৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০২:৫৪:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


একদফা আন্দোলনে অনড় বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
একদফা আন্দোলনে অনড় বিএনপি


নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দাবিতে এক দফা আন্দোলনেই অনড় রয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একদফার আন্দোলনকেই বেগবান করতে চায় দলটি। আর এলক্ষ্যেই দলটির সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এমন খবর মিলেছে দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে। 

বিএনপি’র একদফা আন্দোলন

একদফার আন্দোলন চলছে গত বছর থেকে। সরকার বিরোধী দলগুলোকে এক কাতারে এনে এক দফার আন্দোলন শুরু গত বছরের জুলাইয়ে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দাবিতে এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার দিন বিকালে নয়া পল্টনে আয়োজিত বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতেই এই এক দফার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছি। আর এই এক দফা দাবির পক্ষে তিনি ১৮ই জুলাই ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা এবং ১৯শে জুলাই শুধু ঢাকায় শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর থেকে বলা যায় বিএনপিসহ সমমনারারা একদফার আন্দোলনেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পৃথক পৃথকভাবে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির সমমনা দলগুলো। এরপর থেকেই চলে আসছে সে-ই আন্দোলন।

একদফার আন্দোলন বাতিল না স্থগিত?

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মাঠে প্রচরণা ছিল গত বছরের ২৮ অক্টোবরে বিএনপি’র ডাকে পল্টন মোড়ে সমাবেশ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে দলটি আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশ সংঘাতের মধ্য দিয়ে পন্ড হয়ে যায়। রাজধানীর আরামবাগ থেকে নয়াপল্টনের বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এর পরে সংঘাত-সংর্ঘষের কারণে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে নয়াপল্টন এলাকা বেশ কয়েকদিন। গ্রেফতার আতঙ্কে নয়াপল্টন এলাকা ছেড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যে-ই ২৮ অক্টোবর সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সে-ই স্থানে পাশে দিয়ে যেতেও অনেকের ভয় ছিল। অথচ সেদিন ফকিরাপুল হতে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি ও কাকরাইল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড়। একদিন আগেই রাত থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। আগত এসব কর্মীর অধিকাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। তবে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছিল অনেকেই। কিন্তু পন্ড হয়ে যাবার পর থেকে যেনে নিরব নিথর হয়ে পড়ে বিএনপি। এমন নিরব নিথর অবস্থার মধ্যে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি সরকার করে সেরে ফেলে। এই সেরে ফেলার পর থেকে জনগণের মধ্যে আরো ধারণা বদ্ধমূল হয় যে বিএনপি কার্যত এখন আর একদফার আন্দোলনে নেই, তারা পিছু হটেছে। এব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলতে থাকেন যে বিএনপি হেরে গেছে। এমনকি বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিকে ’নেই কাজ তো খই ভাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণমাধ্যমে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপির অ্যাকশনের এই কর্মসূচি, এটা যদি ইস্যুভিক্তিক হয় তাহলে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি খাদের গভীরে চলে যাচ্ছে। আগে তো খাদের কিনারায় ছিল। এখন গভীরে যাচ্ছে। বিএনপি এখনো বড় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এখন নিষ্ক্রিয় আছে। ভুল করেছে। ভুল রাজনীতির চোরাবালিতে আটকে গেছে। অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জনগণ নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি’র একসময়ের আন্দোলনের সমমনা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। তিনিও বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে গাড়িতে আগুন দিয়েছে, পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে। তাদের পেছনে সাধারণ মানুষ নেই। গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি হেরে গেছে। অন্যদিকে বিএনপি’র নেতা দাবিদার মেজর (অব.) এম আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেছিলেন, বিএনপি গত ২৮ অক্টোবরের ফাইনাল খেলায় হেরে গেছে। সরকারের কাছে হেরে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন। 

একদফাতেই থাকার কিছু নমুনা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপি আসলে গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পাশাপাশি ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে নিরব নিথর হয়ে আছে। এপ্রসঙ্গে অবশ্য আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া বলেছিলেন, আপাতত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কোনো ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন নিরবতা কই? বলেন, এইতো লিফলেট কর্মসূচি দিয়েছি। র‌্যালি করলাম। এখন হুট করেই তো...আন্দোলনেরও তো একটা সারে গামা আছে। প্রত্যেকটা জিনিসেরও যেমন সারে গামা আছে তেমনি আন্দোলনেরও তো গানের মতো একটা সারে গামা আছে। আমরাতো কর্তৃত্ববাদি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এখানে মানবতা নাই, নেই আইনের শাসন..। 

উপজেলা নির্বাচন বর্জনই একদফাতে অনড়ের প্রমাণ

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বদলে সরকারের পদত্যাগই হচ্ছে মূলত বিএনপি প্রধান দাবি। আর সে-ই দাবিতে অনড় থাকার বড়ো প্রমান হচ্ছে দলটি আগামী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এর পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করবে, অতীতের মতোই ওইসব নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে- উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রশ্নে এটাই হচ্ছে বিএনপি’র সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। জানা গেছে, বিএনপি’র কে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক ধরনের অনুরোধ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে, বিএনপি যদি এথন এতো জুলুম গ্রেফতার নির্যাতনের পরে শেষ মেষ সে-ই এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সে-টি হবে তাদের জন্য বিরাট কৌশলগত পরাজয়। এমন সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দলে চেতনার স্থান থেকে আর ধরে রাখা যাবে না। দলের ভয়াবহ ভাঙ্গনের পাশাপাশি দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে অনভিজ্ঞ নেতৃত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে। তাছাড়া বিএনপি করে না কিন্তু তাদের কথায় বা অনুরোধে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি তারাও দ্বিধায় পড়ে যাবে। অন্যদিকে এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বা নির্বাচন কমিশনের অধীনে এখন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বিএনপি’কে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার বড়ো সুযোগ পেয়ে যাবে। 

শেষ কথা

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না- দলটির এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান আলাপ আলোচনা চলছে। চলছে নানান ধরনের হিসাব নিকাশ । প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এখনো বিএনপি’ হার্ড লাইনে আছে? সে-ই একদফা আন্দোলনেই আছে বিএনপি? অনেকে মনে করেন কার্যত বিএনপি হার্ড লাইনে বা গতবছরে নেয়া সে-ই একদফাতে আছে। তা না হলে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না- দলটির পক্ষ থেকে এখন এই ঘোষণা আসতোই না। এদিকে মাঠ পর্যায়েও দেখা গেছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা একদফাতেই স্থির রয়েছে। যদিও অনেকে মনে করেন তৃণমূলে বিএনপি উপজেলার পক্ষে কিন্তু সম্প্রতি একটি নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা দেখা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে এবার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পাশে নেই বিএনপি-এমন খবর পাওয়া গেছে । যদিও বলা হচ্ছে বিএনপি- নেতাকর্মীদের একচেটিয়া সমর্থন পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এদের কারো পক্ষেই বিএনপি’র সক্রিয়ারা নেই। কারণ অনেকের মধ্যে এটা বদ্ধমূল হয়ে গেছে মনিরুল হক সাক্কুর ও নিজাম উদ্দিন কায়সাররা আসলে পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগকেই প্রতিষ্ঠা করছে। সেজন্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপি আপাতত চুপ থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মুখ খোলাটি বেশ তাৎপয্যপূর্ণ। সবচেয়ে তাৎপয্যপূর্ণ হলো যে এমন ধরনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলটি বলতে চাইছে তারা একদফাতেই আছে। আর এমন বার্তাই যে দেয়া হয়ে সেটা দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করেও জানা গেছে।

শেয়ার করুন