২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:২০:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


সাইফুলের নেই ৯০ হাজার ডলার
হ্যাকারদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ কমিউনিটি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২২
হ্যাকারদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ কমিউনিটি


হ্যাকারদের তৎপরতা কম-বেশি সবসময় ছিলো। কিন্তু করোনার সময় এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে হ্যাকারদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটি। হ্যাকারা প্রথমেই ফোন হ্যাক করে এবং ফোন হ্যাক করার সাথে সাথেই সমস্ত ইনফরমেশন তারা পেয়ে যায়। আজকাল অনেকেই ফোনের মধ্যে ব্যক্তিগত ইনফরমেশন রাখেন। এই সব ইনফরমেশনের মধ্যে রয়েছে আইডি, সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর এবং ব্যাংকসহ অন্যান্য দরকারি ইনফরমেশন। এই সব ইনফরমেশন পাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হ্যাকার ব্যাংক থেকে, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকের নামেই ব্যাংক কার্ড করে প্রতারণা করছে। জানা গেছে, হ্যাকাররা নানাভাবে সাধারণ মানুষকে ফোন দেয়, আবার অনলাইনে লোভনীয় অফার দেন।

যারাই তাদের ফাঁদে পা দেয় তাদেরই সর্বনাশ করে। আবার রিপোর্ট রয়েছে বড় বড় ফোন কোম্পানির তথ্য হ্যাকাররা হ্যাক করে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি হ্যাকারদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মানুষের পাশাপাশি ফোন কোম্পানী এবং ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিচ্ছেন। বিলিয়ন বিলিন ডলার খরচ করছেন হ্যাকারদের প্রতারণা বন্ধে। এক সময় শোনা যেতো প্রতারকরা শুধু ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতো। কিন্তু এখন যোগ হয়েছে শেয়ারবাজারের ইনভেস্টমেন্ট।

বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিম মুখ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, সব মিলিয়ে তার ব্যাংক এবং শেয়ারবাজার থেকে প্রতারকরা প্রায় ৯০ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ২৯ জুন ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি। দেখলাম আমার ফোন কাজ করছে। আমি কোরআন শরিফ পড়ছিলাম। কোরআন শরিফ পড়ে সকাল সাতটা সময় আমার স্যামসং ফোনটি কাজ করছে না। আমি টি মোবাইল ব্যবহার করি। অন্য কোনো কারণ ভেবে আমি ফোনটি বন্ধ করে রেখে দিই। বসে বসে টিভি দেখছিলাম। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে চালু করার পর আবারো দেখলাম ফোন কাজ করছে না এবং আমার ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, ফোন রেজিস্ট্রার্ড না। আবারো ফোন বন্ধ করি। তখন আমি বসি ই-মেইল দেখতে।

ই-মেইলে ম্যাসেজ আসে আমার টিডি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০১ ডলার জেল করা হয়েছে সকাল ৭টা ১ মিনিটে। জেল করেছেন মোহাম্মদ করিম। পরবর্তী ১ মিনিটের মধ্যে আরো ৬টা ট্রানজেকশন করা হয়েছে। মোহাম্মদ করিম এবং ওয়াদুদ ইসলাম এসব ট্রানজেকশন করছেন। অ্যামাউন্টগুলো হচ্ছে ৪৫০, ১০১, ৪৫০ এবং ৫০১ ডলার। তিনি বলেন, আমার আরেকটি ফোন ছিলো। সেই ফোন থেকে টিডি ব্যাংকে কল করি। ফোনে কাজ কথা বলার পর তারা আমাকে ব্যাংকে যেতে বলে। তাড়াতাড়ি করে আমি সকাল ৯টা দিকে ব্যাংকে যাই। ব্যাংকে গিয়েও লাইনে পড়ে গেলাম। আমাকে ডাকা হলো সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের সময়। ব্যাংক কর্মকর্তাকে সমস্ত ঘটনা বর্ণানা করি।

ততোক্ষণে টিভি ব্যাংক থেকে প্রতারকরা ১৯০০ ডলার নিয়ে যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা আমাকে জানালো প্রতারকদের কাছে আমার সব তথ্য আছে। সুতরাং একই অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে না। তারা পরামর্শ দিলে নতুন অ্যাকাউন্ট করতে এবং অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে রাখতে। আর আমার অর্থ ফেরত সম্পর্কে বললো, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। এই অর্থ ফেরত আসতে ৬ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। দুপুর ১২টা সময় আমি বাসায় আসি। বাসায় এসে নাশতা খাই এবং সিটি ব্যাংকে যাই। সেখানেও আমার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গিয়ে দেখি সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকেও ৩৪০০ ডলার নিয়ে গিয়েছে। সেখানেই অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করি। এরপর আমি আমার অফিসে আসি।

ই-মেইল চেক করে দেখি আমার অ্যাকাউন্ট জিরো দেখাচ্ছে। আমার হাত-পা প্রায় ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। সাথে সাথেই কল দিই রবিন হুডকে। শেয়ারবাজারে আমার ইনভেস্ট ছিলো ৬৪ হাজার ডলার। আমার সমস্ত শেয়ার মাত্র ৩৪ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেয়। তিনি বলেন, শেয়ারের দাম কমে যাওয়া আমি তা বিক্রি করছিলাম না। তারা আমার কাছ থেকে আমার আইডি নেয়। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে এবং অ্যামাউন্ট ৩ দিনের জন্য হোল্ড করে। কয়েন বেইজ শেয়ার থেকে ১৯১৪ ডলার নিয়ে যায়। সাথে সাথে আমার অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার ডলার প্রতারণা করা হয়। শেয়ারবাজার থেকে জানানো হয়েছে কয়েনের শেয়ারগুলো পাওয়া যাবে না।

অন্যগুলো তারা রিকোভারি করবে। তবে সময় লাগবে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকের ৩৪০০ ডলার ফেরত আসে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর মতো ঝামেলা এবং হয়রানি আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয়। আমার সমস্ত কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি অনেক জায়গায় চেক দিয়েছি, সেগুলো বাউন্স হচ্ছে। আমার ক্রেডিট স্কোর ইতিমধ্যেই নেমে গিয়েছে। তিনি বলেন, আরো ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে আমার নতুন অ্যাকাউন্টেও তারা আরো দুটো ফোন নম্বর যোগ করেছে। সেই নম্বরগুলো হলো- ৩৪৭-৫৩৮-৬৪৪৯ এবং ৩০৫-২১৮-১৬১৫। আমি ব্যাংককে কল করে সেই নম্বর রিমুভ করি এবং ঘটনা ব্যাখ্যা করি। তিনি আরো বলেন, আমি পুলিশ প্রিসেক্টেও গিয়েছিলাম, তারা আমাকে ব্যাংকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেয়। এসব ঘটনার কোন রিপোর্ট নাকি হয় না। তিনি বলেন, এখন টেনশনে আমার ঘুম আসে না। মহাদুশ্চিতায় রয়েছি। তিনি সবাইকে সতর্ক হবার আহŸান জানান।

 

শেয়ার করুন