প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন অভিযান জোরদারের হুমকির মুখে শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ৩১ আগস্ট তিনি এক নির্বাহী আদেশে শহরের পুলিশ বিভাগকে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টদের সঙ্গে বিশেষত সিভিল অভিবাসন কার্যক্রমে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ টহলেও পুলিশের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেয়র জনসন বলেন, আমরা আমাদের রাস্তায় ট্যাংক দেখতে চাই না। আমরা চাই না পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হোক। কোনো দাদি-নানিকে গোপন ভ্যানে তুলে নেওয়া হোক কিংবা গৃহহীনদের হয়রানি করা হোক।
নির্বাহী আদেশে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে ইউনিফর্ম পরতে হবে এবং মুখোশ পরা নিষিদ্ধ থাকবে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের ফেডারেল এজেন্টদের থেকে আলাদা করে চিনতে পারেন। তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের কিছু কর্মকর্তা মুখ ঢেকে থাকেন। সম্প্রতি ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে শিকাগো এবং ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎসকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি লিখেন-গত সপ্তাহান্তে শিকাগোতে ছয়জন নিহত এবং ২৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অথচ গভর্নর বলছেন, তিনি কোনো সহায়তা চান না! তিনি পাগল! তিনি যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমরা নিজেই ব্যবস্থা নেবো।
এপি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শিকাগো, নিউইয়র্ক এবং লস অ্যাঞ্জেলেসসহ অন্যান্য সাংচুয়ারি সিটিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর অভিযান বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম জানিয়েছেন, শিকাগোতে অতিরিক্ত সম্পদ ও জনবল পাঠানো হবে, তবে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এছাড়া, নৌবাহিনীর নেভাল স্টেশন গ্রেট লেইকস থেকে অভিবাসন অভিযান পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
হোয়াইট হাউস মেয়র জনসনের উদ্যোগকে জনসংযোগমূলক নাটক বলে অভিহিত করেছে। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন বলেন, ডেমোক্র্যাট মেয়ররা যদি অপরাধ দমনে মনোযোগ দিতেন, তবে তাদের শহরগুলো আরো নিরাপদ হতো। কিন্তু তারা ট্রাম্প বিদ্বেষে আক্রান্ত হয়ে এখন রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে ইলিনয়ের গভর্নর প্রিৎসকার সিবিএসের ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট যদি নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী নামাতে চান, তাহলে সেটি সরাসরি সংবিধানের ওপর আক্রমণ। ট্রাম্প শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং ২০২৬ সালের নির্বাচন বিঘ্ন করার ষড়যন্ত্র করছেন।
শিকাগোতে বর্তমান অভিবাসন পরিস্থিতি শুধু একটি নগরী নয়, বরং গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসন, জননিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে গভীর বিতর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মেয়র ব্র্যান্ডন জনসনের নির্বাহী আদেশ স্থানীয় সরকারগুলোর স্বাধীন অবস্থান ও সংবিধানিক দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ এ বিতর্ককে আরো তীব্র করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।