২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
কথার কথকতা


লেখালেখি করা কি আসলেই খুব সহজ? আমার কাছে বিষয়টি কখনোই সহজ মনে হয়নি। সাহিত্য এবং বিশেষ করে কবিতা লেখা আরো কঠিন, একেবারে অস্থিমজ্জা এবং অস্তিত্ব নিয়ে টান দেয়। যার জন্য লেখালেখির ব্যাপারে মুরুব্বিরা কখনো সায় দেন না, ওনারা চান না তাঁদের সন্তানেরা লেখালেখি করুক। ভাবটা যেন এরকম যে, ‘লেখা’ যতো খুশি লেখো, পড়াশোনার অংশ হিসেবে যতো খুশি করো আর বলো ‘আমি লেখি’, কিন্তু কখনো বলো না, ‘আমি লেখালেখি করি’। আমাদের বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত লক্ষ করুন, দেখা যাবে, লেখালেখি করাটাকে কখনোই কেউ সহযোগিতার মনোভাবে দেখেনি, লেখালেখি এসেছে সাহিত্যিকের অস্তিত্ব নিংড়ানো নির্যাস হিসেবে। পরীক্ষার পড়া পড়ে এরপর চালিয়ে যাও ‘লেখা’ আর বুক ফুলিয়ে বলো, ‘আমি লেখি’, কিন্তু ‘কভু করো না লেখালেখি’Ñএটাই ছিলো অলিখিত চিরন্তন বাণী এবং আদেশ, তারপরও চলছে ‘লেখালেখি’! এটা চলতে থাকবে।

দেখাদেখির ব্যাপারটাও প্রায় একই রকম। পিতা ওনার আদরের পুত্রে পড়ালেখার অগ্রগতি পরীক্ষা করার সময় যখন সন্তান বলে, এই অধ্যায় আমার ‘দেখা’ আছে, তখন পিতা খুব খুশি হন। আবার পিতা যখন চলার পথে পাশের রুম থেকে প্রশ্ন করেন, ‘কি করছো’ আর পুত্র পড়ার টেবিল থেকে উত্তর দেয়, ভূগোলের পড়াটা ‘দেখি’, তখনো পিতা খুবই আনন্দিত। তবে এটা সবাই জানে যে, সন্তান ‘দেখাদেখি’ করে সময় কাটাক এটা কোনো গার্জিয়ানই চান না। শুধু বই ‘দেখা’ আর আমি পড়া ‘দেখি’, কিন্তু নহে কোনো ‘দেখাদেখি’! তবে মানুষের দেখাদেখি সেই যে বেহেশতে হয়েছিলো শুরু, এখনো চলছে তা মানব সমাজে। এই ‘দেখাদেখি’ কি আর বন্ধ করা যায়!

অনেকে বলে লেখার বিষয়বস্তু নাকি খুঁজে পাওয়া যায় না আর আমি বলি, বিষয়বস্তু এতো বেশি যে, সঠিকভাবে চিত্রায়িত করাটাই বরং কঠিন হয়ে পড়ে। যিনি যতো বেশি জ্ঞানী তাঁর কাছে ‘লেখালেখি’ ততো বেশি কঠিন এবং ‘দেখাদেখি’ আরো বেশি কঠিন। কারণ এরই মধ্যে এসবের অন্তর্নিহিত রহস্য অনেকটাই বিজ্ঞ মানুষটার কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। তিনি জানেন ‘লেখালেখি’ আর ‘দেখাদেখি’ কাকে বলে!

চোখাচোখির ব্যাপারটা তো আরো জটিল। মানব জাতির প্রথম প্রেমিক ও প্রেমিকাকে তৈরির পরই ‘চোখাচোখি’ হতে নিষেধ করা হয়েছিলো, কিন্তু অবস্থাটা হলো, কেমনে না হই চোখাচোখি’! পারে না, চোখাচোখি না হয়ে কেউ থাকতেই পারে না আর তখনই শুরু হয় মঙ্গল ও অমঙ্গলের লীলাখেলা। মানব জীবন তখন হয়ে ওঠে মধুময় এবং বিস্ময়করভাবে বিষময়ও বটে। মধুময় সময়টা তেতো করে তোলার জন্য সেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইবলিশটা তো তার চেলাচামুন্ডা নিয়ে ঘুরেই বেড়াচ্ছে বিশ্বময়। এসব কাহিনি আপনাদের সবারই জানা আছে, তবে জীবন-সংগ্রামে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লে কেউ কেউ মাঝেমাঝে এসব ভুলে যায়। তাই আমার মতো ‘তথাকথিত লেখকরা’ মাঝেমাঝে এগুলো মনে করিয়ে দেয় আর এর ফলে কেউ কেউ সম্বিত ফিরে পায় আর কেউ কেউ বিরক্তও হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, এ বিষয়টি মনে থাকা বা মনে হওয়া খুবই উপকারী। খেয়াল রাখবেন, ‘চোখাচোখি’ হবার সুখকর অধ্যায়গুলোর কোনো এক স্তরেই ঢুকে পড়ে ‘রোখারোখি’ পর্ব!

প্রিয় পাঠক, আমরা এ কলামে তেমন ভারী কিছু নিয়ে না লেখার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই জন্য যে, ওই রকম লেখা পাঠক পড়তে চায় না। এরই মধ্যে কেউ বলে বসতে পারেন যে, পাঠিকাদেরকে সম্বোধন করা হলো না কেন! আসলে পাঠক বলতে ইংরেজিতে ‘রিডার’ বলা হয়, ‘লেডি রিডার’ বলে কোনো টার্ম আমার নজরে পড়েনি। তাছাড়া আমাকে কে যেন বলেছিলো, আমাদের দেশে সরকারি মহিলা কর্মকর্তাবৃন্দকেও নাকি ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে হয়। তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই। পাঠক বললেই সবাইকে বোঝাবে নিশ্চয়।

ইংরেজি ‘ইউ’ শব্দের জন্য আমাদের তিনটি শব্দ আছে, সেগুলো হলো- আপনারা জানেনÑ আপনি, তুমি ও তুই। এই তিন শব্দ প্রয়োগ করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়স-বায়োডাটা অধ্যয়ন করতে হবে, যেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা এক্ষেত্রে তিন শব্দের স্থলে এক শব্দ ব্যবহার করতে পারবো কিনা জানি না। তবে ‘পাঠক’ শব্দ দিয়ে সবাইকে বোঝানোর একটা সুযোগ আছে। তাছাড়া আমরা চেষ্টা করবো, সম্ভাব্য জটিলতাগুলো এড়িয়ে যেতে। কারণ আজকের ‘লেখালেখি’, ‘দেখাদেখি’ এবং ‘চোখাচোখি’ পর্বগুলোর পরে একটা ‘রোখারোখি’ পর্বের উল্লেখ করা আছে। এই সংযুক্ত শব্দ অর্থাৎ কম্পাউন্ড ওয়ার্ডটি উচ্চারণ করলেই একটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে যে, দু’জন মানুষ একজন আরেকজনের দিকে রোষান্বিত হয়ে গালাগালি করতে করতে এগোচ্ছে আর পিছোচ্ছেÑ লড়াই শুরুর গর্জন চলছে আর কি! আমরা চাই না লড়াইটা লেগে যাক। শয়তান চাইবে, যুদ্ধটা লেগে যাক আর আমরা চাই, ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি’! সুতরাং, প্রিয় পাঠক, নো রোখারোখি, অনলি শান্তি! সবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পরিসরে লেখালেখি, দেখাদেখি ও চোখাচোখি চালিয়ে যাবো, বিসর্জন দেবো রোখারোখির পর্বটি। সবার জন্য রইলো শুভেচ্ছা!


শেয়ার করুন