২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:০৮:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাইডেনের ২৯৬ নির্বাহী আদেশে বিতর্কিত বর্তমান ইমিগ্রেশন নীতি
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
বাইডেনের ২৯৬ নির্বাহী আদেশে বিতর্কিত বর্তমান ইমিগ্রেশন নীতি জো বাইডেন


যতোই আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে (৮ নভেম্বর), ততোই ইমিগ্রেশন একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রবেশ নিয়ে নয়, যারা বৈধভাবে এদেশে প্রবেশ করেছে তাদের নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করে। 

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ মাইগ্রেশন্ট প্রবেশ করছে, যার জন্য রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দোষারোপ করে থাকে। তারপরও দেখা গেছে, বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্রেশন নিয়ে বরাবরই সচেতন থেকেছে। আর ইতিমধ্যে ২৯৬টি নির্বাহী আদেশ জারি করেছে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের আমলের গৃহীত কিছু পদক্ষেপও বাইডেন প্রশাসন ধরে রেখেছে। 

সীমান্তের অ্যাসাইলাম কর্মসূচি

বাইডেন প্রশাসন সেন্টার ফর ডিজিস (সিডিসি) প্রণীত আদেশ টাইটেল ৪২ বা ২০২০ সালের মার্চ মাসে জারি করা হয়েছে তা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে চালু রেখেছে। ২০২২ সালে প্রায় ১০ লাখ মাইগ্র্যান্টকে যারা অ্যাসাইলাম আবেদন করেছে, তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। টাইটেল ৪ কে মোডিফাই করে বাইডেন প্রশাসন সঙ্গীহীন মাইনরদের এবং তাদের পরিবারদের আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। 

আমেরিকার আইনে স্বদেশে যেসব লোক জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, গোত্র, রাজনৈতিক বিশ্বাস সামাজিক কোনো বিশেষ গ্রুপের সদস্য হবার কারণে বা বেজায় অত্যাচারের (টর্চার কনভেনশনে) সম্মুখীন হলে তাদের অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় দেয়া হয়। 

২০২২ সালের মে মাসে বাইডেন প্রশাসন টাইটেল ৪২-এর সমাপ্তি টানলে কোর্ট আদেশে তা পুনরায় বলবত করা হয়। এর কোনো সমাপ্তি তারিখ নেই। বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প সময়কালে জারিকৃত আরেক নীতি মাইগ্র্যান্ট প্রটেকশন প্রটোকল (এমপিপি) যাতে অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের বিচারকদের শুনানি পর্যন্ত মেক্সিকোতে অবস্থান করার নিয়ম করা হয়েছিল তাও বাতিল করে। ফেডারেল কোর্ট অর্ডারের কারণে মাইগ্র্যান্টদের আর এমপিপিতে তালিকাভুক্ত করতে হয় না। 

২০২২ সালের ৩১ মে থেকে প্রশাসন কিছু অ্যাসাইলাম মামলা কীভাবে নিষ্পত্তি করবে তার জন্য কিছু পরিবর্তন আনে বিধিতে এবং স্বল্পসংখ্যক মামলা ইমিগ্রেশন কোর্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তার পরিবর্তে অ্যাসাইলাম অফিসারদের দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিকরণের আওতায় ক্ষমতা দেয়া হয়। 

রিফিউজি

বাইডেন প্রাথমিক পর্যায়ে আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে সর্বনিম্ন সংখ্যক মাত্র ১৫ হাজার বার্ষিক রিফিউজি নেয়ার পরিকল্পনা নেয়। ক্যাপিটল হিলে তার দল ডেমোক্রেটরাই তার প্রতিবাদ করে। মে মাসে প্রশাসন এই সংখ্যা সাড়ে ৬২ হাজারে উন্নীত করে। কিন্তু ২০২১ সালে মাত্র ১১ হাজার ৪১১ জন রিফিউজি গ্রহণ করা হয়, যা ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। ২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসন রিফিউজির সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত করে। কিন্তু গত জুলাই মাস পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে মাত্র ১৭ হাজার ৬৯০ জন রিফিউজি গ্রহণ করা হয়। ইমিগ্রেশন অ্যাডভোকেটরা বলেন, এই টার্গেটের অনেক কমেই এ বছর শেষ হবে। কিন্তু বিগত প্রশাসনের সময় রিফিউজি কর্মসূচি যেভাবে ব্যাহত হয়, তা পুনরায় চালু করতে সময় নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ১ অক্টোবর বাইডেন নতুন করে রিফিউজি গ্রহণের মাত্রা নির্ধারণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে বাধা অতিমারী ও সম্পদ জোগান। 

প্রয়োগ প্রাধান্যতা

বাইডেন প্রশাসন বর্তমানে প্রাপ্ত সুযোগ প্রয়োগ করার এবং তা আরো ভালোভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ডিটেনশনের জন্য গ্রেফতার ও বহিষ্কারের জন্য গাইডলাইন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজানদ্রো মেওরকাস গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ‘গাইডলাইন ফর এনফোর্সমেন্ট অব সিভিল ইমিগ্রেশন ল’স’ ঘোষণা করেন। 

মেওরকাস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইস) নির্দেশ দেন যেসব মাইগ্র্যান্টরা জননিরাপত্তার হুমকি, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি আর যারা সম্প্রতি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে, তাদের ওপর নজর দিতে হবে। বিগত ট্রাম্প আমলে আইসকে যে কোনো ইমিগ্র্যান্টদের বহিষ্কারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। 

কতিপয় রিপাবলিকান এ নিয়ে মামলা করেছেন এ মর্মে যে, এই গাইডেন্স দ-প্রাপ্ত ব্যক্তি, যারা ভীষণ রকমের ফেলানী অপরাধ করেছে তাদের ওপর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু যারা অন্যরকম অপরাধ করেছে, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে এক ফেডারেল বিচারক সেপ্টেম্বর গাইডলাইনের কতিপয় ধারা ব্লক করে দিয়েছেন। 

এ কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট (এমপিআই)-এর মতে, বর্তমান হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নজরদারি বিশেষ কোনো জনগণ, স্থান এবং পরিস্থিতি বুঝে সীমিত করা। তাছাড়া আইস অফিসিয়ালরা এখনো প্রত্যেক মামলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে বিধি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমপিআই বলেছে যে, আইস অফিসারদের গর্ভবতী কিংবা প্রসবোত্তর বা সেবাদানকারী কাউকেও গ্রেফতার না করতে। যদিও তারা রিম্যুভাল প্রসিডিং শুরু করতে পারে। আর কোনো অনাগরিক যদি ইমিগ্রেশন বেনিফিটের জন্য তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ভিত্তিতে আবেদন করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার নির্দেশ রয়েছে।

অন্যান্য স্থানের মধ্যে যেখান থেকে ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগ করে গ্রেফতার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেসব হচ্ছে কোর্ট হাউজের নিকটে, স্কুলে, হাসপাতালে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, পাবলিক অনুষ্ঠান যেমন- মৃত সৎকারের আয়োজন অথবা বিয়ে এবং প্রতিবাদ জানানোর এলাকা থেকে। 

মেওরকাস আরো নির্দেশ দিয়েছে যেসব হোমল্যান্ড সাব এজেন্সি নিশ্চিত করবে যে, অনাগরিকদের মধ্যে যারা আমেরিকায় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে অহেতুক বিড়ম্বনা তৈরি করা হয়েছে বলে ইমিগ্রেশন অফিসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে ফিরে আসার অনুমতি দিতে। 

অস্থায়ী প্রটেকশন

টেম্পোরারি প্রটেক্ট স্ট্যাটাসে অবস্থানরত অনাগরিকরা, ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডাকার)-এর অধীনে অনাগরিকরা এবং মানবিক প্যারোলে আসা ইমিগ্র্যান্টরা এখনো অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য ব্যবস্থা নিতে বাইডেন প্রশাসন তৎপর। ডাকা বেনিফিশিয়ারিদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে ৩১ অক্টোবর ২০২২ সাল থেকে তাদের কোনো বৈধ স্ট্যাটাস থাকবে না। কাজেই এর মধ্যে তাদের বিষয়ে গৃহীত আইন মোডিফাই করতে হবে। বর্তমানে তারা এখানে অবস্থান ও কাজের অনুমতি পাবে মাত্র। 

বৈধ ইমিগ্রেশন

এক বছর পর্যন্ত বন্ধ রাখার পর আমেরিকার দূতাবাসসমূহ, কনস্যুলেট অফিসসমূহ সারাবিশ্বে এখন ইমিগ্র্যান্ট, নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা আবেদনকারীদের জন্য খোলা হয়েছে। কিন্তু এখনো আবেদনকারীদের উল্লেখযোগ্য সময় অপেক্ষা করতে হয় ভিসার জন্য। কারণ কনস্যুলেটে স্টাফ সমস্যা রয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা জানায় যে, বিভিন্ন দেশে ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষার সময় বিভিন্ন রকম। তবে রুটিন ভিসা অপেক্ষার সময় চার মাস। কোনো কোনো স্থানে তার চেয়ে কম। 

পাবলিক চার্জ 

বাইডেন প্রশাসন সেপ্টেম্বরে পাবলিক চার্জ বিধি চূড়ান্ত করেছেন। কেউ যদি সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাদের জন্য এই চূড়ান্ত বিধি, যা ২৩ ডিসেম্বর কার্যকর হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পাবলিক চার্জ সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণা আবার বলবত করেছে। এই বিধি যুগ যুগ ধরে এদেশে চলে আসছে, যা ট্রাম্পের আমলে বিকলাঙ্গ করা হয়েছিল। 

তার অর্থ হচ্ছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নতুন আদেশের বলে, কতিপয় ননক্যাশ বেনিফিট যা সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন সহায়তা কর্মসূচির অথবা অন্যান্য পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় দেয় তা নিলে তাতে পাবলিক চার্জ হবে না। শিশুদের স্বাস্থ্যবীমা, মেডিকেড, হাউজিং বেনিফিট বা ইমুনাইজেশন বা টেস্টিং ফর কমিউনিকেবল ডিজিস কিছুই পাবলিক চার্জ আওতায় পড়বে না। 

ইমিগ্রেশন বৈধকরণ স্থগিত

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার কার্যালয়ে প্রথম দিনেই ইমিগ্রেশন সংস্কার আইন পেশ করেন। তা হচ্ছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট. ২০২১। তাতে ৮ বছরে সিটিজেনশিপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক কোটি ১০ লাখ কাগজপত্রহীন ইমিগ্র্যান্টদের জন্য। এই বিল ক্যাপিটল হিলে মৃতবৎ পড়ে আছে। অন্যান্য বিলও পেশ হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস এখনো কোনো বিল পাস করেনি। 

শেয়ার করুন