২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:৩৪:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


নিজস্ব সফটওয়্যার থাকার পর কেন ভাড়া করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে
সোনালী এক্সচেঞ্জের এজেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
সোনালী এক্সচেঞ্জের এজেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে


প্রবাসে বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জ। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বস্ত এবং আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কারণ এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। একসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ প্রেরণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছিল সোনালী এক্সচেঞ্জ। যে কারণে সবাই সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করতেন। বর্তমানে বেসরকারি অর্থায়নে শত শত অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হাতে কাছেই এই সব প্রতিষ্ঠানের শাখা প্রশাখা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রোসারি থেকে শুরু করে সর্বত্রই তাদের এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। তারপরেও সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রতি মানুষের আস্থার ফাটল ধরেনি। এত প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও মানুষ এখনো সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করছে। সোনালী এক্সচেঞ্জ এখানো প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। সোনালী এক্সচেঞ্জ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা এবং বিশ্বস্ততার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার কারণ হলো-এটির গায়ের সরকারি একটি সিল লাগানো রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধারণা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে তারা নিরাপদ বোধ করেন। কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়ছয় করার সুযোগ থাকলেও সোনালী এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে তা হয় না। সোনালী এক্সচেঞ্জে অর্থ প্রেরণ করে তারা নিশ্চিত থাকেন যে, তাদের পাঠানো অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে তাদের প্রিয়জনের কাছে চলে যাবে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রেট বেশি থাকলেও তারা ছুটে যান সোনালী এক্সচেঞ্জে। কারণ তারা এটিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাবেন। তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাবেন। তারা এই প্রতিষ্ঠানকে তাদের ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ভাবেন। কারণ এর সঙ্গে তাদের প্রিয় দেশের নাম জড়িত। অর্থাৎ এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। যারা সোনালী এক্সচেঞ্জের কাস্টোমার বিপদে পড়া ছাড়া তারা অন্য মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নত সেবা দিয়ে সোনালী এক্সচেঞ্জ নিজস্ব গ্রাহক তৈরি করেছেন। কষ্ট হলেও তারা সোনালী এক্সচেঞ্জের শাখাগুলোতে গিয়ে তাদের অর্থ প্রেরণ করেন। ক্রেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সোনালী এক্সচেঞ্জকে বহু বছর সেবা প্রদান করতে হয়েছে।

বিশ্বস্ত এবং আস্থার এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সোনালী এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের একটি সহযোগি সংগঠন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বাংলাদেশ থেকেই। অতি সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, ব্যাংকের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আফজাল করিম এবং সোনালী ব্যাংকের আইটি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিউইয়র্ক আসেন। গত ১৬ মে তারা সোনালী এক্সচেঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করেন। বার্ষিক সাধারণ সভায় তারা ২০২২ সালে বার্ষিক রিপোর্ট অনুমোদন করেন। এর পাশাপাশি তারা আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সোনালী এক্সচেঞ্জের এজেন্ট দেয়ার ব্যাপারে। এই সিদ্ধান্তটি ছিলো সোনালী এক্সচেঞ্জের জন্য আত্মঘাতী। এই এজেন্ট নিয়োগের কারণে সোনালী এক্সচেঞ্জের দীর্ঘদিনে যে অর্জন ‘বিশ্বাস যোগ্যতা, নির্ভরতা, আস্থার’ তা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি আমজনতার হাতে চলে যায়, তাহলে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটি প্রশ্নবৃদ্ধ হয়ে যায়। আর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কেন, কার স্বার্থে, কোন উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে? এই নীলনকশার ফলে সোনালী এক্সচেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠান ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে হারাতে পারে বিপুল পরিমাণ ব্যবসাও। সোনালী এক্সচেঞ্জ সারকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা জবাবদিহিতে রয়েছে। এজেন্টের কাছে গেলে সেই জবাবদিহিতা থাকবে না। এজেন্টদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার পর সোনালী এক্সচেঞ্জ যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে তা হারাতে বাধ্য। গ্রহণযোগ্যতা হারালে ক্রেতা হারাতে বাধ্য। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সোনালী এক্সচেঞ্জকে যদি বেসরকারি অন্য অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের মত মনে করা শুরু করে তাহলে সোনালী এক্সচেঞ্জের ক্ষতি ছাড়া ভালো হবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বেসরকারিভাবে যারা অর্থ প্রেরণ করে তারা অনেক অর্থপ্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের সাব এজেন্ট। সেখানে কেউ অর্থ প্রেরণ করতে গেলে প্রথমেই একজন ক্রেতা জিজ্ঞেস করে আজকের রেট কত? অনেক ক্ষেত্রে অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাই বলে দিচ্ছেন আজকে ‘এদের’ মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করলে আপনি বেশি অর্থ পাবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবাই ভালো রেটের দিকেই ঝুঁকবেন। তা ছাড়া এজেন্টদেরকেও তো অর্থ দিতে হবে। সেখানে চিন্তার অবকাশ থাকবে না সোনালী এক্সচেঞ্জ নিয়ে। কারণ সোনালী এক্সচেঞ্জের বিশেষত্ব তো আর কিছু নেই। সোনালী এক্সচেঞ্জকে আর ১০টি প্রতিষ্ঠানের মত মনে করবে। সোনালী এক্সচেঞ্জের রেট অধিকাংশ সময়ই অন্য অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম। তাহলে ক্ষতি সরাসরি হবে সোনালী এক্সেচেঞ্জের। সোনালী এক্সচেঞ্জের ক্ষতি হলে দেশের ক্ষতি হবে। জেনেশুনে এই ক্ষতি করার কেন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

বর্তমানের অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে যে জিনিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে অনলাইন বা অ্যাপস। জানা গেছে, সোনালী এক্সচেঞ্জের অনলাইন সিস্টেম অত্যন্ত ঝামেলার এবং গ্রাহকবান্ধব নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অনলাইনটি সিস্টেমটি অন্যের হাতে জিম্মি। দীর্ঘদিন ধরেই সোনালী এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জাড়িত আরকে সফটওয়ার নামে একটি কোম্পানী। সেই কোম্পানী প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ নিচ্ছে তাদের সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য। প্রশ্ন হলো সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব সফটওয়্যার থাকতে অন্যের সফটওয়্যার কার স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে? নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার না করে অন্যের সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট করা হচ্ছে। এখানে অন্য ব্যাংকের যেসব অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা তো নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে। সোনালী এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা নয় কেন? নিজস্ব সফটওয়্যার থাকতে অন্যের সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন অর্থ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি অর্থ মানেই কি সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল? নিজস্ব সফটওয়্যার যেহেতু আছে, সেহেতু তা ব্যবহার করে অনেক অর্থ সাশ্রয় করা যায়। একটি সূত্র জানায়, অনলাইনটি এই কোম্পানি জটিল করে রেখেছে। যাতে করে মানুষ সহজভাবে কাজটি করতে না পারে। এটা তাদের টেকনিক। কার স্বার্থে এই কাজ? কার পকেট ভরতে এই কাজ?

অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন, এখন ক্রেতা বাড়াতে হলে আরো সহজ করা প্রয়োজন। সোনালী এক্সচেঞ্জ বা সোনালী ব্যাংক নিজস্ব অ্যাপস ব্যবহার করতে পারে। মানুষ যাতে যখন খুশি, সেখান থেকে অর্থ প্রেরণ করতে পারে। কাজের কাজ না করে এজেন্ট নিয়োগের পায়তারা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, সোনালী এক্সচেঞ্জের নামমাত্র একটি অ্যাপস আছে। কিন্তু কাজের গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই। এই অ্যাপসে কোন কাজ হয় না। যে কারণে প্রবাসীরা অ্যাপস ব্যবহার করতে পারছে না। অনেকেই বলেছেন, এখন অ্যাপস এজেন্ট নয়। আধুনিক যুগে মান্ধাতার আমলের সিস্টেমের দিকে কেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কার ইন্ধনে, কার স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে? আরেকটি প্রশ্ন এটি কী অর্থ মন্ত্রণালয় জানে?

শেয়ার করুন