২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:৩১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সাবাশ লংকান লায়ন্স
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
সাবাশ লংকান লায়ন্স


জনতার প্রতিরোধের আগুনে জ্বলছে সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়েছেন। পদত্যাগও করেছেন। এখন খুজছেন পালানোর উপায়। দখল দিয়েছে জনতা। দেশ জুড়ে ক্ষধা, জ্বালানি সংকট। এরই মাঝে নয়নাভিরাম গল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচে সেরা  দল অস্ট্রেলিয়াকে ইনিংস ব্যাবধানে পরাজিত করে ক্রিকেট বিশ্বকে বিস্মিত করলো শ্রীলংকা দল। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত শ্রীলংকা ক্রিকেট দলকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা অভিনন্দন। সবাই জানে চলমান আন্দোলনে সুন্দর দেশটির অর্থনীতি এখন বিপর্যস্থ।

খাবার সংকট,জ্বালানি নেই। ঘরে বাইরে হাহাকার।  জানি এরই মাঝেও ক্রিকেট নিয়ে আছে উন্মাদনা উচ্ছাস। আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো নিরাপত্তা সচেতন দেশ দ্বিধাকরেনি দ্বীপদেশে ক্রিকেট খেলতে। এ মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সেরা দল।  কিছুদিন আগেই উপমহাদেশের অন্যতম তুখোড় দল পাকিস্তান থেকে সিরিজ জিতে এসেছে। চির প্রতিদ্বন্দি ইংলান্ডকেও সর্বশেষ সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করেছে।

সেই দলটিকে চার দিনের মাথায় ইনিংস আর ৩৯ রানে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে, পুরো দলের নিজেদের নিংড়ে দেয়া নিবেদিত প্রয়াস আর কিছুতেই হার না মানা মুষ্টিবদ্ধ প্রতিজ্ঞার কারণে। সুন্দর দেশটির সুন্দর মানুষগুলোর কষ্টের সময়ে এই জয় আনন্দের উপকরণ হয়েছে নির্দ্বিধায় বলা যায়। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটি অস্ট্রেলিয়া জয় করে সিরিজ শেষ ১-১ সমতায়।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২১-২৩ পর্বে শ্রীলংকা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো মূল্যবান ১২ পয়েন্ট অর্জন করে। কিছু আগেই এই দলটি বাংলাদেশে বাংলাদেশকে ধবল ধোলাই করে গেছে।

প্রথম টেস্টে সহজ জয়ের পর গলে সহজে জিতে সিরিজ জিতবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোদ্ধাদের এমনি ধারণা ছিল। টস জয় করে ব্যাটিং বেঁচে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ছিল হিসাব নিকাশে। বোদ্ধারা অনুমান করেছিল এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা কঠিন হবে। শ্রীলংকা আনকোরা নবীন বাহাঁতি স্পিনার প্রভাত জয়াসুরিয়াকে দলে নিয়েছিল মূল দলের কয়েকজন ম্যাচ ফিট না থাকায়। সেই আনকোরা নবীন দুই ইনিংসে ( ৬/১১৮ এবং ৬/৫৯) ১২/১৭৭ নিয়ে একই ধসিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলকে। প্রথম দিনশেষে ২৯৮/৫ শেষ করা অস্ট্রেলিয়া বিশাল প্রথম ইনিংসের ভিত্তি রচনা করেছিল। শুরুতে ওয়ার্নার (৫) এবং খাজা (৩৭) রানে ফিরে গেলে লাবুশেন এবং স্মিথ ১৩৪ রানের জুটি গড়েছিল।

লেবুশেন (১০৪)  উপমহাদেশের উইকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করলো। বহুদিন পর স্মিথের ব্যাট আবারো হাসলো। উইকেটে কিন্তু এমং কোনো অভ্যাস ছিল না যে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য দুর্ভেদ্য হবে। দ্বিতীয় দিন কিন্তু পরিবর্তিত মানসিকতা নিয়ে শ্রীলংকা ৬৬ রানে শেষ পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের স্কোর ৩৬৪ সীমিত করে কাজের কাজটি করে ফেলে।

শঙ্কা ছিল স্টার্ক ,কামিন্স , লায়ন,সুইপসনদের সাঁড়াশি আক্রমণে কেমন খেলবে শ্রীলংকা। ওই দিন কিন্তু দেশ জুড়ে এমনকি গল স্টেডিয়ামের বাইরেও তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু জনতা ক্রিকেট খেলায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করে নি। সবাই দায়িত্ব দিয়ে ব্যাটিং করে দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলংকার স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১৮৪/২।  নিশাঙ্কা শুরুতে আউট হলেও করুনারত্নে আর কুশল মেন্ডিজের (৮৪)  যোগাযোগে দ্বিতীয় উইকেটে রান উঠেছিল ১৫২। দলের শক্ত ভীত রচিত হয়েছিল। তৃতীয় দিন সকালে করুনারত্নে (৮৬)  ফিরে গেলেও হাল ধরলো ম্যাথুজ (৫২)  আর দীনেশ চান্দিমাল। ম্যাথিউস আউট হবার পর চান্দিমালের সঙ্গী হলো মেন্ডিজ। এই জুটির লড়াকু ১৩৩ রান শ্রীলংকাকে নিয়ে গেলো অস্ট্রেলিযার স্কোর অতিক্রম করে স্বস্তির অবস্থানে। বিশেষ করে চান্দিমালের ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ২০৬ জয়ের ভীত গড়ে দিলো। ৫৫৪ রানে শেষ হয় স্বাগতিক দল ১৯০ রানের বিশাল ব্যাবধানে এগিয়ে থাকাতে অনেকেই ঈশান কোন মেঘ দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার। 

১৮১ ওভারের ম্যারাথন শ্রীলংকা ইনিংসে লায়ন একাই করে ৬৪ ওভার। বিশ্বসেরা এই অফ স্পিনার যে উইকেটে সুবিধা পেলো না সেখানেই আনকোরা নবীন জয়াসুরিয়া অভিষেক টেস্টের  দ্বিতীয় ইনিংসে আবারো মুর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হলো। মাত্র ৪১ ওভারে ১৫১ রানেই গুটিয়ে গেলো ক্যাঙ্গারু বাহিনী। ৬/৫৯ উইকেট তুলে নিলো জয়াসুরিয়া।  বিশ্ব ক্রিকেট অবাক বিস্ময়ে দেখলো মুরালিধরন , হেরাথের দেশে আরো এক জয়াসুরিয়ার স্বর্ণালী অভিষেক।

সাবাশ শ্রীলংকা ক্রিকেট দল।  দেশ যখন প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে , সরকার যখন টলায়মান তখন এই জয় দেশবাসীকে অনেক আনন্দ স্বস্তি  দিবে সন্দেহ নেই। 


শেয়ার করুন