২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন


শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা
এখন লাফালাফি কমে এসছে, সুর নিচে নেমে এসেছে- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৩
এখন লাফালাফি কমে এসছে, সুর নিচে নেমে এসেছে- মির্জা ফখরুল


‘সরকারের সুর নিচের দিকে নেমে এসেছে’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকালে শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনায় সম্প্রতি ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত ভিসা নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। দিবসটি উপলক্ষে দুঃস্থদের খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ ১৩ দিনের নানা কর্মসূচি পালন করার কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের হাতে নিহত হন ততকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। 

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বলে না যে আপনার.. ‘ম্যান প্রোপোজেস গড ডিসপোসেস’.. ভাবে এক হয় আরেক। আজকে কত লাফালাফি কয়েকদিন আগেও তাই না। কি লাফালাফি! এখন লাফালাফি কমে এসছে। সুর নিচের দিকে নেমে এসেছে। এখন কথা বলা হচ্ছে, সংঘাত তো চাই না, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই তো করতে হবে। আমরা তো বাঁধা দিচ্ছি না।”

 দলের কর্মসূচি সরকার বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন,  ‘‘ এই সেদিনও আমাদের সমস্ত জেলাগুলো আমাদের দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়েছে। সেদিনও আমাদের অনেকগুলো জেলাতে সভা করতে দেয়া হয় নাই, সেদিনও পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ভাই তার গাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে, সেদিনও কেরানিগিঞ্জে নিপুণকে (নিপুণ রায় চৌধুরী) আহত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কত চক্রান্ত। নরসিংদীতে আমাদের খায়রুল কবির খোকন ও শিরিন সুলতানার নামে  মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিজেরা ষড়যন্ত্র করে, হত্যা করে এখন আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। গায়েবী মামলা এটা তাদের নতুন ক্রিয়েশন। কোনো কিছুই ঘটবে না এটা মামলা হয়ে গেলো সেই মামলায় ৪০ জনের নাম বাকি দেড় হাজার অজ্ঞাত যখন যাকে খুশি ধরে নিয়ে আসো মামলা দিয়ে দাও।”

 

‘এই লড়াই চূড়ান্ত পর্যায়’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা লড়াই করছি, আমরা সংগ্রাম করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে এই লড়াই করছি। এই লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায় এসেছে। আমরা পরিস্কার করে দাবি জানিয়েছি। যে দাবি হচ্ছে প্রথম তোমাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং এদেশের মানুষ তোমাকে সামনে রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা মনে করে না। এটাই বাস্তবতা। এই সংসদে তুমিই সংবিধান পরিবর্তন করেছো, সংবিধানে বিভিন্ন কাটা ছেঁড়া করে এই সংসদ রেখেছো সেই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। আর সরকারৃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ যদি সরকারে থাকে তাহলে সেই নির্বাচন কখন্ােই সুষ্ঠু হতে পারে না। ২০১৪ সালে দেখেছি, ২০১৮ সালে দেখেছিৃ আর নতুন করে দেখার কিছু নেই।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জনগন যেন ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থাই আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা আবারো চাই যে, জনগন যেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় তার ভোট নিজে দিয়ে নিজেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় শপথ হবে যেকোনো মূল্যে প্রয়োজনে নিজেদের জীবনের মূল্যে হলেও এই ভয়াবহ ভোট চোর, দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাঁচাতে হলে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে হলে, আমাদের আপোষহীন নেত্রী গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, আমাদের নেতাকে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে আমরা সবাই, সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সংগঠন সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

 

‘ফাঁদে পা দেবেন না’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ একটা কথা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে ট্রাপে পড়ে যাওয়া, আমাদেরকে ফাঁদে ফেলে দেয়া, আমাদের বিভিন্ন অপপ্রচার, অগ্নি সন্ত্রাস করবেন তারা আর অভিযোগ দেবে আমাদের বিরুদ্ধে, অতীতে তারাই অগ্নি সন্ত্রাস করেছে তাই।  তাই খুব সাবধান থাকতে হবে সকলকে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে, আমরা গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনৃযে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। আসুন এই আন্দোলনকে আমরা তীব্র করি, আরো বেগবান করি, এর মাধ্যমে সরকারে পতন ঘটিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”  

 

‘আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স : বিস্ময় ব্যাপার!’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ হঠাৎ করে বলছে যে, আমেরিকা থেকে রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে। এটা বিস্ময় ব্যাপার। আমেরিকা যখন যায় তখন বাড়িঘর সব বিক্রি করে যায় তাই না। আমাদের সাধারণ মানুষরা বিদেশে যায় যেমন সৌদি আরব যায়, কাতার যায়, কুয়েতে যায় এরা সেখান থেকে রেমিট্যান্স পাঠায় অথবা নিয়ে আসে তাই না। এখন কি একটা জাদু তৈরি হলো যে, আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স আসছে। মানুষ বলছে কি? এই চোর চোর চোর চোরেরা চুরি করে যত টাকা পাচার করেছে এখন তা আবার ফেরত আনতেছে। কারণ কি জানেন?  আড়াই পারসেন্ট পাবে সেই কারণে। সব দিক থেকে চুরি, চুরি চুরি চুরি।”

 

আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ জিয়াউর রহমানের্ যে কর্মজীবন, তার যে অবদান, তার যে দেশপ্রেম, দেশ ও জাতি সম্পর্কে তার যে সুদূর প্রসারি চিন্তা এবং আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগন একারণে সকলে যেখানে মনে-প্রাণে জিয়াউর রহমানকে ধারণ করে রেখেছে তাকে কোনো সময়ে তাদের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। সাময়িকভাবে এয়ারপোর্টের নাম মুছে ফেলা যাবে .. এদেশের জনগনের মন থেকে, বইয়ের পাতা থেকে এবং ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানের নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।”

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের ভোট চোরদের রুখতে আমেরিকানরা ভিসা নীতি করেছে। আপনাদেরকেও এখন থেকে সজাগ থাকতে হবে। কারা ভোট চোর তাদের তালিকা করতে হবে। ওদের(ভোট চোর) অপকর্মের ছবি তুলে ফেইসবুকের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে এবং বিএনপির অফিসে তা পাঠিয়ে দিতে হবে। বাকী কাজ আর চিন্তা করতে হবে না। আমরা বলে দিতে চাই, আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামীতে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

 দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। 


শেয়ার করুন