২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৫:২০:২২ অপরাহ্ন


ইসি ও দুর্নীতি দমন সংস্কার সর্বাগ্রে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৪
ইসি ও দুর্নীতি দমন সংস্কার সর্বাগ্রে নির্বাচন কমিশন ভবন


ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণবিস্ফোরণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মাস দেখতে দেখতে চলে গেল। অনির্বাচিত সরকার কিন্তু অনির্দিষ্টকাল চলবে না। সারা দেশে এখনো কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নতুন রূপে দখল হচ্ছে। বিরোধী মত দমনের পুরোনো কৌশল চালু আছে। হাজারো সমস্যা সামাল দিয়ে স্থিরতা আনার নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই দেশ এখনো প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভাসছে। পতিত সরকারের আমলে সরকারের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকারী অনেকেই এখন হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অরাজনৈতিক ব্যাক্তিদের নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের মতো সমস্যাসংকুল দেশ পরিচালনা করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া তাদের পক্ষে সহজ নয়।

রাজনৈতিক দলগুলো এটি মধ্যেই কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। সরকারকে কিন্তু অন্যসব কাজের পাশাপাশি অচিরেই নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার করতে হবে। এ দুটি কমিশনে বর্তমান ব্যক্তিদের রেখে কিন্তু সরকার পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। সিটি কউন্সিলগুলোসহ সারা দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কার করা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে কয়েকটি সিটি কাউন্সিল নির্বাচন করে নির্বাচনের মান যাচাই করতে হবে। কিন্তু তার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে পাচারকৃত অর্থ সম্পদ বিনিয়োগ করে দুর্নীতিবাজ চক্র একের পর এক সংকট সৃষ্টি করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রশক্তি অনির্দিষ্টকাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রহরা দেবে না। ছাত্রসমাজকে অচিরেই পড়ার টেবিলে যেতে হবে। দেশ চালাবে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল।

অনেক কথা বলা হলেও দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসছে বলে মনে হয় না। ১৫ বছর আন্দোলন করে বার্থ একটি দল ভাবছে তারা যেন যুদ্ধ জয় করেছে। ছাত্র-জনতার খুনের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিচার প্রক্রিয়াকে কঠিন করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় কিন্তু অনেক পুলিশ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোক মারা গাছে, থানা লুটপাট হয়েছে, দুষ্কৃতকারীরা নিষিদ্ধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই নিশ্চিত হয় যাবে কেন এতো নিষ্ঠুরভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হলো।

দুর্নীতি দমন কমিশন কিন্তু ১৫ বছরে দুর্নীতি দমনের কাজ করেছে সামান্য। বরং শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবাজদের অর্থের বিনিময়ে অল ক্লিয়ার প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। ২০১০-২০২৪ কমিশনে কাজ করা চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করলেই প্রমাণ মিলবে কমিশন কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কাজ করা একজন মধ্যম সারির সাহসী কর্মকতা মোহাম্মদ শরীফুদ্দিন চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কাহিনী তদন্ত করে উন্মুক্ত করে সাড়া ফেলেছিলেন। চাকরি হারিয়ে এখন দুর্দশাগ্রস্ত অথচ দুর্নীতিবাজরা বহাল তবিয়তে আছে। আজ যে শাহ আলম, সালমান রহমান, জেনারেল আজিজ অথবা বেনজীরের সাগর চুরির কাহিনি শোনা যাচ্ছে, কী করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন?

যাক সেসব প্রসঙ্গ অতি অত্যাবশ্যক কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার পাশাপাশি সরকারের উচিত প্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ঢেলে সাজানো। সময় কিন্তু দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। চারিদিক থেকে নতুন সমস্যা ঘিরে ধরবে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে।

শেয়ার করুন