২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৫৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


এবার নেতাকর্মী থেকে বাঁচতে জিএম কাদেরের নাটক
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
এবার নেতাকর্মী থেকে বাঁচতে জিএম কাদেরের নাটক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের


গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরের কথা। ১টার পরে সাংবাদিকদের মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না তা বিকেলে জানানো হবে। এর আগে সকাল থেকেই দলটির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে দলটির কয়েকশত নেতা-কর্মী। তাদের কণ্ঠে স্লোগান ‘দালালি না রাজপথ’, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, বর্জন বর্জন’ ইত্যাদি। কিন্তু সে-ই বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের অংশটি ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জনের দাবি জানিয়ে মিছিল করেছে। এ-দিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে কার্যালয়ে পৌঁছান জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। কিন্তু সে-ই সব বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আর বিক্ষোভকে চাপা দিয়ে ঐদিনই বিকেলে ২৮৩ আসনে ভোট করার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। দৃঢ় কণ্ঠে আওয়াজ তুলে বললেন জাপা ক্ষমতায় যাচ্ছে। আর সে-ই জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতার পরও অনেকে কষ্টে এবারের নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। বর্তমান সংসদে দলের সংসদ সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। এবার তার অর্ধেক আসনও জুটেনি তাদের কপালে। আর এমন পরিস্থিতিতে মারাত্মক তোপের মুখে পড়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। যেটি আশঙ্কা করেছিলাম, সেটিই হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে, সেটিই হয়েছে। যার জন্য নির্বাচনে কেউই আসতে চাইছে না। আমার বিশ্বাস, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই হলো জাপা নেতা জি এম কাদেরর নতুন বিপ্লবী বক্তব্য। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেদের এমন ক্ষোভের পেছনে অন্য কিছু রয়েছে। তা-হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তারা ভীষণ ক্ষুব্ধ জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ বেশ কয়েকজনের ওপর। এমন ক্ষোভ, রোষাণল থেকে বাঁচতেই দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নতুন নাটক শুরু করেছেন। এখন জোর গলায় বলে যাচ্ছেন এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এসব তথ্য জানা গেলো দলটির বেশ কয়েকজন বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীর সাথে আলাপ করে। 

কি হতে কী হয়ে গেলো

মেলা দেনদরবারের এবারে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু সমঝোতার প্রত্যেক জাপা’র আসনের পেছনেই ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী। এবারই জাপা ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৬৫ জন প্রার্থী টিকে থাকেন। যদিও তাঁদের অনেকেই প্রচারে তেমন একটা ছিলেন না। একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, প্রকৃত অর্থে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত প্রায় দু’শয়ের অধিক প্রার্থী ধীরে ধীরে সটকে পরে নির্বাচনের মাঠ থেকে কোনো ধরনের আওয়াজ না দিয়ে। যাতে সরকারের ও দলের রোষাণলে যেনো পড়তে না হয়। যদিও কাগজে কলমে দাবি করা হয় ভোটে ছিলেন ২৪৬ জন। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করে পাওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জিততে পারলো জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি। এতে করে ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কমে গেলো। অথচ এই নির্বাচনের আগে দলটির ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন। প্রশ্ন হলো কেনো এমন হলো? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাপা’র নেতাদের প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিলো তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে মিলেমিশে মন্ত্রিসভায় থাকবেন। আবার বিরোধী দলেরও ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু বিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের আমলে একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন প্রমাণ করতে গিয়ে জাপা পড়েছে গ্যাড়াকলে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাথে থাকলেও নিজ দলকে জাপা সারা দেশে সাংগঠনিকভাবে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারেনি। আবার শেষের বারে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের পাশে থাকলেও দলটির পক্ষ জাপা’র নেতারা তেমনভাবে আখের গোছাতে পারেনি নানান ধরনের রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে। ফলে জাপা আসলে বিরোধী দলের নামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আশে পাশে থেকেছে। আর এসব কারণে সমঝোতা করেও পাওয়া ২৬ আসনে থেকে মাত্র ১১টি। আবার এমন বিজয় ছিনিয়ে আনার পেছনেও নানান ধরনের কথা শোনা যায় রাজনৈতিক ময়দানে। 

কি করার ক্ষমতা আছে জাপা’র?

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জাপা’র শীর্ষ নেতারা যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ভূমিকা রেখেছে বিশেষ করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এখন দলের প্রায় সব নেতাকর্মীর। এর বাইরে ক্ষোভ আছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রীও হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় এবার ঢাকায় একটি মাত্র আসন (ঢাকা-১৮) শেরীফা কাদের। এ আসনে শেরীফা কাদের জামানত হারিয়েছেন। তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর কাছে। খসরু চৌধুরী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। অথচ পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দফায় দফায় আলোচনার পর জাপাকে ২৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ঢাকার কোনো আসনে ছাড় না দেওয়ায় জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে সময় এমন আলোচনাও ছিল। এমন মুহূর্তে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের এক প্রকার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আসন ভাগাভাগিতে শেরীফা কাদেরের ঢাকা-১৮ আসনটি নিশ্চিত হওয়ার পরই জাপা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এমন ঘটনায় ঢাকা-১৮ আসনে শেরীফার জন্য আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানকেও নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়। জাপা’র জন্য এতো কিছু করার পরও দলটি কেনো আওয়ামী লীগের ওপর এখন আবার চড়াও হয়েছে? কেনো বিক্ষুদ্ধ ভাব দেখাচ্ছে? জানা গেছে, জিএম কাদের, মুজিবুল হক আর শেরীফা কাদের দলের বিক্ষুদ্ধ ত্যাগি নেতাদের ক্ষোভ-রোষাণল থেকে বাঁচতে এবার আরেক ধরনের কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। কেননা ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে পশ্চিমারা কঠোর বিবৃতি দিয়েছে। জাপা’র জি এম কাদেররা মনে করছে এটাই মোক্ষম সময় আওয়ামী বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায় করে নেয়া। জানা গেছে, আসলে বিপ্লবী ভূমিকা রেখে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা নিতে চায়। নানান ধরনের ভূমিকার পাশাপাশি উচ্চবাচ্য করে নেতাকর্মীদের মারমুখী আচরণ নিবৃত্ত করতে চায়। এমনটাই মনে করে জাপা’র সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে। জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বুধবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে না যাওয়ার এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ঘটনার পেছনে এমনটাই কারণ বলে অনেকে মনে করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাল্টাল জাতীয় পার্টি। দলটির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বুধবারই শপথ নিতে যাবেন। এর আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) পক্ষ থেকে ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরেই বুধবার শপথ নিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

শেয়ার করুন