির্ভর। গ্যাস কয়লা সংকটের কারণে স্বল্পসময়ের জন্য তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সিদ্ধান্ত থাকলেও রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হচ্ছে। গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্ভরযোগ্য না হওয়ায় এবং উচ্চমূল্যের কারণে শিল্প গ্রাহকদের এখনো ক্যাপটিভ থেকে গ্রিড বিদ্যুতে আকর্ষণ করা যাচ্ছে না। আলোচনায় সুপারিশ করা হয় ক্রমান্বয়ে কয়লা বিদ্যুৎ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ আমদানি পরিকল্পিত উপায়ে বাড়তে থাকায় বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমানো জরুরি। কোনো বিশেষজ্ঞ সেকেলে টেকনোলজি ব্যবহারকারী গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার পরামর্শ দেন। সোলার, বায়োবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরামর্শের পাশাপাশি এলপিজি ব্যবহারের বিষয়েও সুপারিশ করা হয়। পরিস্থিতির কারণে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান হরে সরবরাহ যুক্তিযুক্ত মনে করেননি বিশেষজ্ঞরা। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে যারা কো-জেনারেশন বা ট্রাই জেনারেশন করছে তাদের করা বাকি সবাইকে নোটিশ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার সুপ্রিম করা হয়। 

সার উৎপাদন: 

বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার মতোই খাদ্য নিরাপত্তা স্পর্শকাতর।  আর সেই ক্ষেত্রে ভ্যালু এডিশন না হলেও ইউরিয়া সার উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার অব্যাহত রাখা ছাড়া বিকল্প কম আছে। তবে কাফকো, শাহজালাল, যমুনা সারকারখানা এবং বর্তমানে নির্মাণাধীন ঘোড়শাল-পলাশ যুক্ত করে প্রস্তুত হতে থাকা সারকারখানা ছাড়া আশুগঞ্জ, সিইউএফএল সারকারখানা জ্বালানি সাশ্রয়ী নয় বিধায় এগুলো ৩-৪ বছর বিএমএর করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে।অপরদিকে সবুজ সার ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।

গৃহস্থালি: 

বাংলাদেশের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ উৎপাদিত গ্যাসের ১৮ শতাংশ ব্যবহার করছে। ৯০ শতাংশ মানুষ পাইপলাইন গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। গৃহস্থালি গ্যাস ব্যবহার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ আছে, গ্যাস অপব্যবহার হচ্ছে। প্রায়শই দুর্ঘটনা হচ্ছে। অন্যতম বিশেষজ্ঞ ২০২৫ মধ্যে গৃহস্থালি এবং শিল্প গ্রাহকদের এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করে পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার সুপারিশ করেন।

সিএনজি খাত :

এটি মধ্যে এই খাতে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে। পরিবহন খাত, বাণিজ্য অনেকটাই সিএনজিনির্ভর হয়ে আছে। অথচ অটোগ্যাস ব্যবহার অধিকতর নিরাপদ এবং সুলভ। ওয়েবিনার ৫ বছর সময় দিয়ে সিএনজি কষ্ট থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার সুপ্রিম করা হয়।ওয়েবিনার গ্যাস চুরি, অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বোনদের জোরালো সুপারিশ করা হয়। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়।  

শেষ কথা হলো, বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। নতুন অনুসন্ধানে গতি নেই। বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশ একচেটিয়া এলএনজি আমদানি করতেও সক্ষম নয়। একটা বস্তায় পরিকল্পিত উপায়ে গ্যাসের ব্যবহার কার্যকরিভাবে সীমিত করার বিকল্প নেই বলে সবাই সম্মত হন।


শেয়ার করুন