২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৩১:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রায়হান জামানের অকাল মৃত্যু : পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
রায়হান জামানের অকাল মৃত্যু : পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ পরিবারের সঙ্গে রায়হান জামান


জন্মগ্রহণ করলেই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু প্রতিটি মানুষের নিশ্চিত। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। তবে কিছু মৃত্যু আছে যাকে ব্যাখ্যা করা কঠিন। বিশেষ করে পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। এই পৃথিবীতে বাবার জন্য সবচেয়ে ভারী বস্তু হচ্ছে তার সন্তানের লাশ বহন করা। তবুও সব মৃত্যুই আমাদের মেনে নিতে হয়। এটাই নিয়ম। কিন্তু তারপরেও কিছু মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন।

নিউইয়র্কের সেরা ১০ পাবলিক স্কুলের শীর্ষস্থানীয় ‘স্টাইভ্যাসেন্ট হাই স্কুল’ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর কুইন্স কলেজ থেকে বিজনেস-ফাইন্যান্সে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া রায়হান ইফতেখান জামানের (২৯)-এর লাশ উদ্ধার করলো নিউইয়র্কের পুলিশ তার ব্যায়ামাগার থেকে। নিউইয়র্কের কুইন্সে রিগোপার্ক এলাকায় বাসার পেছনে নিজেদের তৈরি ব্যায়ামাগার থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান এবং জামালপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি মোর্শেদা জামানের একমাত্র পুত্র সন্তান রায়হান ইফতেখার জামানের (২৯) লাশ উদ্ধার করলো নিউইয়র্কের পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ মার্চ। প্রতিদিনের মত রায়হানের বাবা কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান সকাল সোয়া আটটার দিকে কাজে চলে গিয়েছিলেন। মোর্শেদা জামানও প্রতিদিনের মত ছেলেকে সকালের নাস্তা খাইয়ে কাজ চলে যান। আশরাফুজ্জামান এই প্রতিনিধিকে জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে তার ছেলের চাকরি হয়েছিল জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। প্রতিদিন সে বিকেল ৩টার দিকে কাজে যায়। তারা মনে করেছিলেন ছেলে কাজে গিয়েছে। কিন্তু মা মোর্শেদা জামান দুপুরে তার স্বামীকে ফোন করেন। এবং বলেন রায়হান কাজে গিয়েছে কিনা। আশরাফুজ্জামান বাসার ভিডিও ক্যামেরায় দেখতে পান তার ছেলে দুপুর ১২টার দিকে তার জিম রুমে ঢুকেন। মোর্শেদা জামান প্রথমে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন এবং বলতে থাকেন, এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল আমার সন্তান, আমার বুকের ধন। সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল আমরা থাকবো কী করে? কার জন্য থাকবো? অনেক কষ্টে কান্না সংবরণ করে বলেন, আমার ছেলে আমাদের বাসার দ্বিতীয় তলায় ঘুমায়। সে বাসার বেইসমেন্টও দখল করে নেয়। সেখানে তার ব্যায়মের জিনিসপত্র ছিল। আমি তখন বাড়ির ব্যাকইয়র্ডে এক রুম তৈরি করি নিজের জিনিসপত্র রাখার জন্য। সেই রুমটিও আমার ছেলে নিয়ে নেয়। সেখানে তার ব্যায়মের নতুন যন্ত্রপাতি রাখে। শত হলেও ছেলেতো কিছু বলতে পারি না। সে যেভাবে খুশি থাকে সেইভাবেই তাকে রাখার চেষ্টা করেছি। তিনি এই প্রতিনিধিকে ব্যায়ামাগারটি দেখান। আশরাফুজ্জামান আরো বলেন, আমি ভিডিওতে দেখতে পাই তার গাড়িটি বাসার ব্যাকইয়ার্ডে রয়েছে। আমার স্ত্রী প্রশ্ন করায় আমি তাকে বলি হয়তো সে উবার নিয়ে কাজে চলে গিয়েছে। বিকেলে মোর্শেদা জামান বাসায় চলে আসে। কাঝ থেকে ফিরেন আশরাফুজ্জামানও। তারা ছেলেকে বিভিন্ন রুমে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে মোর্শেদা জামান ফোন করে রায়হানের এক বন্ধুকে। জানতে চান রায়হান কাজে গিয়েছি কি না। উত্তরে সে বন্ধু জানায় রায়হানতো আজকে কাজে আসেনি। ফোনে উত্তর আসে না। ম্যাসেজের উত্তরও আসে না। বাবা মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে তাদের সন্তান কোথায়? শুরু হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাত গভীর হতে থাকে। তাদের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সকল রুম খুঁজে মোর্শেদা জামান ও আশরাফুজ্জামান ছেলের ব্যায়ামাগানে যান। দরজা খুলতেই দেখতে পান তাদের আদরের সন্তান মাটিতে পড়ে রয়েছে। তার শরীর ঠান্ডা। ওই অবস্থায় তারা পুলিশ কল করেন। পুলিশ আসে, অ্যাম্বুলেন্স আসে। কিন্তু রায়হানের নিথর শরীর আর নড়ে না। জানানো হয় রায়হান আর নেই। পুলিশ লাশ নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যায়ামাগারের কিছু জিনিস। পরদিন ঘটনা জানাজানি হলে পুরো কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। লোকজন ভিড় জমায় তাদের রিগোপার্কের বাসায়। আশরাফুজ্জামান ও মোর্শেদা জামানের কান্নায় পুরো এলাকার বাতাস যেন ভারী হয়ে যায়। কথা প্রসঙ্গে আশরাফুজ্জামান জানালেন, তার ছেলে প্রিয় একটি বিড়াল রয়েছে। বিড়াল নিয়ে খেলা করে। তার মনের মধ্যে কোন কষ্ট ছিল না। বদঅভ্যাস ছিল সে বেশি বেশি সিগারেট খেত। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ হার্টঅ্যাটাক বলা হলেও রায়হানের অস্বাভিক মৃত্যুর নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ রিপোর্ট আসার পর বুঝা যাবে তার মৃত্যুর আসল কারণ। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় দেশ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, তারা সকল রিপোর্ট পেয়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে হার্টএ্যার্টাকে। এটা নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহবান জানান তিনি।

রায়হান জামানের নামাজে জানাজা গত ১৬ মার্চ বাদ জোহর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পূর্বে আশরাফুজ্জামান তার ছেলের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেন। নামাজে ইমামতি করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। জানাজায় কমিউনিটির সর্বস্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। নামাজে জানাজা শেষে লং আইল্যান্ডের মুসলিম গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

শেয়ার করুন