২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাড়ি ক্রয়ে ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট আবশ্যক নয়
ড. শেখ রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২২
বাড়ি ক্রয়ে ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট আবশ্যক নয়


অনেককেই কথায় কথায় বলতে শুনি, ‘বাড়ি কিনতে ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবার মতো টাকা আমার নেই।  তাই বাড়ি কেনার চিন্তা করি না।’ এটি খুবই ভুল ধারণা। একথা ঠিক যে আপনি যতো বেশি ডাউনপেমেন্ট দিতে পারবেন, আপনার ‘এপিআর’ (অ্যানুআল পেমেন্ট রেট) ততো কমে যাবে, ততো সহজে গৃহঋণ পাবেন। তবে এপিআর কমানোর আরো অনেক নীতি আছে সেগুলো আর একদিন আলাপ করবো। আজ আলাপ করি- কেন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ডাউনের আবশ্যকতা নেই। আর কাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।

আমেরিকাতে ‘কনভেনশনাল কনফরমিং’ গৃহঋণ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয়।  ফ্যানিমে, ফ্রেডিম্যাকের মতো বিশাল আধাসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ঋণের পেছনে মূল অর্থ জোগান দিয়ে থাকে। এই ঋণে আবশ্যক ডাউনপেমেন্ট হচ্ছে মাত্র ৩.০ শতাংশ। পূর্ণ সরকারি গৃহায়ন প্রতিষ্ঠান ‘এফএইচএ’ (ফেডারেল হাউজিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর অধীনস্থ গৃহঋণগুলোতে আবশ্যক ডাউনপেমেন্ট ৩.৫ শতাংশ।  আবার ‘ইউএসডিএ’ (ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার)-এর ঋণের ডাউন ০ শতাংশ। আরও আশাবাদের বিষয় হলো উপরোক্ত ৩-৩.৫ শতাংশ ডাউন এবং ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া খরচ (ক্লোজিং কস্ট) মেটানোর জন্য উপহার, কিংবা অনুদান ঋণ পাওয়ারও সুযোগ আছে- এই বিষয়টিও আর একদিন আলাপ করব। নিচে সর্বসাধারনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করা হলো। 

এফএইচএ মর্টগেজ: ৩.৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট

এফএইচএ’র কর্মসূচি নিয়ে প্রথম আলোচনা করতে চাই এই কারণে যে, এদের ঋণ পেতে সবচেয়ে কম আর্থিক সামর্থ্য এবং ক্রেডিট স্কোর দরকার হয়। আর এদের ইন্টারেস্ট রেট কনভেনশনাল গৃহঋণের চেয়ে কম।  ডাউনপেমেন্ট সামান্য বেশি হলেও, একই (৩.৫ শতাংশ) হারে ২-ইউনিট বাড়ির জন্যও ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু কনভেনশনাল ঋণে ২-ইউনিট বাড়ির জন্য ১৫ শতাংশ ডাউন দরকার হয় (নিচে দ্রষ্টব্য)।

সকলের জন্য বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ তৈরি করার মহৎ উদ্দেশ্যে এফএইচএ কর্মসূচি বিশেষভাবে সৃষ্টি করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাউজিং এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এইচইউডি)-এর অধীনে। যাঁদের আয়-উপার্জনের সীমাবদ্ধতা আছে বা ক্রেডিট স্কোর বিভিন্ন কারণে কমে গেছে তাঁরাও এটির সহায়তা নিয়ে বাড়ির মালিক হতে পারেন। 

তবে এই ঋণ কেবলমাত্র তাঁদেরকে দেয়া হয় যাঁরা প্রাথমিক আবাসনের জন্য বাড়ি কিনছেন। এখানে আর একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে ‘প্রাথমিক আবাসনের’ জন্য বাড়ি কেনা আর’ প্রথম’ বাড়ি কেনা এক কথা নয়। অনেকে ভাবেন, ‘আমি তো একবার বাড়ি কিনে ফেলেছি।  তাহলে আর এফএইচএ লোন পাব না।’ সেটি ঠিক ধারণা নয়।  আপনি দ্বিতীয় বাড়ির জন্যও এই লোন পেতে পারেন যদি দেখাতে পারেন যে দ্বিতীয় বাড়িটাতেই আপনি থাকবেন এবং প্রাথমিকভাবে আবাসনের জন্য ব্যবহার করবেন।

সবাই যাতে বাড়ির মালিক হতে পারেন সেজন্য এফএইচএ’র বিশেষ কর্মসূচি আছে।  যেমন- ‘এফএইচএ ব্যাক টু ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’।  অর্থাৎ যাঁরা বেশ কিছুদিন বেকার ছিলেন, তারপর নতুন কাজে ফিরেছেন; বা যাঁরা ব্যাংকরাপ্সি, ফোরক্লোজারের শিকার হয়েছেন তাঁদের জন্যও সহজ নিয়মে গৃহঋণ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।  এছাড়া কোনো অসম্পূর্ণ বা মেরামতের প্রয়োজন এমন বাসার জন্য সহজশর্তে বিশেষ ধরনের এফএইচএ ঋণ কর্মসূচি রয়েছে।

সকল প্রকার এফএইচএ ঋণের আর একটি বিশেষ সুবিধা হলো ক্রেতার কোনো নিকটাত্মীয় বা বন্ধু ডাউনপেমেন্ট এবং প্রক্রিয়াকরণ খরচের (ক্লোজিং কস্টের) পুরো অর্থ উপহার হিসেবে দিতে পারেন।

এফএইচএ সরাসরি ঋণের অর্থ জোগান দেয় না; বরং নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদেরকে ঋণ দেয়ার যে ঝুঁকি সেটি মেটাতে ঋণদাতাদেরকে ইন্স্যুরেন্স দেয়। তাই এটি ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি কিছুটা ইন্স্যুরেন্স আদায় করে। আবার সরকার এটিতে ভর্তুকিও দিয়ে থাকে। এই বাড়তি ইন্স্যুরেন্সটা ক্রেতাকে দিতে হলেও তিনি এটি মাসে মাসে ধীরে ধীরে দিতে পারেন। সর্বোপরি তিনি বাড়ির মালিক হতে পারেন।  

তবে ক্রেতা যদি ১০ শতাংশ বা তার ওপরে ডাউন দিতে পারেন, তাহলে ১১ বছর পর আর ইন্স্যুরেন্স দিতে হয় না; নতুবা পুরো ঋণকালীন সময় ধরে ইন্স্যুরেন্স দিয়ে যেতে হয়।  আবার ক্রেতা যদি রিফাইন্যান্স কোরে, ঋণের ২০ শতাংশ পরিশোধ কোরে কনভেনশনাল মর্টগেজে চলে যান, তাহলেও বাড়তি মর্টগেজ ইন্স্যুরেন্স এড়ানো যায়।

মোটকথা, যদি কেউ মনে করেন যে, ভবিষ্যতে তাঁর উপার্জনের একটি নির্ভরযোগ্য পথ তৈরি হয়েছে, তাহলেই এই ঋণের কথা চিন্তা করতে পারেন। ক্রেডিট ইতিহাস বা বড় ডাউনপেমেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

কনভেনশনাল মর্টগেজ: ৩ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট

বিশাল আধাসরকারি অর্থ প্রতিষ্ঠান ফ্যানিমে এবং ফ্রেডিম্যাক ২০১৪ সালে তাদের ‘কনভেনশনাল ৯৭’ কর্মসূচি আবার চালু করে। এটি প্রাথমিক আবাসনের বাড়ি কেনার জন্য এবং রিফাইন্যান্সের জন্য বিশেষ উপযোগী। এটি তাঁদের জন্য ব্যবহার করা সুবিধাজনক যাঁদের ক্রেডিট ইতিহাস গড়পরতার ওপরে এবং দুই বছর বা তার উপরে যাচাইযোগ্য উপার্জন আছে।  

কনভেনশনাল মর্টগেজের বিশেষ সুবিধা হলো ১-ইউনিট বাড়ির জন্য আবশ্যক ডাউনপেমেন্ট মাত্র ৩.০ শতাংশ এবং এর পুরোটাই আত্মীয়দের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নেয়া যায়। তবে ২-ইউনিট বাড়ি কিনতে হলে ১৫ শতাংশ ডাউন আবশ্যক হয়। তার মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে ০-৫ শতাংশ নিজের তহবিল থেকে দিতে হয়, বাকিটা আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে নেয়া যায়। এফএইচএ’র তুলনায় কনভেনশনাল লোনের একটি বিশেষ সুবিধা হলো এই লোনের ইন্স্যুরেন্স হার কম; এবং ঋণের ২০ শতাংশ পরিশোধ হয়ে গেলে (বা যদি কেউ শুরুতেই ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট করতে পারেন) তাহলে লোনের জন্য কোনো ইন্স্যুরেন্স দিতে হয় না।

ইউএসডিএ মর্টগেজ: ০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট

যাঁরা শহর এলাকার বাইরে বসবাস করেন বা করতে চান, তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভাল হলো ইউএসডিএ (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার) মর্টগেজ। এই ঋণের সুদের হার উপরোক্ত দুই প্রকার ঋণের চেয়ে কম। এই ঋণের জন্য ১-৪ ইউনিট বাড়ি কিনতে কোনো ডাউনপেমেন্ট লাগে না, ০ শতাংশ ডাউন।  উপরন্তু এই ঋণ প্রক্রিয়াকরণের (ক্লোজিং কস্টের) পুরো খরচই আত্মীয় বা বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নেয়া যায়।  

ভিএ মর্টগেজ: ০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট

ভেটারেন অ্যাফেয়ার্স মর্টগেজ দেয়া হয়, যাঁরা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রতিরক্ষা বিভাগে সেবা দিয়েছেন। যদিও এই ঋণের সুবিধা অনেক, তবুও এটি প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের জন্য সাধারণত প্রযোজ্য নয়। কারণ এঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক ব্যক্তি প্রতিরক্ষা বিভাগে চাকরির সুযোগ পান। তাই এটি নিয়ে এখানে আর আলোচনা করা হলো না।

জাম্বো লোন: ৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট

উপরোক্ত ঋণগুলোর সবই একটি সীমিত পরিমাণের মধ্যে দেয়া হয়। যেমন এফএইচএ এবং কনভেনশনাল ঋণের ক্ষেত্রে, নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির বড় শহর এলাকাগুলোতে ১-ইউনিট বাড়ির জন্য সীমা ৯ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ ডলার; ২-ইউনিট বাড়ির জন্য ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০ ডলার ইত্যাদি। এখন কারো যদি এর চেয়ে বেশি গৃহঋণের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিকে সাধারণত জাম্বো লোন বলা হয়। এই প্রকার ঋণের জন্য ডাউনপেমেন্ট ৫-১০ শতাংশ হয়ে থাকে।

সারকথা

দেখা যাচ্ছে যে, সচরাচর যেসব গৃহঋণ দেয়া হয়ে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে, এমনকি জাম্বো ঋণের ক্ষেত্রেও ২০ শতাংশ ডাউন আবশ্যক নয়।  তবে কারো যদি সেটি দেবার সামর্থ্য থাকে, তাহলে ভালো কথা। এটি দিতে পারলে কনভেনশনাল ঋণের ইন্স্যুরেন্স দিতে হয় না, ঋণ পাওয়া সহজ হয়, এবং সুদের হারও কিছুটা কমানো যায়।  

আর যাঁদের যাচাইযোগ্য উপার্জন নেই অর্থাৎ উপার্জন আছে কিন্তু প্রমাণযোগ্য নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ-২৫ শতাংশ ডাউন দিয়ে ননকনভেনশনাল ঋণ পাওয়ার সুযোগ আছে।  তবে, তখন সুদের হার কিছুটা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রেও ক্রেতা হিসাব করে দেখতে পারেন যে, ভাড়া বাড়িতে থাকার চেয়ে সুদের হার কিছুটা বেশি দিয়ে হলেও নিজের বাড়িতে থাকাটা লাভজনক কিনা। কারণ নিজের বাড়িতে যে অর্থটা তিনি মাসে মাসে পরিশোধ করেন তার একটি অংশ একুইটি তৈরি করতে থাকে। অর্থাৎ বাড়ির বিক্রয় মূল্যের ওপর তাঁর সত্যিকারের মালিকানা তৈরি হতে থাকে। এছাড়া যখন উপার্জন প্রমাণ করার মতো অবস্থা তৈরি হয় তখন তিনি এই প্রকার উঁচু সুদের ঋণ রিফাইন্যান্স কোরে কম সুদে চলে আসতে পারেন।  কিংবা মাঝে মাঝে বড় কিস্তি পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট) করেও উঁচু সুদ এড়িয়ে যেতে পারেন।

আপাতত এ পর্যন্ত থাক। আপনার যেকোনো প্রশ্নের জন্য নিচের নম্বরে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

ড. শেখ রহমান

এম.এল.ও. লাইসেন্স নম্বর ২০৫২৪০০

অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ, হোম রিলায়েন্স ক্যাপিটাল করপোরেশন

ফোন: (৯২৯) ৪৯৮-৬২২৮

শেয়ার করুন