২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মহাদুর্যোগ ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২২
মহাদুর্যোগ ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন


সরকারের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ 

করোনা অতিমারীর তাণ্ডব সামাল দিয়ে নতুন স্বাভাবিক বিশ্বে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলো অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও। অতিমারীর অভিঘাতে উল্লেখযোগ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেলেও সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু ভূ-রাজনীতির অশুভ প্রভাবে মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক এক জ্বালা-যন্ত্রণা বাড়তেই থাকবে। নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা এবং এর সঙ্গে যোগ হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, নতুন মহাসংকট সৃষ্টি করছে। জ্বালানি মূল্য বিশ্ববাজারে আকাশ ছুঁয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে হাহাকার বাড়ছে। যুদ্ধ যতই দীর্ঘস্থায়ী হবে, সংকট ততই শাখা-প্রশাখা মেলবে। মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে। যদিও বাংলাদেশের উদ্যমী কৃষক খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখায় সহসা হয়তো দুর্ভিক্ষের শঙ্কা নেই।

তবুও জ্বালানি মূল্য গগনচুম্বী অবস্থানের কারণে সেচের খরচ বাড়বে। দেশব্যাপী খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ খরচ (পরিবহন ও অন্যান্য) বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাবে। আমদানিনির্ভর জ্বালানিখাতের সুরক্ষায় সরকার বাধ্য হবে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সারের মূল্য সমন্বয় করতে। সরকার এখন পর্যন্ত মোটামুটি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসন্ন মহাসংকট মোকাবিলায় কিছু ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় শীর্ষ পর্যায়ের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় হওয়াও বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। না হয় মহাদুর্যোগ সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশ-জাতির জন্য ভয়ানক এক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির অবতারণা ঘটবে।   

গত ১২ মার্চ ২০২২ বিশ্ববাজারে কয়লার মূল্য ২০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫০ মার্কিন ডলার হয়ে গেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ১৪০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠে এখন ১১০-১১৫ মার্কিন ডলারে ওঠানামা করছে। বাংলাদেশ জ্বালানির তেলের পুরোটা এবং কয়লা, গ্যাস বিশ্বজ্বালানি বাজার থেকে আমদানি করে।  বাংলাদেশকে জ্বালানি অ্যান্ড বিদ্যুৎখাতকে দীর্ঘদিন বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া যাবে না। অবশ্যই সহনীয় পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি করতেই হবে।  

সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুব নাজুক

২০২২, ২০২৩  সালে বেশকিছু মেগা প্রকল্প চালু হবে। বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতা বাড়তে থাকবে। এমনিতেই বাংলাদেশ ২০২৬ থেকে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে। অথচ দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভীষণ সংকট। বিরোধী রাজনীতি ক্ষয়িষ্ণু। সরকারিদলের সঙ্গে আদৌ মতের মিল নেই। গোটা বিশ্ব যখন যাচ্ছে একটা সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, তখন বাংলাদেশও মুক্ত নয়। 

এরই মধ্যে সামনেই ২০২৩ জাতীয় নির্বাচন

ইতিমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রধান বিরোধীদলসহ মূল স্রোতের কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে যে সকল দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আগ্রহী হবে না। অথচ সংবিধান অনুযায়ী কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য সরকার রাজি হবে না। রাজপথে আন্দোলন করার সামর্থ্য বিরোধীদলের নেই। এই ধরনের কার্যক্রম বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা সৃষ্টি করবে। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে।

একমাত্র বিকল্প সরকার প্রধান উদ্যোগী হয়ে রাজনৈতিক সংলাপ এবং ন্যূনতম ইস্যুভিত্তিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার ছাড়া আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে যাবে। সরকার যদি নিজেদের জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই থাকে (না ভাবার যৌক্তিক কারণ নেই) তাহলে সকল দলের অংশগ্রহণে স্বচ্ছ নির্বাচনে বাধ থাকার কথা না। কিন্তু কোথায় যেন কিছুটা গরমিল হচ্ছে। আর সে জন্যই জাতীয় ঐক্যেও অনেকের অনীহা দেখাতে পারে। তবে সরকার প্রধান এ উদ্যোগ নিলে হয়তো সব মিটমাট হয়ে যাবে। দেশের স্বার্থে, মেগা প্রকল্পসমুহের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এরকম উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবিও। 

খাদ্য নিরাপত্তা নিরঙ্কুশ করার চ্যালেঞ্জ 

কোভিড অতিমারীর অভিঘাতের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয়ে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। যদিও বাংলাদেশ অন্যান্য অনেক দেশ থেকেও আপাতত স্বস্তিতে আছে, তবুও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি উদ্বিগ্ন হবার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন টিসিবি পরিচালিত সুলভ মূল্যে খাদ্য বিতরণ সময়ে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি সীমিত আয়ের মধ্যবিত্তদের সমাবেশ ঘটছে। যদিও আমি আতঙ্কিত নই, তবুও সতর্ক হবার প্রয়োজন অনুভব করছি। বলবো না দায়িত্বহীন বিরোধীদলীয় নেতাদের মতো যে দেশে দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কঠিন সময় আসছে। সর্বত্র কৃচ্ছ্রতাসাধন এখন অতি প্রয়োজন। খাদ্য পণ্যের সাপ্লাই চেইন থেকে দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেটের আগ্রাসন নির্মূল করতে হবে। জনতার দুর্ভোগ নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বজ্বালানি বাজারে আকাশছোঁয়া মূল্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে অশুভ প্রভাব সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যেন খাদ্যপন্ন পরিবহনে সংকট না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ী মাজুদদারদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

বাংলাদেশে খাদ্য পণ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি সন্তোষ জনক। বিতরণ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। তবুও সম্পদের সুষম বণ্টন না হওয়ায় করোনার অভিঘাত অন্তত ৩ কোটি প্রান্তিক গোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা সকল স্তরে খুব একটা বেড়েছে বলে মনে হয় না। সরকার ইতিমধ্যেই টিসিবির মাধ্যমে সুলভে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। দেশব্যাপী এই কার্যক্রম আরো নিবিড় আর জোরদার করতে হবে। সরকার ভোজ্য তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট মওকুফ করেছে, ১ কোটি প্রান্তিক পরিবারকে  সুলভমূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণের জন্য কার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যদি নিবিড় তদারকি করা হয়, তাহলে অন্তত ৪ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকারকে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নজরদারি করতে হবে। কৃষি উপকরণ- সার, বীজ, সেচ উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে হবে। যতটা সম্ভব কৃষকের নিকট থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সরাসরি কিনতে হবে। 

খাদ্য নিরাপত্তা জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট। এটি নিতে রাজনীতি করা অমানবিক। অথচ একদিকে যেমন বিরোধী নেতারা দায়িত্বহীনভাবে কথা বলছে, অন্যদিকে সরকারি দলীয় নেতারাও কাজ না করে অযথা বাগাড়ম্বর করছে। সরকারের উচিত দেশপ্রেমী তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজে লাগানো। বাংলাদেশের সচেতন মিডিয়াকে অনুরোধ করবো গরিব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য সচ্ছল মানুষদের উদ্বুদ্ধ করার। কোনো খাদ্যপণ্য যেন অপচয় না হয়, সরকারের আন্তরিক প্রয়াস যেন দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্তদের করালগ্রাসে ব্যার্থ না হয়, সেদিকে মিডিয়াকে সচেতন থাকতে হবে। আসন্ন রোজার মাসটি ভালোয় ভালোয় পার হলে নতুন ফসল সংকট কাটবে। আশা করি সরকারের সকল প্রয়াস সার্থক হবে। বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তা নিরঙ্কুশ করতেই হবে। পেটে ভাত থাকলে ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিং সহনীয় হবে।


শেয়ার করুন