২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:২৮:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


বিয়ানীবাজার সমিতির সাধারণ সভায় উত্তেজনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
বিয়ানীবাজার সমিতির সাধারণ সভায় উত্তেজনা উত্তেজনার একটি মুহূর্ত


উত্তেজনা, বাদ প্রতিবাদ, অভিযোগ, অভিযোগ খন্ডন, দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, গঠনতন্ত সংশোধন, কবর সংক্রান্ত তথ্য প্রদানসহ নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর ওজনপার্কের দেশী  সিনিয়র সেন্টারে  বিয়ানীবাজার সমিতির বর্তমান কমিটির দ্বিতীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায়  সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান। সাধারণ সভা পরিচালনা করেন সেক্রেটারী নাজমুল হক মাহবুব। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন উপদেষ্টা বুরহান উদ্দীন কপিল, আহমদ এ হাকিম, সিরাজ উদ্দীন আহমদ, সাবেক সভাপতি বদরুল হোসেন খান, আজিমুর রহমান বুরহান, মাসুকুল ইসলাম খান,  মোস্তফা কামাল, মকবুল রহিম চুনই, মাসুদুল হক ছানু। সাধারণ সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন ফুলতলী জামে মসজিদের সেক্রেটারী জামাল হোসেন। পরবর্তিতে সম্পাদকীয় ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে সেক্রেটারী নাজমুল হক মাহবুব ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান দুখু।

সাধারণ সম্পাদকের  রিপোর্টে  বিজয়ের  মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লাখ মা- বোনের সম্ভ্রম হারানোসহ শহীদ বুদ্ধিজীবী ড: জীসিদেব, ৬ দফা  আন্দোলনের  প্রথম শহীদ মনু মিয়াসহ বিয়ানীবাজারের গুণী জনদের স্মরণ করা হয়। সম্পাদকীয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সমিতির ভবন, সমিতির নামে রেজিস্ট্রেশন করার  উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সমিতির  নথিপত্রের সাথে নামের প্রাথর্কের কারণে সময় ক্ষেপন হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য একজন দক্ষ  সিপিএ’র  মাধ্যমেই উদ্যোগ গ্রহণ করা  হয়েছে। আগামী  সাধারণ সভায় অগ্রগতি উপস্থাপন করা  হবে। এক প্রশ্নের  উত্তরে  সেক্রেটারী বলেন, সমিতির নাম বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ। কিন্তু  স্টেটে  ইউএসএ  লেখা নেই। শুধু  তাই  নয়, সমিতি  সাবেক একজন সভাপতির নামে। এমনকি সভাপতির নামে ট্যাক্স রিটার্ন করা হয়েছে। আবার সমিতিকে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ফর্ম পূরণ করা হয়। সেক্রেটারী বলেন,  কোন ব্যক্তির নামের প্রতিষ্ঠান সমিতির নামে রেজিস্ট্রেশন হয় না। এমন কি সমিতির ট্যাক্স আইডির সাথে যেমন ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালের ট্যাক্স রিটার্নে সমিতির  আইডির সাথে ট্যাক্স রিটার্নের আইডির  অমিল রয়েছে। সাবেক সভাপতি আজিমুর রহমান বুরহান এ প্রেক্ষিতে তার  আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, প্রশ্নই  উঠে না। তার নামে সমিতি। ট্যাক্স ফাইল তিনিও তার সময়ের সেক্রেটারী সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ট্যাক্স ফাইল করা ব্যক্তির কাছে গিয়েছিলেন। এটা কি করে সম্ভব নিজের নামে ঘরের ট্যাক্স রিটার্ন করা। তিনি বলেন, ট্যাক্স ফাইল করে তিনি সমিতিকে জীবিত রেখেছেন। সাবেক  সভাপতি  আজিমুর রহমান বুরহান  টেলিফোনে দেশ পত্রিকার সাথে ফোনে আলাপে বলেন,  ট্যাক্স রিটার্ন যে করেছে তার সাথে যত দ্রুত এপোয়েন্টমেন্ট করে সভাপতি- সেক্রেটারীকে  সাথে  নিয়ে মূল বিষয় উদঘাটন করবেন। সেই সাথে বলবেন, আগামী  সাধারণ সভায় যেন এর আপডেট করা হয়।  আলোচনায় আসে ২০১৬- ২০১৭ মেয়াদে সংগঠনের দায়িত্বে  না থেকে কিভাবে  সভাপতি ট্যাক্স ফাইল  করেন। এর তদন্তের  দাবি জোরে উত্থাপিত হয়। সম্পাদকীয় রিপোর্টে ২০২১ সালে তৎকালীন বিদায়ী কমিটিকে হিসাব প্রদানের বিষয় উত্থাপিত হয়। তাতে বলা  হয় বিদায়ী কমিটি হিসাব হস্তান্তর করতে অনেক নাটক হয়েছে। তা ছাড়া  হিসাব প্রদান  করা হয়েছে রশিদ বই ছাড়াই। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে উপস্থিত সাবেক সভাপতি মকবুল রহিম চুনই বলেন, হিসাব হস্তান্তর করার সময় তিনি  ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশে ছিলেন। যাওয়ার সময় সেক্রেটারী ও কোষাধ্যক্ষকে হিসাব হস্তান্তর করার দায়িত্ব ন্যাস্ত করেন। সমিতির হিসাব  প্রদানে  সম্পাদকীয় রিপোর্টে উল্লেখিত ত্রুটির জন্য বর্তমান সভাপতি, সেক্রেটারী ও আগের সময়ের সেক্রেটারী ও কোষাধক্ষকে নিয়ে এক সাথে বসে আলাপ করে সমাধানে যাওয়া যাবে। সম্পাদকীয় রিপোর্টে ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি ২০২১ সালে মাধ্যমিক ও  দাখিল পরীক্ষায়  উত্তীর্ণ  জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ১২০জন শিক্ষার্থীর  মধ্যে ১১৮ জনকে হাজী  হোসেইন আহমদ ফাউন্ডেশন ইউএমএ ইন্ক’র অর্থায়নে বিয়ানীবাজার সমিতি প্রত্যক শিক্ষার্থীকে সম্মাননা সার্টিফিকেট ও ১০০০ টাকা সমমূল্যের প্রাইজ বন্ড বিতরণ করা  হয়। ১ম ফেব্রুয়ারি ২০২২ ওজনপার্কের মামোছ রেস্টুরেন্টে পিঠা উৎসব, ২১ ফেব্রুয়ারি ওজনপার্কের লিবার্টি প্লাজায় অস্থায়ী শহীদ মিনারে  পুষ্পস্তবক প্রদান, স্বাধীনতা  দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে ২৭ মার্চ দেশী সিনিয়র সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করা  হয়। ১০ এপ্রিল দেশী সিনিয়র সেন্টারে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও  ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি  পৌরসভাকে  ২৮ লক্ষ ৭১ হাজার ৩শত টাকা বিতরণ করা  হয়। বিতরণকালীন সময়ে সভাপতি আব্দুল মান্নান, সহ সভাপতি ফায়জুর মিয়া, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান দুখু ও উপদেষ্টা বুরহান উদ্দীন কপিল উপস্থিত ছিলেন। ২০ জুলাই ২০২২ ফরেস্ট পার্কে বার্ষিক বনভোজন, ওজনপার্কে মোদাচ্ছের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান। 

সম্পাদকীয়  রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন কনসেনস্রেটোর ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বাবত সমিতির তহবিল, চাঁদা  সংগ্রহসহ ২৮৭৩৫ ডলার প্রেরণ করা হয়। খরচ হয়েছে ২৩ হাজার ৩৩৫ ডলার। অথচ বিগত কমিটির কাছে থেকে নতুন কমিটির কাছে উদ্বৃত ৫৯২৮ ডলারের হিসাব উল্লেখ না করার প্রশ্ন  উত্থাপিত হয়েছে। ভোটার নিবন্ধনের হিসাবে  গড়মিলের  কথা  উল্লেখ করে  বলা হয়, বিদায়ী কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট মোতাবেক ১১০ হাজার ৯৪০ডলার। অথচ  ভোটার তালিকা নিবন্ধনের শেষ সময়ের হিসাব ১লাখ ৮ হাজার ৩শত ২৮ ডলার। কিন্তু ২৬১২ডলারের ভোটার কারা- এ নিয়ে  প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়- ২০২১ সালের বিদায়ী কমিটি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৪০ ডলারের হিসাব রশিদ বই ছাড়া হিসাব প্রদান করে। বিগত সাধারণ সভায় আজিজুর রহমান সাবু, আহমদ এ হাকিম ও ছালেহ আহমদ মনিয়ারক নিয়ে  ৩ সদস্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যতম সদস্য ছালেহ আহমদ মনিয়া গণতন্ত্রের সংশোধনী সবার সম্মুখে উপস্থাপন করেন। উপস্থিত সাধারণ সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও প্রস্তাবের উপর আলোচনার উওর দেন। তাকে  সহযোগিতা করেন গঠনতন্ত সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক আজিজুর রহমান সাবু।

অবশেষে ক্ষমতা হস্তান্তর এক কার্য দিবসের পরিবর্ত ৩ কার্য দিবস, সমিতির কোন  অক্ষম, নিরুপায় কোন ব্যক্তিকে এক কালীন  সাহায্য ১হাজার ডলারের পরিবর্তে  ১৫০০ ডলারের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভার সম্পাদক গঠনতন্ত চলমান প্রক্রিয়া বলে  গঠনতন্ত সংশোধন আলোচনা সমাপ্ত করেন। পরবর্তিতে  কবর সংক্রান্ত তথ্যাদির উপর দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে  বিয়ানীবাজার সমিতির ডাবল কবর হিসাবে ৮০ কবর ক্রয়  করা  হয়। এতে ১৬০টি লাশ সমাহিত করা  যাবে। ইতিমধ্যেই  ৮৯ টি কবরে  লাশ  দাফন করা হলে ৬৮ টি কবর খালি রয়েছে। বিয়ানীবাজারের লোকজন বৃদ্ধির সাথে সাথে  ভবিষ্যতে কবরের চাহিদার কথা  চিন্তা করে নিউজার্সীর মার্লবোরোতে ১১৩টা কবর ক্রয় করা  হয়েছে। এর মধ্যেই ১৩ টি কবর ব্যবহার করা  হয়েছে। সমিতির আজীবন সদস্য সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণকারী  মহিউদ্দিন আহমদ সাধারণ সভায়  তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সম্পাদকীয় রিপোর্টের উপর আলোচনার সময় সাবেক সভাপতি বর্তমানে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান বলেন, তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালনকালীন  সময়ে মাইনাস  ব্যালেন্স  নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে করেন। সমিতির সব কাজ করার জন্য ঋণ করতে  হতো। অথচ আমার বিরুদ্ধে রাস্তা ঘাটে  দুর্নাম রটিয়ে বেড়ানো হতো আমি নাকি সমিতির অর্থ আত্মসাৎ  করেছি। কবর সংক্রান্ত তথ্যাদি উপস্থাপনকালে  ৩টি কবর রিজার্ভ বলার সময়ে সাবেক সভাপতি  বুরহান উদ্দীন কপিল দু:খ মনে বলেন, তার  জৈষ্ঠ্য পুত্র গাড়ি  দুর্ঘটনা  মারা গেলে  তাকে  বিয়ানীবাজার সমিতির ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল গোরস্থানে  দাফন করা  হয়। সে  সময় বলেছিলেন এই  কবরে  যেন বাইরের কোন মৃত ব্যক্তির লাশ  না রাখা হয়। সমিতি তার  এ কথাকে  গুরুত্বহীন মনে করে পাশের একটি  কবর খালি  রেখে  তার পুত্রের কবরে দাফন করে। তিনি আক্ষেপ করে  বলেন, বিয়ানীবাজার সমিতি  আমার প্রতি এত নিষ্ঠুর কেন। 

বিয়ানীবাজার সমিতির ইতিহাসে প্রথম, তথ্য বহুল পুঙ্গানুপুঙ্খভাবে সম্পাদকীয় রিপোর্ট উপস্থাপন করার জন্য সেক্রেটারী নাজমুল হক মাহবুবকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সম্পাদকীয়, কোষাধ্যক্ষ রিপোর্ট ও সম্পাদকীয় রিপোর্টের উপর আলোচনা করেন বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সহ  সভাপতি হাজী নিজাম উদ্দীন, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক উপদেষ্টা আজীজুর রহমান পাখি, সারওয়ার হোসেন, হোসেন আহমদ, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সেক্রেটারী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, শামসুল ইসলাম, মিছবাহ আবদীন, রেজাউল আলম অপু, রিজু মোহাম্মদ, জহির উদ্দীন জুয়েল, নুরুল ইসলাম, মোর্শেদ আহমদ, মোহাম্মদ সাগর।

সাধারণ সভায় সাংগঠনিক আলোচনায় পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা, তর্ক  বিতর্ক, উত্তেজনা, উত্তাপ শেষে প্রবাসী  বিয়ানীবাজারবাসী একই ছায়াতলে সমবেত হন।

শেয়ার করুন