২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৬:৪০:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


হঠাৎ ভারতের সুর বদলের নেপথ্যে কী
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
হঠাৎ ভারতের সুর বদলের নেপথ্যে কী বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা


মাত্র এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের সার্বিক বিষয়ে ভারতের শীর্ষ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বেশ কড়া বার্তা পাওয়া দেয়া হয়েছিল। ভারতের ওইসব কড়া বার্তা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলকে বেশ নাড়া দেয়। জল্পনা- কল্পনা দেখা দেয় যে, প্রতিবেশী দেশটি তাহলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলকে পছন্দ করছে না? আরো পরিস্কার করে বলতে হয় যে তাহলে কি ভারত নাখোশ? এমন জল্পনা-কল্পনার মাঝে এখন হঠাৎ করে গত কয়েকদিনে ভারতের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের গলায় বেশ নরম সুর লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি বেশ রহস্যের সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে। ধারণা করা হচ্ছে, মাঝে কিছু ঘটে গেছে বা ঘটতে যাচ্ছে যা ভারতের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ হয়ে গেছে বা যাবে। এর পাশাপাশি হয়তবা তৈরি হয়েছে বা হতে যাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে বিচরণ করে এমন তথ্যের বেশ কয়েকটি আলামত মিলেছে।

মাত্র কয়েকদিন আগের ভারতের বক্তব্য

গত মাসের শেষের দিকে নয়াদিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য উৎসবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়। এই দুই প্রতিবেশী দেশ খুবই বিশেষ ইতিহাস ধারণ করে, যার শেকড় ১৯৭১ সালে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এরপর বলা যায় জয়শঙ্কর ক্ষোভের সাথেই বলেছেন, ‘প্রতিদিন অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ একজন ওঠে এবং সবকিছুর জন্য ভারতকে দায়ী করে, এমন সব বিষয়ের জন্য এই দোষারোপ করে যদি আপনি খবরগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন সেগুলো খুবই হাস্যকর। আপনি এক পক্ষ থেকে বলতে পারেন না, আমি এখন আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। কিন্তু আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি এবং সবকিছুর জন্য আপনাকে দায়ী করি, তাহলে তা ভুল হয়। এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, যা তাদের নিতে হবে।’ জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ঢাকাকে খুবই স্পষ্ট একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। সেটি হলো ভারত দেখতে চায় ‘এসব বন্ধ’ হয়েছে এবং স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরায় চালু হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের ওপার থেকে ক্রমাগত আসা বিদ্বেষী বার্তায় অসন্তুষ্ট নয়াদিল্লি। জয়শঙ্কর আরও বলেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিয়ে নয়াদিল্লিকে অব্যাহতভাবে দোষারোপের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কের দাবি করতে পারে না ঢাকা। ভারতের জন্য প্রতিকূল এমন বার্তা বা সংকেত অবশ্যই দেখতে চায় না নয়াদিল্লি- এই ছিলো জয়শঙ্করেরর মুখে ভারতের বার্তা। যা বলা যায় একটা শক্ত প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য। 

কড়া প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশেরও

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরের দিনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিক্রিয়া জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি সাফ সাফ বলে দেন, ভারতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী সম্পর্ক চায়। এর পাশাপাশি তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশকেই সামাল দিতে হবে। তবে ভারতের আতিথেয়তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যে আগুনে ঘৃণাহুতি, এটা স্বীকৃত। একইভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বাংলাদেশেরই বিষয়। এটি ভারতের বিষয় হতে পারে না। ভারত কেমন সম্পর্ক চায়, সে সিদ্ধান্ত ভারত নেবে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তবে উনি (এস জয়শঙ্কর) কিছু বলেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্নজন সরকারের ভেতর থেকে কথাবার্তা বলছেন। আমি এটার (জয়শঙ্করের বক্তব্য) ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করতে চাই না। এ রকম কথা আমাদের এখান থেকে বলছে, ওনাদের ওখান (ভারত) থেকেও বলছে। ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়ে দেন। ওনাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তো অহরহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়েই তো আমরা সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছি। কাজেই আমাদের অবস্থান হলো আশপাশ থেকে দু-চারজন কী বলল না বলল, সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।’

হঠাৎ সুর বদল

দুই দেশের মধ্যে যখন বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য চলছিল ঠিক তখনই ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী গত ৮ মার্চ শনিবার বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক এই মুহূর্তে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারতের আশপাশে তার কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক থাকলে সেটা তার জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। তবে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। অনেকটা আশ্বস্তার সাথে জানালেন, ‘বাংলাদেশের সম্পর্কে যে প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য যথেষ্ট সময় এখনো হয়নি। আগে একটি নির্বাচিত সরকার আসুক, তারপর দেখা যাক সম্পর্ক কোনো দিকে যায়। তারপর দেখা যাবে কী করা যায়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে আমি বলব, বর্তমানে (ভারতের) সেনাবাহিনীর সঙ্গে (বাংলাদেশের) সেনাবাহিনীর সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা নিয়মিত নিজেদের মধ্যে নোটস আদান-প্রদান করি (অর্থাৎ কথাবার্তা চালাই)। এটা এই কারণে করা হয়, যাতে (কোনো বিষয়ে) সন্দেহের কোনো অবকাশ না থাকে।’

রাজনাথ সিং বললেন সুসম্পর্ক চায় ভারত

এদিকে সেনাপ্রধানের দেয়া এমন বক্তব্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, ভারত সবসময় প্রতিবেশীদের সঙ্গে শক্তিশালী সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শনিবার দেশটির বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশীয় নিউজ সার্ভিসকে (আইএএনএস) দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। রাজনাথ সিং আরও বলেন, ‘ভারত সবসময় তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং বাংলাদেশও আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা সবসময় আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। কারণ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) অটল বিহারী বাজপেয়ী বলতেন, আমরা আমাদের বন্ধুদের পরিবর্তন করতে পারি; প্রতিবেশীদের নয়। সুতরাং আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।’

বিশ্লেষণে কি বলে

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এর এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল বিভিন্নভাবে বিম্লেষণ করতে চান। বেশ কয়েকজন কূটনীতিক ও রাজনীতিক ভারতের এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে দেশ প্রতিনিধিকে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন, ভারতের এমন বক্তব্য আসলে দেশটি তার নিজ দেশের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপারে তাদের অবস্থান সৌহার্দ্যপূর্ণ করতে চাইছে বা হয়ে গেছে। কয়েকজন অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের মত হচ্ছে একটা ধারণা জন্মেছিল যে আমেরিকায় নির্বাচনের পরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বন্ধুত্বের কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে দেশটি (ভারত) অনেক শক্তিশালি অবস্থান নিতে পারবেন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ট্রাম্প। কুর্সিতে বসেই একাধিক দেশের সঙ্গে বলা চলে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছনোর আগেই ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি আনার কথা ঘোষণা করে দেন এই রিপাবলিকান নেতা। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই বেশ কিছু বদলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আসলে ভারতের তেমন মন:পুত হয়নি। বরং শুল্ক ইস্যুতে ভারতের নাম করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক মন্তব্যে নরেন্দ্র মোদী সরকার বিব্রত, যদিও এব্যাপারে তিনি একটি কথা উচ্চারণ করেননি তিনি বা ভারতের কেউ।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের যুক্তরাজ্য সফরকালে তাঁর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের একটি ঘটনায় ভারত বিশেষ করে মোদী সরকার বিব্রত। জয়শঙ্করের যুক্তরাজ্য সফরকালে তাঁর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের পতাকার মতো দেখতে তিনরঙা লম্বা এক টুকরো কাপড় দুই হাতে মেলে ধরে চিৎকার করতে করতে একটি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ান এক ব্যক্তি। তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেছে পুলিশ। গাড়িতে জয়শঙ্কর বসা ছিলেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। ঘটনার সময় খালিস্তানপন্থী পতাকা হাতে এক দল মানুষকে চিৎকার করে শ্লোগান দিতে দেখা যায়। শোনা যায় এসব বিষয়ে ভারত এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিকভাবে বেকায়দায়। 

অন্যদিকে ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যূত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়েছে, সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাবাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায় ব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়। এসব ঘটনায় অধিকতর ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। 

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি ভারতের জন্য বেশ বিব্রতকর। কারণ দীর্ঘ ১৭টি বছর বাংলাদেশের জনগণ নয়, ভারত ও মোদি সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই তাদের আস্থাভাজন বলে মনে করে আসছে। দিয়ে এসেছে লাগাতার সমর্থন। কিন্তু এখনো ভারত সে-ই অবস্থানে থাকলে বা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেখ হাসিনাকে সমর্থন বা কোনো প্রকার ইন্ধনে সহায়তা দিতে থাকলে তা হবে দেশে বিদেশে ভারতের জন্য বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী জন্য বিপর্যয়কর। নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পড়বে ইমেজ সঙ্কটে। কেননা ইতোমধ্যে তার দেশের ভেতরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুসে উঠে বলেছেন কিছু কথা। বিজেপিকে আবারও সাম্প্রদায়িক অভিহিত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দলটির আয়ু আর ২-৩ বছর আছে। তার মতে, ২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হবে নরেন্দ্র মোদির দলের রাজত্ব। এরই মধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট উপাধি নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া বা দেয়াকে মোদি সরকারের জন্য কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করে তার দল ও শুভানুদায়ীরা। কারো কারো মতে বাস্তবতা মেনে নিয়ে এবং দেশে বিদেশে ভারতের এমন বেহাল অবস্থা সামাল দিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার কিছুটা নমনীয় হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে তা-র একান্ত প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে। যে দেশটি বাংলাদেশের ৭১’এর পাশে দাঁড়িয়েছিল।

ইউনুসেরও সৌহার্দ্যপূর্ণ বার্তা

সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিবিসির সাংবাদিক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি দেখা গেছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলে ফেল্লেন খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। তিনি এব্যাপারে আরও পরিস্কার করে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারবো না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। এরপরই বিবিসি বাংলা থেকে আরেকটি প্রশ্ন করা হয়। ভারত সরকারের সাথে আপনার সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে? প্রধান উপদেষ্টা এসময় বলে, ‘সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। তারা এখানে আসছে, আমাদের লোকজন সেখানে যাচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার মোদীর সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহেই কথাবার্তা হয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগ নিয়ে বার্তা

এর পাশাপাশি ড. ইউনুস আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা না করা নিয়েও একটি বার্তা দেন। বিবিসি বাংলার সাংবাদিক জানতে চান আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছেন। এটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানটা কী? এব্যপারে প্রধান উপদেষ্টা জানান ওই যে ঐকমত্য। আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করবো। এরপর জানতে চাওয়া হয় এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি অবস্থান নেই বা আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা রাজনীতি করবে কিনা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না?

এতে প্রধান উপদেষ্টা শুধু বলে আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিৎ, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ভারত ও আওয়ামী ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান অবস্থানে মোদি সরকার তাদের অতীত অবস্থানে বেশ পরিবর্তন এনেছেন বলে মনে করা যায়। এর পাশাপাশি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার নিয়ে জাতিসংঘের রিপোট ও একিই সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু ও নরেন্দ্র মোদীর তার দেশের ভেতরেই নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা তাকে কিছুটা বেকায়দা রেখেছে। অন্যদিকে ট্রাম্পকে নিয়ে ভারতের অধিক প্রত্যাশার জায়গাটাতেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এসব মিলিয়ে প্রতিবেশী দেশটির সাথে ছয় মাস আগের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ভারত। এখন দেখা যাক ভারতের এই মত বদল কতদিন অব্যাহত থাকে।

শেয়ার করুন