২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৬:১৯ অপরাহ্ন


চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন : প্রতিপক্ষের মামলা ১০ জনের বিরুদ্ধে
আদালতের রায় পেয়েও বৈশাখীমেলা স্থগিত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২২
আদালতের রায় পেয়েও বৈশাখীমেলা স্থগিত সংবাদ সম্মেলনে চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ


প্রবাসের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইনক। গত নির্বাচনকে কেন্দ্র মূলত এই সংগঠনের নেতৃত্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি অংশ নিজেদের মতো করে সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচন করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপর একটি অংশ গঠনতন্ত্র মেনে বিশেষ সাধারণ সভা করে নির্বাচন কমিশন করে কমিটি গঠন করে। এই অংশটি হচ্ছে মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি। তারা সব সময়ই  সৌহার্দ্য সম্প্রীতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তাদের দাবি একটিই সংগঠনের স্বচ্ছ হিসাব এবং সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন হাবিব-বিল্লাহ। তাদের দখলেই রয়েছে চিটাগাং ভবন। মুনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি কোনোভাবেই বিরোধে জড়াতে চায় না। তারা চায় সমঝোতা এবং আইনি সমাধান। হাবিব-মুক্তাদির নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছেই সংগঠনের ভবন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিরোধে না গিয়ে নিজেদের মতো করেই সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে। তারা চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৈশাখীমেলার আয়োজন করেছিলেন। মেলাটি হবার কথা ছিলো বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রæকলিনের চিটাগাং ভাবনের সামনেই। আর তাতে বাধ সাধে হাবিব-মুক্তাদির নেতৃত্বাধীন কমিটি। তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়। চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে বৈশাখীমেলা করা যাবে না- এই মর্মে আদালতে বৈশাখীমেলা স্থগিতের আবেদন করেন। কিন্তু মাননীয় আদালত তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। আদালতের রায় পেয়েও ২২ মে বৈশাখীমেলা স্থগিত ঘোষণা করেন মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি। কারণ হিসেবে জানানো হয় মেলার প্রস্তুতির অভাব রয়েছে।

গত ২২ মে সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি মনির আহমেদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বিস্তারিত তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেলার আহ্বায়ক আবু তাহের, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুকসুদুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাসান চৌধুরী।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবু তালেব চৌধুরী, ইকবাল হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ২২ মে আমরা মেলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হাবিব-মোক্তাদির গংরা মামলা দায়ের করে। তারা মামলায় মেলা বন্ধের আবেদন জানায় এবং চিটাগাং সমিতির নাম ব্যবহার না করার আবেদন করে। মাননীয় আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। তিনি বলেন, আমরা বৈধ বলেই মাননীয় আদালত আমাদের পক্ষ রায় দেয়। তিনি বলেন, চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু সেই কমিশন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। এমন কি সদস্য পদ নেয়ার জন্যও সংগঠনের ভবনে একদিনের জন্যও আসেননি। যে কারণে অনেকেই ভোটার হতে পারেননি। এই অবস্থায় চিটাগাংবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ সদস্যের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করি। সেই সভায় হাসান চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। বিশেষ সাধারণ সভায় বাতিলকৃত নির্বাচন কমিশন আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করে। তারাই এখন জবরদখল করে রেখেছে চিটাগাং ভবন। তিনি বলেন, আমরা পেশিশক্তিতে বিশ্বাস করি না, আইনে বিশ্বাস করি। যে কারণে স্বচ্ছ হিসাব চেয়ে আমরা মামলা করি। সেই মামলা এখনো চলমান। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, গত ৬ বছর তারা চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের কোনো হিসাব দেয়নি। মোট কথা, আজম-বাদল কমিটির পর কোনো কমিটিই হিসাব দেয়নি। সাবেক সভাপতি কাজী আজমের কমিটিই এই ভবনকে ঋত মুক্ত করে এবং ফান্ডে অর্থ দিয়ে যায়। অথচ সেই কাজী আজমের ব্যক্তিগত চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলার কাগজে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের অনেক নজির আছে। তিনি আরো বলেন, মরহুম জিয়ার নেতৃত্বাধীন কমিটিতে আমি ৯ মাস দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকতে পারিনি। আমি যখন আসি তখন ৪৮ হাজার ডলার সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখে আসি। এখনকার কোনো কোনো কর্মকর্তা সংগঠনের অর্থ সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে না রেখে বাসার ব্রিফকেসে রাখেন। এমন নজির আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে আমরা নাকি চাঁদাবাজি করছি। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই আমরা চাঁদাবাজি করছি না। আমরা কারো নাম বদনাম করতে চাই না। আমরা এখনো সমঝোতা চাই। আসুন, নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিন। যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় আমরা বসতে রাজি।

মাকসুদুল হক চৌধুরী বলেন, এই করোনার সময় তাদের কী ভ‚মিকা ছিলো? তিনি বলেন, যে কেউ মামলা করতে পাওে, কিন্তু কারো চরিত্র হনন করার অধিকার কারো নেই। মামলার কাগজে চরিত্র হননের বিষয়ে তিনি তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এই সংগঠন একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, এই সংগঠনকে আমরা ভালবাসি। আমি ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনার ছিলাম। ওই গোষ্ঠী নমিনেশনও জমা দেয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন মামলা করে। মাননীয় আদালত তা খারিজ করে দেয়। তারপরে তারা হেরে যাবার ভয়ে একদিন আগে নির্বাচন বয়কট করে। বর্তমানে যারা ওই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই কমিটি অসাংবিধানিক। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের ঘোষণা ৬০ দিন আগে দিতে হয়। তারা ২০ মে নির্বাচনের কথা বলে ২৯ মে নির্বাচন করে। তারা স্বঘোষিত জবরদখলকারী কমিটি। তিনি বলেন, কাজী আজমের নেতৃত্বাধীন কমিটি সাড়ে ৫ লাখ ডলার ঋত পরিশোধ করে। বর্তমানে ছয় ফ্যামিলির ভবন এটি। ১ লাখ ডলারের ওপরের ইনকাম। অথচ কোনো হিসাব নেই। আমরা ২০১৩ সালের পর থেকে হিসাব চাই। উল্টো এখন আমাদের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার ইনডেক্স নং ৫১৪৫৮১/২০২২, তারিখ ০৫/১৮/২০২২. অথচ এই মামলার কোনো কপি বা নোটিশ আমাদের জানানো হয়নি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের আইজীবীর মাধ্যমে জানার পরপরই আদালতের শরণাপন্ন হই এবং আইনগতভাবে বাদীদ্বয়ের মামলা মোকাবিলা করি। এই প্রেেিত মাননীয় আদালত ২০ মে মেলা আয়োজনের পে রায় দেন। ফলে ‘চট্টলা বৈশাখী পথমেলা’ আয়োজন ও সংগঠনের লোগো ব্যবহার নিয়ে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের সময় চলে যাওয়ায় এবং প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমরা আপাতত মেলাটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে অচিরেই মেলার নতুন দিন তারিখ ঠিক করে জানানো হবে এবং ব্যাপক ও বিশাল আকারে ‘চট্টলা বৈশাখী পথমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে।

আবু তাহের বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে আমি এই সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করি। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮৯ সালে। এই সংগঠন করা হয় মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য। কাউকে ছোট বা কারো চরিত্র হননের জন্য নয়। তিনি আরো বলেন, মনির আহমেদ যখন সাধারণ সম্পাদক তখন তিনি এই ভবন ক্রয় করেছিলেন। ভবনটি তখন একজনের নামে ক্রয় করা হয়। যার নামে ক্রয় করা হয় তিনি এটি রেখে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এই মনির আহমদ ৫ বছর ধরে কোর্টে ঘুরে ঘুরে এই ভবন উদ্ধার করেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আজকে আমাদের নামে বদনাম করা হচ্ছে। অথচ মুক্তাদির বিল্লাহ নিজের নামে নিজে সই করে চেক নিয়েছেন। কমিটির অনুমোদন পর্যন্ত নেননি। তিনি বলেন, আমি যখন কোষাধ্যক্ষ ছিলাম তখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আমাকে না জানিয়ে আমার নাম সরানো হয়। বারবার পরিবর্তন করা হয় সংগঠন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং স্বচ্ছ হিসাব চাই।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, ‘হাবিব-বিল্লাহ’ গংরা আমাদের সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অক্রমণ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং চরিত্র হনন করছেন, যা কাম্য নয়। আমরা সংগঠনকে ভালোবাসি। সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনকে শক্তিশালী করতে চাই। কিন্তু কোনো মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে চাই না। কিন্তু আমাদের কোনো মানহানি ঘটলে আমরা প্রয়োজনে আইগত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।

মনির আহমদ বলেন, সমঝোতায় আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তবে শর্ত দিয়ে কোনো সমঝোতা হবে না। তিনি মানুষের চরিত্রহনন বন্ধের আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, ‘হাবিব-বিল্লাহ’ গংরা আমাদের সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অক্রমণ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং চরিত্রহনন করছেন, যা কাম্য নয়। আমরা সংগঠনকে ভালোবাসি। সবাইকে নিয়ে চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনকে শক্তিশালী করতে চাই। তবে আমাদের কারো মানহানি ঘটলে আমরা প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আহসান হাবিব ও মোহাম্মদ বিল্লাহ দায়েরকৃত মামলার বাদীরা হলেন- মনির আহমেদ, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ আবু তাহের, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, মীরকাদের রাসেল, মাকসুদুল হক চৌধুরী, কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, মোর্শেদ আর চৌধুরী, হাসান চৌধুরী এবং আবু তালেব চৌধুরী চান্দু।

শেয়ার করুন