৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:১১:৩৮ অপরাহ্ন


ঘোরতর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
ঘোরতর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ


নানা কারণে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কাউন্সিলের মেয়র হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব প্রদানের আইনি জটিলতা নিয়ে রাজপথে মুখোমুখি বিএনপি এবং এনসিপি। বিএনপি এবং ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে দক্ষিণ সিটি কাউন্সিলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারীরা দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি ইশরাককে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব প্রদানকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপিকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করছে। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভক্তি নিয়ে জারিকৃত সরকারি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আন্দোলন করছে বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

কিছুদিন আগেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের যৌথ আন্দোলন ঢাকার রাজপথ স্থবির করেছিল। নতুন করে নেমেছে সচিবালয়ে কতিপয় কর্মচারী। আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। ঈদের আগে অধিকাংশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা বেতন বোনাস না পেলে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতো কিছুর মাঝে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ মহলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে গেল। সবকিছু জনতার কাছে প্রকাশ করা না হলেও জানা গেছে মায়ানমারের জন্য কথিত মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর পরিচালনায় বিদেশিদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি আছে সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনী চায় ডিসেম্বর ২০২৫ জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন শেষে ব্যারাকে ফিরে যেতে।

বিদ্যমান এবং বর্তমান ঘোলাটে পরিস্থিতি প্রমাণ করে দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পুরোপুরি সক্ষম নয় অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষাঙ্গন অস্থির, শিল্পক্ষেত্রে নানা সংকট, রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। সরকারের সংস্কার কার্জক্রম সব ক্ষেত্রেই বাধার মুখে পড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের দায়িত্বের বাইরে যেয়ে কিছু কাজ করার চেষ্টা করে নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলেছে। 

মনে রাখতে হবে দেশে কিন্তু সামরিক শাসন জারি হয়নি, কনস্টিটিউশন বলবৎ আছে। সর্বোচ্চ আদালতের একটি বিশেষ পরামর্শ নিয়ে কেবল মাত্র নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করার জন্য এবং কিছু অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ, স্বাধীন ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্বে আছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর বাইরে কোনো কিছু করার অধিকার নেই অনির্বাচিত সরকারের। কিন্তু ইতিমধ্যেই সরকার তাড়াহুড়ো করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কিছু কাজ করে নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলেছে। এখন সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার এজেন্ডা প্রণয়ন করে দ্রুত নির্বাচন করা দিন দিন দূরূহ হয়ে পড়ছে। অবস্থাদৃষ্টে অনেকের মনেই সন্দেহ জাগছে দেশি-বিদেশি কোনো কোনো মহলের প্ররোচণায় সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিস্থিতি জটিল করছে কি না। 

কেউ চায় না দেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের মতো বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করা হোক। দেশজুড়ে বর্তমান এবং ঘনীভূত সংকট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সক্রিয় পার্লামেন্ট। অন্তর্বর্তী সরকার নিঃসন্দেহে উপলব্ধি করছে সব সমস্যার সমাধান করা তাদের ক্ষমতার বাইরে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি উঠছে। এমন অবস্থা চালু থাকলে সরকারপ্রধান বিব্রত হবেন। তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচন নিয়ে ঘোলা পানি সৃষ্টি না করে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রেন চালু করা উচিত। সরকার নিজেদের কার্যক্রম বহুমাত্রিক বিস্তৃত করে জগাখিচুড়ি করে ফেলে অনিশ্চয়তর সৃষ্টি করেছে। এখন কিছু ক্ষেত্রে নিজেরাই ফ্যাসিস্টদের মতো মনোভাব দেখাচ্ছে। 

জানি না ঘনায়মান পরিস্থিতিতে কখন ন্যূনতম ইস্যুভিত্তিক রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে ইতিহাসকে ধারণ করেই দেশ এগিয়ে যাবে। ইতিহাসের মহানায়ক খলনায়কদের ভূমিকা কেউ স্থায়ীভাবে মুছে দিতে পারবে না।

শেয়ার করুন