২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৩০:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে ফজলুল হক মিলন
তারা গোর্য়াতুমির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
তারা গোর্য়াতুমির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে ফজলুল হক মিলন


গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেছেন, বর্তমানে তারা যা করছে তাতে দেখা যায় তারা আওয়ামী লীগের নীতিও মানছে না। তারা শেখ মুজিবের নীতিও মানে না। দেশের আইনও মানে না। এখন তারা গোর্য়াতুমির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই নির্বাচন হবে। এবং এর পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ১ দফা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদেরও দফা ১টা, শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। অবার আপনারাও দিয়েছেন এক দফা। এবিষয়গুলি কিভাবে দেখেন। 

ফজলুল হক মিলন: আমাদের যে সমাবেশ ছিল গত ১২ জুলাই তা হলো অনেকগুলো দাবি সম্বলিত। এসব দাবির ব্যাপারে রয়েছে ব্যাপক মানুষের সম্পৃক্ততা। এই দাবিগুলির মধ্যে আছে দেশের মানুষের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা স্বার্বভোমত্ব গণতান্ত্রিক অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করা। দাবির মধ্যে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী  খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে বাংলাদেশে নিয়ে আনার সুগম পথ পরিস্কার করা। কারণ অনেক অনৈতিকভাবে এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সাজা দেয়া হয়েছে দেশনায়ক তারেক রহমানকে। আর এধরনের কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিগুলি আদায়ে একমাত্র বাধা অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের দু:শাসন, একনায়কত্ব ও গোর্য়াতুমি ও ফ্যাসিবাদি আচরণ। আর এইগুলি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আমরা একটা দাবি তা হলো আওয়ামী লীগ থেকে দেশকে রক্ষায় ভোট দিয়ে মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এটা হলো আমাদের একটা দাবি। আর আপনি জানতে চেয়েছেন যে আওয়ামী লীগের এক দফার ব্যাপারে। এদের উদ্দেশ্য হলো লোক দেখানো সমাবেশ। পায়ে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার সমাবেশ। শান্তি সমাবেশের নামে তাদের যে একটেটিয়া শাসন, রাতের অন্ধকারে ভোট দেয়ার মতো শাসনকে টিকিয়ে রাখা। এই ধরনের কর্মকান্ডকে বাঁচিয়ে রাখতেই তারা সমাবেশ করেছে। তাদের সমাবেশ করার টার্গেট হলো অগণতান্ত্রিক সরকার টিকিয়ে রেখে লুটপাট করা। দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে জলাঞ্জলি দেয়া। দেশকে ধবংস করে দেয়া। এসব বাস্তবায়নে তারা সমাবেশ করেছে। অতএব তাদের সমাবেশ দেশ, জনগণের স্বার্থে না। নিজেদের এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার উগ্রমানসিকতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে এই ধরনের সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আমাদের সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে দেশের কল্যাণের জন্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। আর আমাদের সমাবেশে যে লোক হয়েছে তা ছিল সরকারের লোকজনের কাছে কল্পনাতীত। আর এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে কি পরিমাণ লোক হয়ে তা-তো সবাই জানেন। তাদের সমাবেশ ছিল লোক দেখানো সমাবেশ। তাদের সমাবেশের সাথে আমাদের সমাবেশের কোনো মিল নেই। 

দেশ: আচ্ছা আপনি বেশ কয়েকবারই বলে যাচ্ছেন যে আপনারা দেশ প্রেমিক। দেশকে রক্ষার জন্য আপনারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তো বলতে হয় যে আওয়ামী লীগ কি দেশপ্রেমিক দল না। এদলটা কি দেশের স্বাধীনতা এনে দেয়নি? তারা কি স্বাধীনতার রক্ষা করে না? তাদের কি এব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা নেই। 

ফজলুল হক মিলন: আওয়ামী লীগতো তাদের দেশপ্রেমিক পলিসি চেঞ্জ করে ফেলেছে। আসলে মানুষ যখন ক্ষমতায় মোহবিষ্ট হয়ে পড়ে তখন তার মধ্যে সব ধরনের গুণগুলি উধাও হয়ে যায়। মানুষ যখন লোভের সর্বোচ্চ চূড়ায় যায় তখনতো তাদের মধ্যে নীতি আদর্শ কিছুই থাকে না। সেসময় আসলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোথায় ছিল-সেসব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। সেসময় স্বাধীনতা ঘোষণা-কারা কারা কলকাতায় অবস্থান করেছে আর সাধারণ মানুষের অবস্থান কোথায় ছিল তাতো সবাই জানেন। ফলে যেখানে তাদের ব্যর্থতা সেখানে আমাদের সফলতা। বর্তমানে তারা যা করছে তাতে দেখা যায় তারা আওয়ামী লীগের নীতিও মানছে না। তারা শেখ মুজিবের নীতিও মানে না। দেশের আইনও মানে না। এখন তারা গোর্য়াতুমির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে। ধরে নিলাম আওয়ামী লীগের মূল মন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার চেতনা। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীন স্বার্বভৌম রাখা। এটাইতো ছিল স্বাধীনতার মূল চেতনা। সেই চেতনা কি আজকে আওয়ামী লীগের মধ্যে আছে? গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব নেই। কোনো ধরনের সুরক্ষা নেই। দেশের অর্থনীতিতে তারা লুটপাটের মহাউৎসব কায়েম করেছে। এখন আওয়ামী কোনো চেতনাই কি রক্ষা করতে পেরেছে?। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের কোনো চেতনাই হেফাজতে নেই। কাজেই এখন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষে না। তারা নিজেদের পক্ষে। দেশের স্বার্থে না, নিজেদের স্বার্থে। 

দেশ: আপনারা গত ১২ জুলাই রাজধানীতে একটি ঘোষণা দিতে গিয়ে সমাবেশ করেছেন। আপনারা কি মনে করে এধরনের সমাবেশ বা পদযাত্রা করেই সরকারের পতন ঘটাতে বা তাদেরকে আপনাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করাতে পারবেন? এমন কয়েকটি সমাবেশ করেই কি সরকারের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারবেন? কেননা সরকারের মধ্যেতো এই ধরনের সমাবেশ নিয়ে কোনো অনুভুতিই কাজ করছে না। 

ফজলুল হক মিলন: মানুষ দেখেই আতংকিত হবে তা না। যার ভেতরে সততা আছে, যে নীতির মধ্যে থাকে সে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তো মানুষ দেখে আতংকিত হয়েছে বহুবার। যখন মানুষ দাবি আদায়ে সমবেত হয়েছে তখন বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে। কারণ জনগণের মতামত নিয়ে দেশ শাসন করছে না বিধায় যেখানে জনগণ জড়ো হয় সেখানে ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়। অনেক সময় এই বিশাল জনগণের সমাবেশ দেখেও ভীত হয় না। যদি সে নৈতিকতার মধ্যে না থাকে। এসরকারতো নৈতিকতার মধ্যে নেই। জনগণের কাছ থেকে যেমন তারা বিছিন্ন হয়েছে তেমনি তাদের দু:শাসন অনাচারে তাদের নৈতিক মনোবলও হারিয়ে ফেলেছে। একটি কথা আছে বাংলা ভাষায় যে চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। তারা এখন যেইখানেই লোক দেখে সেখানেই আঁতকে উঠে। কারণ জনগণতো তাদের সাথে নেই। এদের অবস্থা এমন হয়ে যে তারা মানুষ দেখলেও ভয় পায়। আবার ঘুমিয়ে থাকলেও ভয় পায়। 

দেশ: আচ্ছা একথা বলা হচ্ছে যে আপনারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নয় সফররত বিদেশী কূটনীতিকদের দেখানোর জন্য সমাবেশ করেছেন। এটা কি সত্য?

ফজলুল হক মিলন: একথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ এর আগে দশটি বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। সম্প্রতি সহযোগি সংগঠনগুলি তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। তাই এর আগেতো কোনো বিদেশেীদের দেখাতে আমরা সমাবেশ করিনি। বিদেশীরা তাদের একটা লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশে এসেছেন। এর সাথে তো আমাদের জনগণের কোনো সর্ম্পক নেই। জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে মানুষ কিভাবে যোগ দিয়েছে তাতো পত্র-পত্রিকা দেশবাসি দেখেছে। আর বিদেশেীরা নানান ধরনের প্রযুক্তির সহায়তায় কোথায় কি ধরনের সমাবেশ হচ্ছে তা-তো বুঝেই ফেলে। খবর পেয়ে যায়।  বিদেশীদের দেখাতো বাংলাদেশে ডেকে নিয়ে আসার দরকার নেই। অনেক অনলাইন টেলিভিশন আছে। আছে নানান ধরনের ইলেট্রনিক্ মিডিয়া। তাই কাউকেতো কিছু দেখানো জন্য বিএনপি সমাবেশ করেনি। তাই এটা অমূলক কথা যে বিদেশীদের দেখানোর জন্য এমন কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। আসলে আমাদের কাজ হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামে জনসম্পৃক্তা আছে তা প্রমাণ করা। জনগণকে একবদ্ধ করা । এবং দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌম রক্ষা করা। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, মোটো। 

দেশ: আচ্ছা এমন গুঞ্জন আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পাশাপাশি ইইউর পক্ষ থেকে বিএনপি’কে চাপ দেয়া হচ্ছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে যেনো আপনারা নির্বাচনে অংশ নেন। আপনারা কি এধরনের কোনো চাপ পেয়েছেন?

ফজলুল হক মিলন: এটা আওয়ামী লীগ মনে করে করতে পারে। এটা কি কোথাও বলেছে যে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে হবে। তারাতো প্রতিদিনই ডায়ালগ করে যাচ্ছে। সুশীল সমাজের সাথে কথা বলেছে। সরকারের অনেক মন্ত্রী, কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে। কোথাও কি তারা বলেছে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে হবে। কি বলেন কোথাও কি বলা হয়েছে? এটা হাওয়ার কথা। এটা আওয়ামী লীগের কথা। তারা এসব কথা বার্তা আগ বাড়িয়ে বলে থাকে। এ্যাডভান্স কথা বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করে। তাই এধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। 

দেশ: আবার বলা হচ্ছে আপনারা বিদেশীরা কি করবে সে দিকেই তাকিয়ে আছেন? তারা আপনাদের ক্ষমতায় বসাবে-এমন আশা বিএনপি’র?

ফজলুল হক মিলন: আরে আমরা বিদেশেী না জনগণের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখি। জনগণের উপরই আমাদের আস্থা। 

দেশ: এটা কি সমাবেশের পর বুঝেছেন যে আপনাদের সাথে সর্বস্তরের জনগণ আছে? আপনারা কি আপনাদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি?

ফজলুল হক মিলন: আমি স্পষ্ট করে বলি আমরাই না, পুরো বিশ্ববাসী এবং আপনারা সাংবাদিকরাসহ সবাই আশাবাদি। সবাই মনে করে শুধু এই সমাবেশের মাধ্যমেই না। সমাবেশের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করেছে এই দল, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ডাকে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সমবেত হয়েছে। এবং এই যে মানুষ আমাদের দলের ডাকে সমবেত হচ্ছে কেবল এটা দলীয় কর্মসূচি না। এটা আপামর জনগণের দাবি। তাই তারা সমাবেশে স্বত:স্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছে। এটা দল না সমস্ত জনগোষ্ঠির স্বার্থেই কর্মসূচি। আর একারণে জনগণ যোগ দিচ্ছে বিএনপি’র সমাবেশে। প্রমাণীত হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে জনগণ বিএনপি’কেই ভোট দেবে। 

দেশ: আপনারা কি আপনাদের দাবি আদায়ে সেরকম শক্তি দেখাতে সামর্থ হয়েছেন? 

ফজলুল হক মিলন: আপনারা বারবার যে প্রশ্ন করছেন সেই প্রশ্নের মধ্যেই আছে উত্তর। প্রথমত আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখি। এরপর জনগণের উপর। জনগণই আমাদের শক্তি। সে জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবো সেই মানুষ তো আমাদের পক্ষে।

শেয়ার করুন