২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:৪৪:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


স্মৃতিকথায় রুহিন হোসেন প্রিন্স
দাদির রুটি ভাগাভাগি দেখে সমাজতন্ত্রে আকৃষ্ট হই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
দাদির রুটি ভাগাভাগি দেখে সমাজতন্ত্রে আকৃষ্ট হই বক্তব্য রাখছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স (ফাইল ছবি)


আমাদের এ অঞ্চলে চল্লিশের যে মন্বন্তর বলে শুনে থাকি, এসব বিষয়গুলো আমার দাদি দেখেছেন। যার জন্য আমি খুব ছোট্টবেলায় দেখতাম সকাল বেলায় ওনাকে চারটা রুটি দিতে হতো। নিজের পাতে রাখা দুটি রুটি তিনি নিজে খেতেন। আর বাকি দুটি তিনি গরিবদের জন্য রাখতেন। আসলে এই রাজনীতিতে আসার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল। সে কারণটাই ছিল আমার দাদি। 

এসব কথাগুলো জানালেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়ে তার রাজনীতিতে আসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। এক্ষেত্রে তার রাজনীতি আসার পেছনের ঘটনা তুলে ধরেছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের কাছে। 

সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স, রুহিন হোসেন প্রিন্স নামে পরিচিত। তিনি টেলিভিশন টকশোর পরিচিত মুখ। জনস্বার্থে গণমাধ্যমে কথা বলা ও পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও করেন। ছাত্রাবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৮১ সালে রাজনৈতিক পড়াশোনা করেছেন। পৃথিবীর অন্তত ১৫টি দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তার জীবনীতে দেখা যায়, তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে এমএসএস করেছেন। বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের খুলনা জেলার সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি (১৯৯১ থেকে ১৯৯৪), ’৯০ দশকে গড়ে ওঠা বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সমন্বয়ক ও ১১ দলে সিপিবির প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। ৮০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, নেতা ছিলেন। একাধিক বার গ্রেফতার বরণ ও অনেক সময় আত্মগোপনে থেকেছেন।

বাংলাদেশের দেশের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, স্বৈরাচারবিরোধী, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অগ্রসর ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনের পরিচিত মুখ, রুহিন হোসেন প্রিন্স এখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পার্টির রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও গণযোগাযোগসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ অনুষ্ঠিত পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। রুহিন হোসেন প্রিন্স বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা, সাবেক সমন্বয়ক, তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সংগঠক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ শান্তিপরিষদের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স রাজনীতিতে আসার নেপথ্য কথা এভাবেই বললেন

দেখেন, রাজনীতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন জাগে। বলা যায়, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, নিজ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ। দায়িত্ববোধ বলতে বুঝি প্রধানত নিজে, নিজেদের এবং সবার বাঁচা এবং ভালোভাবে বাঁচা। এজন্যই প্রধানত রাজনীতিতে আমার আসা। আসলে এই রাজনীতিতে আসার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল। সে কারণটাই ছিল আমার দাদি। আমার দাদির নাম হচ্ছে রহিমুনেচ্ছা। আমার দাদির আদি পিতা নড়াইলের ঐতিহাসিক মির্জাপুর গ্রাম এবং তিনি সদর উপজেলার সন্তান। আমাদের এ অঞ্চলে চল্লিশের যে মন্বন্তর বলে শুনে থাকি, এসব বিষয় আমার দাদি দেখেছেন। যার জন্য আমি খুব ছোট্টবেলায় দেখতাম সকালবেলায় ওনাকে চারটা রুটি দিতে হতো। নিজের পাতে রাখা দুটি রুটি তিনি নিজে খেতেন। আর বাকি দুটি তিনি গরিবদের জন্য রাখতেন এবং দুপুরের খাওয়াতেও তা-ই করতেন দাদি রহিমুনেচ্ছা। কিছুটা খেয়ে আর বাকিটা ঠিকই দাদি অন্যজনের জন্য রাখতেন। এই দাদিকে দেখেছি কোনোদিন যদি তার পাতে কম ভাত দেওয়া হতো বা আলাদাভাবে দেওয়া হতো উনি খুব রাগ করতেন। দাদি ভাবতেন ওনার ভাগে প্রতিদিনের যে বরাদ্দ রয়েছে, এতে তার নিজের যেমন হক আছে, তেমনি অন্যদের তাতে হক আছে। ছোটবেলায় নিজ ঘরেই এটা দেখার সুযোগ মিলেছে। এটা দেখে বুঝলাম যে মানুষের প্রতি একটা দায়িত্ববোধ আছে। এরপর তো ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে পরিচিত হই। সে-ই ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কে পরিচিত হই। আর এই সমাজতন্ত্রের মাধ্যমেই যে সমাজটা পরিবর্তন করা যায়, তা আমার বুঝে চলে আসে। এই সমাজতন্ত্রটাই যে মানুষের মুক্তি দিতে পারে সেটা বুঝতে পারি। এর মধ্য দিয়েই আমার রাজনীতিতে প্রবেশ। আমি আসলে এটাই বলতে চাই যে, খুব সচেতনভাবেই আসি। আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বের শেষ বর্ষের ছাত্র। সে সময়েই আমি সরাসরি রাজনীতিতে আসি এবং এখন পর্যন্ত সে ধারাতেই থেকে বাংলাদেশকে পাল্টাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

আমি যে-ই অঞ্চলে থাকতাম, সেটা একটা গোষ্ঠীর মধ্যে। আমার বাবা পিডিবিতে চাকরি করতেন। আমরা খুলনা শহরে শেখপাড়া কলোনিতে থাকতাম। জন্মটা আমার গ্রামে হলেও পরে পুরো জীবনটাই শহরে কেটেছে। ছোটবেলাতেই একটু খেলাধুলা করা, ফুটবল টিম কিংবা কেনো ক্লাব অর্গানাইজ করা। কিছু সাহিত্য চর্চা করা। আর ওই বয়সে একটি ভালো ছেলে হিসেবে সমাজের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জনের খোঁজখবর নেওয়া, ভালোমন্দ দেখভালের মধ্যেই নিজেকে জড়িত রেখেছি। কিন্তু কলেজে পড়ার সময়েই আমার পরিচয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এবং তারাই আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করে এই ছাত্র ইউনিয়নটা আসলে কি? একসময় মনে করতাম রাজনীতির এসবের মধ্যে ঢুকবো না। এসব নেতার সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলে বুঝলাম, মানুষের মুক্তির পথই হচ্ছে সমাজতন্ত্র। সে সময়ে আমি যাদের পাই, তাদের মধ্যে হলো খুলনার অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ। সাংবাদিক মানিক সাহা, যার নাম আপনারা সবাই জানেন। আমি দুইজনকেই সরাসরি পাই। এ দুইজনেরই সাহচর্য পাই আর সরাসরি আমরা দেখার সুযোগ পাই কমরেড রতন সেনকে। এছাড়া আমরা তখন বিভিন্ন বিপ্লবীদের চরিত্র সংগ্রাম নিয়ে পড়াশোনা করি। বিশেষ করে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে বিপ্লবীদের ভূমিকা লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস পাঠ করি। সে-ই ক্ষুদিরাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের ইতিহাস আমাদের বড়ই উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়া বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রের পুরো বলে পরিচিত কমরেড মনি সিং, কমরেড ফরহাদের বিপ্লবী ভূমিকা আমাকে সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট করে।

শেয়ার করুন