২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:৫০:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


স্মরণসভায় বক্তারা
যতদিন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন গাফ্ফার চৌধুরী বেঁচে থাকবেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২২
যতদিন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন গাফ্ফার চৌধুরী বেঁচে থাকবেন অনুষ্ঠানে অতিথি, আয়োজক ও সুধীর কয়েকজন


সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহকে গাফ্ফার চৌধুরী বলেছিলেন : বীনু নেই আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে না

যতদিন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বেঁচে থাকবেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটি গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’-সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার সকল পরিচয় ঢাকা পড়ে গেছে। তিনি ছিলেন ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং সাংবাদিক। তবে তিনি তার লেখায় মননে, চিন্তা-চেতনায় সবসময় বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করতেন। তিনি তার প্রবাস জীবনের ৪৮টি বছর শুধুই বাংলাদেশকে খুঁজেছেন। আমরা যারা প্রবাসী তাদের জন্য উত্তর উদাহরণ রেখে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে যদি কারো নাম নিতে হয়, তাহলে তিনি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশকে মানুষের অন্তরে বসিয়ে দিয়েছেন। গত ২৮ মে সন্ধ্যায় আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্কলারর্স বাংলাদেশ আয়োজিত স্মরণসভাটি বিশিষ্ট সংগঠক ও প্রকাশক শামীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। প্রবঢু সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সূচনাতেই ছিলো রূপা খানের নেতৃতে একঝাক মহিলা শিল্পীর ‘আগুনের পরশমণি’ গানটি পরিবেশন এবং সেই আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি পরিবেশন এবং আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম, বিটিভির সাবেক প্রযোজক বেলাল বেগ, বিশিষ্ট কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মেরাজ, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সউদ চৌধুরী, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, সাংবাদিক মনজুর আহমদ, মূলধারার রাজনীতিবিদ মোর্শেদ আলম, ফাহিম রেজা নূর, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ডা. মাসুদুল হাসান এবং টেলিফোনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং ড. নূরন নবী। সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী তাজুল ইমাম, শুভ্রা গোস্বামী। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি জহিরুল ইসলাম, হাসান আল আব্দুল্লাহ, রানো ফেরদৌস, সুলতানা বাসিত মুন্না, নাসিমা আক্তার।


সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ছিলো সংগ্রামের। তিনি লন্ডনে গ্রোসারি স্টোরেও কাজ করেছেন এবং অন্যদের সাহায্য করেছেন। যখন থেকে তিনি কলাম লেখা শুরু করেন তখন থেকে তিনি কষ্টের কাজ ছেড়ে দেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী যত কলাম লিখেছেন, আর কেউ এতো কলাম লিখেছেন বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান ১৯ মে। যদি বিএনপির আমলে তার মৃত্যু হতো, তাহলে তার লাশ বাংলাদেশে নেয়া হতো না। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর লাশ বাংলাদেশে নেয়ার জন্য এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য। তার সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো আমিই তাকে বেশি কল দিতাম, তিনি অবশ্য মাঝে মধ্যে কল দিতেন। কল দিলেই তার ছেলেমেয়েরা ধরতো এবং তাকে দিতেন। মৃত্যুর আগের সোমবার তিনিই আমাকে কল দিয়েছিলেন- কল দিয়ে বললেন, আমাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবে, তখন তিনি বললেন, আমি হাসপাতাল ছেড়ে যেতে চাই না। আমার বীনু চলে গেছে, আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। বীনুর যখন মরণ রোগ ধরা পড়ে তখন বীনু আমাকে লিখেছিলো- আঙ্কেল কাল থেকে বাবাকে আমাকে ছাড়াই চলতে হবে। বীনুর যে অসুখ হয়েছিলো সেটা সে তার বাবাকে জানায়নি। বীনুর চিঠির উত্তর আমি দিয়েছিলাম, বীনুর মৃত্যুর পর, পেয়েছিলো ইন্দিরা। যদিও সেটা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে দেখানো হয়েছিলো।

সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী চিরকাল বাঙালির মনে বেঁচে থাকবেন তার কালজয়ী গানের জন্য। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আমার পর আব্দুর গাফ্ফার চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার জীবনী লেখার জন্য। কিন্তু এরই মধ্যে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পাঠান দূতাবাসের চাকরি দিয়ে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার চাকরি চলে যায়। তারপরেও তিনি সেখানে স্থায়ী হন। তিনি বলেন, তখন খালেদা জিয়ার শাসন আমল। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ঠিক করলেন পলাশি থেকে ধানমন্ডি নাটকটি করবেন। তখন কেউ রাজি হচ্ছিলো না, আমি এবং পীষুষ বন্দোপাধ্যারয় রাজি হলাম। নাটকটি কলাম, দেখানো হলো লন্ডনে, নিউইয়র্কে। পরে অবশ্য এটি চলচ্চিত্র করা হয় কলকাতাতে।


ড. নূরন নবী বলেন, তিনি যখন সর্বশেষ নিউইয়র্ক এসেছিলেন, তাকে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। দেশবিরোধী জামাত- বিএনপি বাধা দিয়েছিলেন। এই জুইস সেন্টারেই সেই অনুষ্ঠান হবার কথা ছিলো। পরে আমরা অন্য একটি স্থানে গিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলাম। তার নাটক পলাশি থেকে ধানমন্ডির সময়ও বাধ এসেছিলো, আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তা দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বলেন, যতদিন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা থাকবে তিনি ততদিন বেঁচে থাকবেন।

ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার চেতনাকে ধারক করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সউদ চৌধুরী বলেন, আমরা তার পলাশি থেকে ধানমন্ডি নাটকটি করি ২০০৭ সালে। তা ছাড়া তার সাথে মিল ছিলো আমরা একই বিষয়ে লেখাপড়া করি। আমার কাছে যেটা মনে হয় তিনি তার লেখা দিয়ে আমাদের আলোকিত করেছেন।

হাসান ফেরদৌস বলেন, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কখনো আদর্শচ্যুত হননি। তিনি পুরোপুরি বাঙালি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। অসুস্থ হবার পর তিনি ৪৮ বছর লন্ডনে ছিলেন, তিনি ছিলেন আমাদের মত প্রবাসী। তার মননে, চিন্তা, চেতনায় এবং বোধে সব সময় বাংলাদেশকে রেখেছেন। যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তার লেখা ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, তার একটি গান তার সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তার সকল পরিচয় ঢাকা পড়ে গিয়েছে।

বেলাল বেগ বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর পরেই আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্থান।

গোলাম মোস্তফা খান মেরাজ বলেন, আমরা অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছি, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কলম দিয়ে যুদ্ধ করেছেন।

ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী অমর হয়ে থাকবেন।


শেয়ার করুন